ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অবকাঠামোগত বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ৮ আগস্ট ২০১৭

অবকাঠামোগত বিনিয়োগ

নতুন অর্থবছরের শুরুতে আমরা সুসংবাদ পেলাম। দেশের সাতটি উন্নয়ন প্রকল্পে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ১০০ কোটি ডলার বা ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে তিনটি বিদ্যুত খাতের, তিনটি রেলওয়ের এবং একটি সড়কের। বলাবাহুল্য এ তিনটি ক্ষেত্রেই উন্নয়নের প্রভূত সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। এসব প্রকল্প যাচাই-বাছাই শেষে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে ব্যাংকটি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট ডি জে পান্ডিয়ানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের পর অর্থমন্ত্রী সংবাদকর্মীদের এসব তথ্য জানান। এআইআইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট যথার্থ মূল্যায়ন করে বলেছেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ক্রমাগত জনসম্পদে পরিণত হচ্ছে। দেশটির অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ বিরাজ করছে। তার পর্যবেক্ষণ সঠিকÑ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেশ ভাল। ১০ বছরেরও বেশি সময় ৬-৭ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ্য, এআইআইবির প্রথম প্রকল্পটি ছিল বাংলাদেশের। এ থেকেই বোঝা যায় এআইআইবির কাছে বাংলাদেশ কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা তার এই বক্তব্য বিভিন্ন উন্নত দেশের সরকার প্রধান এবং বেসরকারী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ অনুধাবনে সক্ষম হবেন এবং আগামীতে বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগ আসবে। প্রসঙ্গত, চীনের নেতৃত্বাধীন এআইআইবির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের জানুয়ারিতে। ‘সাশ্রয়ী দাম, উৎকৃষ্ট মান’Ñ বিনিয়োগে এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে এআইআইবি গঠন করা হয় মূলত অবকাঠামো খাতে ঋণ দেয়ার প্রয়োজনে। ব্যাংকটির ১০ হাজার কোটি ডলারের পরিশোধিত মূলধনের এক-তৃতীয়াংশই চীনের। বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এর আগে গত বছর বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ অনুমোদন করে এআইআইবি পর্ষদ। এটা ছিল সংস্থাটির পর্ষদে প্রথম কোন ঋণ অনুমোদন। ওই ঋণের অর্থ বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ব্যবহার করা হচ্ছে। এআইআইবিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বিকল্প মনে করা হচ্ছে। তারা উন্নত দেশ মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান দ্বারা প্রভাবিতÑ এমন কথাও প্রচারিত রয়েছে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে বৃহত্তর প্রভাব ও মন্থর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় চীন এক সময় হতাশাও প্রকাশ করেছিল। ২০১৪ সালের জুন মাসে চীন ব্যাংকটির মূলধন ৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধির প্রস্তাব করে এবং ভারতকে যোগদানের আহ্বান জানায়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবকাঠামো খাতে এত বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন যেটি কোন একক অর্থনৈতিক সংস্থার পক্ষে মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের আইডা থেকে বছরে ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো ঋণ দেয়া হয়, যা ১৮০টি দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতেই বাংলাদেশের শুধু অবকাঠামো খাতে (বিদ্যুত, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, স্যানিটেশন ইত্যাদি) বিনিয়োগ প্রয়োজন বছরে ৭ থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্য খাতগুলো বাদ দিয়েই এই হিসাব। এক্ষেত্রে শুধু বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইডিবিই নয়, এর বাইরে আরও একটি সম্ভাবনাময় অর্থদাতা এআইআইবি বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
×