ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-মিয়ানমার ইয়াবা বৈঠক

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ৮ আগস্ট ২০১৭

বাংলাদেশ-মিয়ানমার ইয়াবা বৈঠক

সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নানামুখী তৎপরতা সত্ত্বেও ইয়াবার ভয়ঙ্কর আগ্রাসন থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। মিয়ানমার থেকে নৌপথে চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভূখ-ে ইয়াবার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে রাতের বেলা মাছ শিকার বন্ধ করা হয়েছে। এতে চোরাচালান সামান্য হ্রাস পেলেও থেমে নেই মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। নানা কৌশলে, নানা পথে ইয়াবা ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে, যেটি তরুণ প্রজন্মের অন্যতম আসক্তি ও উচ্ছন্নে যাওয়ার প্রধান কারণ। এই প্রেক্ষাপটে ইয়াবার আগ্রাসন ঠেকাতে ইয়াঙ্গুনে ২০-২১ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাদক নিয়ন্ত্রণে মিয়ানমারের সর্বোচ্চ সংস্থা সিসিডিএসসির সঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ওই দ্বিতীয় বৈঠক থেকে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ইয়াবাসহ মাদক নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রাখার আইনী প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক ইয়াবা ট্যাবলেট এবং এর কাঁচামাল প্রবেশ করে থাকে কক্সবাজার জেলার মাধ্যমে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তপথে। পার্বত্য অঞ্চল দিয়েও ইয়াবার অনুপ্রবেশ বিচিত্র নয়। সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে প্রায় প্রতিদিন তা ধরা পড়ে বিপুল পরিমাণে। বাস্তবতা হলো, সীমান্তে কঠোর তৎপরতা এবং গোয়েন্দা নজরদারির পরও এর প্রায় অবাধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে সঙ্গত কারণেই ধারণা করা যায় যে, এর পেছনে শক্তিশালী স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটসহ বিত্তশালী ব্যক্তিদের হাত রয়েছে। ইয়াবা পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবারের সম্পৃক্ততার অভিযোগে জেল-জরিমানার খবরও আছে। দুঃখজনক হলো এরপরও ইয়াবার ছোবল তথা প্রায় অপ্রতিহত অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। সে অবস্থায় এলাকার জনগণ যদি সততা ও সদিচ্ছার মনোভাব নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে প্রতিরোধে, তাহলে সীমান্তপথে ইয়াবার চোরাচালান ঠেকানো অবশ্যই সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অনেকটা এরই প্রতিফলন ঘটেছে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে সেখান থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটা যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততা থাকা বিচিত্র নয়। বাংলাদেশ নিতান্ত মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলেও দেখা যাচ্ছে যে, তাদের অনেকেই স্থানীয়ভাবে নানা অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-, এমনকি ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক পাচারের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। একদা তরুণ সমাজ বিপুলভাবে জড়িয়ে পড়েছিল ফেনসিডিল আসক্তিতে। পরে দেশে এই পণ্যটি নিষিদ্ধ করেও সুফল মেলেনি তেমন। বরং বাংলাদেশ পরিবেষ্টিত ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন অনেক স্থানে রাতারাতি গজিয়ে উঠেছিল ফেনসিডিল কারখানা। দু’দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর ফেনসিডিলের বিস্তার ও আসক্তি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো এর পরিবর্তে বিপুল বিক্রমে থাবা বসিয়েছে ভয়াবহ মাদক ইয়াবা। গণমাধাম্যের বিপুল প্রচার-প্রচারণা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পরও এর বিরুদ্ধে তেমন প্রতিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ২০০৭ সালে ধৃত এবং দুটি মামলায় মোট ৭৯ বছরের সশ্রম কারাদ-প্রাপ্ত আমিন হুদা নামের এক ইয়াবা ও ফেনসিডিল ব্যবসায়ী রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে দীর্ঘ ২ বছর ধরে। এ ঘটনা থেকেই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের দোর্দ- প্রতাপ-প্রতিপত্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা মেলে। সুতরাং ইয়াবা, ফেনডিসিলসহ সর্বাত্মক মাদক প্রতিরোধে সরকারকে আরও তৎপর এবং কঠোর হতে হবে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির মতো প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ফিলিপিন্সে দুতার্তে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বর্তমানে যা করছে, তা একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে।
×