ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসুন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৭ আগস্ট ২০১৭

কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসুন

কমফোর্ট জোন কী? আরামে থাকা খাওয়ার জায়গা? শান্তির জায়গা? কমফোর্ট জোন বলতে যা বোঝানো হয় তার সত্যিকার অর্থ এর অনেকটাই কাছাকাছি। কমফোর্ট জোন মূলত একটি আচরণগত অবস্থা, যেখানকার পরিবেশ আমাদের পরিচিত। নির্দিষ্ট একটা গণ্ডি, যেখানে কাজ করতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি এবং ফল অনেকটাই নিশ্চিত। আমাদের কাজও আমাদের জানা, ফলও জানা। লিখেছেন- টুটুল মাহফুজ হাতেগোনা কিছু মানুষ ছাড়া কমফোর্ট জোনে থাকতে ভালবাসি আমরা সবাই-ই। কারণ আমরা যখন কমফোর্ট জোন ছেড়ে বাইরে যাই সেটা আমাদের জন্য কঠিন । আমাদের ওপর চাপ বেড়ে যায়। ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। এমন একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতি আসে যে আমরা জানি না আদৌ কী ঘটবে আর আমরা কী করব। মজার ব্যাপার হলো এই অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির সঙ্গে আসে সুযোগ আর প্রাপ্তি, যা থেকে এতদিন আমরা বঞ্চিত ছিলাম। বাস্তব জীবনের অবারিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায় চোখের সামনে। আপাতদৃষ্টিতে চাপ, অনিশ্চয়তা আর ঝুঁকি শব্দগুলো নেতিবাচক শোনালেও এর রয়েছে বিশাল ইতিবাচক দিক। কোনদিন কি ভেবেছেন আপনার রুটিনমাফিক সুনিশ্চিত জগতের বাইরেও আরেকটি অপার সম্ভাবনাময় জগত আছে? শুধু অনিশ্চয়তা, চাপ আর ঝুঁকির ভয়ে আপনি সেই সুযোগ হারাচ্ছেন। সবার সামনে বলা কিছু কথা হয়ত আপনাকে এনে দেবে দারুণ এক পরিচিতি, কিন্তু লোকে কী বলবে ভেবে আপনি কথাই বললেন না! নতুন একটা ভাষা শিখবেন বলে ভেবেছেন, কিন্তু ওখানে সময় দিলে যদি পরীক্ষার ফল খারাপ হয় সেই ভয়ে ভাষাটা আর শিখলেনই না। হয়ত ভাবলেন যোগব্যায়াম শুরু করবেন, কিন্তু সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠার ভয়ে আর সেটা শুরু করাই হলো না। এতে করে আসলে কী হলো? আপনি হয়ত আপনার স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করতে পারছেন, কিন্তু এই সামান্য কিছু পদক্ষেপ আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারতো অনেকখানিই। আপনার উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দিত বহুগুণে। একটু ভেবে দেখুন। শুধু কমফোর্ট জোনে থাকতে ভালবাসেন বলে জীবনের কত সুযোগ আপনি হারিয়েছেন। কমফোর্ট জোন সীমিত করছে আপনার সুযোগ। আসুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু উপায় যা আপনাকে আপনার কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে। আত্মবিশ্বাসী হোন নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন যে, আপনি পারবেন। নিজের সামর্থ্য আর আশার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসই আপনাকে কমফোর্ট জোনের দেয়াল ভেঙ্গে বেরোতে সাহায্য করবে। পুরনো কোন কাজ করুন নতুনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার নিত্যদিনকার রাস্তাটি ছেড়ে একদিন নতুন একটা রাস্তা দিয়ে যান যেদিক দিয়ে আপনি সচরাচর যান না। ক্লাসের যে সহপাঠীর সঙ্গে কোনদিনও কথা হয়নি, তার সঙ্গে গিয়ে কথা বলুন। যে ঘরটা প্রতিদিন মা গুছিয়ে দেন, সেটা আজ নিজেই গোছান। এতে করে আপনি নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখবেন। কঠিন অপশনটি বেছে নিন আমরা সবসময় নিজের জন্য সহজ অপশনটিই বেছে নিই। এতে নতুন কোন পরিস্থিতির মোকাবেলা আমাদের করতে হয় না। এ অভ্যাসটি পরিত্যাগ করুন। তুলনামূলক কঠিন আর অপরিচিত অপশনটি বাছাই করুন। সত্যি বলছি, আপনি যদি ব্যর্থও হন, তবুও নতুন কিছু শিখতে পারবেন। নতুন একটি অভিজ্ঞতা হবে। নিজেকে নিজেই চ্যালেঞ্জ করুন দুর্বল দিকগুলো কাটিয়ে উঠতে নিজেকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিন। হোক না খুব ছোট কিছু। যে কাজগুলো করতে আপনি ভয় পান। একটু একটু করে সেগুলো করতে শুরু করুন। যেমন ঠিক করুন অপরিচিত কোন মানুষের সঙ্গে আগে গিয়ে কথা বলবেন। কিংবা ভিন্নভাষী কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতেও পারেন। দামাদামী করার অভ্যাস না থাকলে একদিন দোকানদারের সঙ্গে দামাদামী করতে পারেন। একদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুরু করে দিন যোগব্যায়াম। এভাবে আপনি নিজেকে কমফোর্ট জোন থেকে বের করে আনতে পারবেন। সেটাই করুন যা করতে আপনি ভয় পান প্রবল ইচ্ছা আর আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও শুধু অহেতুক ভয়ের কারণে অনেক কাজ থেকে আমরা পিছিয়ে থাকি। এই অভ্যাস ত্যাগ করুন। যে কাজ করতে আপনার ভয় লাগে সেই কাজই করুন বেশি বেশি। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসার জন্য স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ হতে পারে দারুণ একটি সহায়ক মাধ্যম। এ থেকে যেমন আপনি নতুন নতুন দক্ষতা শিখবেন, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হবেন, তেমনি দেশ ও সমাজের উন্নয়নেরও অংশীদার হতে পারবেন। মানুষের জন্য কাজ করতে পারা আপনাকে কৃতজ্ঞতাবোধ আর আত্মতৃপ্তির উপলব্ধি দেবে।
×