ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ ১৬ ডিসেম্বর উৎক্ষেপণ

এবার মহাকাশ জয়ের অপেক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৭ আগস্ট ২০১৭

এবার মহাকাশ জয়ের  অপেক্ষা

ফিরোজ মান্না, টাঙ্গাইল থেকে ফিরে ॥ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ। গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণকাজও শতকরা ৮৮ ভাগ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। এই স্যাটেলাইট চালু হলে টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। এতে ব্রডকাস্টিং থেকে শুরু করে টেলিযোগাযোগের সব সেক্টরেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তখন আর বিদেশী স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। অন্যদিকে স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত তরঙ্গ ভাড়া দিয়ে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব হবে। শনিবার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউলি ও আতিয়া ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র পরিদর্শনকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ কথা বলেন। এক দিনে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে তিনি প্রেসক্লাবের আইটি রুম পরিদর্শন করেন। তারানা হালিম বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগসহ অন্যান্য সেক্টর উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাবে। স্যাটেলাইটের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এ জন্য সরকার প্রকল্পটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর কার্যক্রম শুরু হলে আশপাশের বেশ কয়েকটি দেশ টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা দেয়ার জন্য জিয়োসিক্রোনাস স্যাটেলাইট সিস্টেমের (৪০ ট্যান্সপন্ডার, ২৬ কেইউ ব্যান্ড, ১৪ সি ব্যান্ড) গ্রাউন্ড সিস্টেমসহ সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। গাজীপুরের টেলিযোগাযোগে স্টাফ কলেজের পাশেই ৪০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন। বর্তমানে হংকং ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্যাটেলাইটগুলো প্রতিবছর ১২ কোটি টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। এই ভাড়া থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাবে। বরং নিজস্ব স্যাটেলাইট দিয়ে অনেক বেশি টাকা আয় করা সম্ভব হবে। চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে আমেরিকার আবহাওয়া এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে ডিসেম্বরে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে, কি হবে না। আমেরিকার ফ্লোরিডায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণকাজ ৮৮ ভাগ শেষ হয়েছে। সেখানে যদি আবহাওয়াজনিত কোন সমস্যা না হয় তাহলে, নির্ধারিত দিনে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের জন্য আমরা শতভাগ প্রস্তুত রয়েছি। এই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের কাজ ৮৮ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ নবেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। গ্রাউন্ড স্টেশনের যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোগত কাজ ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। জেনারেটর ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ প্রায় এক শ’ ভাগ হয়েছে। ১০ টন ওজনের এ্যান্টিনা স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। দুটি এ্যান্টিনা স্থাপন করা হয়েছে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রুমের কাজও শেষ। চলছে এনওসিসি (নেটওয়ার্কং ব্রডকাস্টিং রুমের কাজ) আগামী অক্টোবরেই গ্রাউন্ড স্টেশনের কাজ সম্পন্ন হবে। এ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের আগে নবেম্বরে পরীক্ষামূলক কাজ করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পর আগামী এপ্রিল হতে আনুষ্ঠানিকভাবে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে। এ জন্য রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে স্যাটেলাইট কোম্পানি। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ব্রডকাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতা কমানো এবং দুর্গম এলাকায় সেবা বিস্তারের জন্য সরকার মহাকাশের কক্ষপথে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। স্যাটেলাইটটি চালু হলে দেশে তথ্য যোগাযোগ, ই-লার্নিং, ই-ফার্মিং, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নতি হবে। আমরা এখন মহাকাশ জয় করার অপেক্ষায় আছি। মহাকাশে বাংলাদেশ থাকবে এটা একটা অন্যরকম বিজয়। মহাকাশের স্যাটেলাইটটি ১১৯ ডিগ্রীতে স্থাপন করা হবে। তবে ৩৬ হাজার কিলোমিটার ওপর দিয়ে স্যাটেলাইটটি পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে। ১০৪ ডিগ্রী নর্থ ইস্ট দিয়ে স্যাটেলাইটটি ঘুরবে। এ বছরই আমরা মোবাইল নম্বর পোর্টেবেলিটি (এমএনপি) ও ফোর জি চালু করব। জনগণ যাতে উন্নত সেবা পান তা নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছি। টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সেবক হিসেবে ক্ষমতায় এসেছে। এ সময়ে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ হচ্ছে। বিকেলে টাঙ্গাইলে প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে প্রেসক্লাবের আয়োজনে টাঙ্গাইলের সন্তান ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারানা হালিম। গত বছরের চেয়ে এবার ডাক বিভাগ ৭০ কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আদায় করেছে। মোবাইল ফোর জি এ বছর চালু করা হবে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সফল রাষ্ট্রনায়ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতিমুক্ত সরকার। দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। কলমের শক্তি অনেক বেশি, কলম একটি হাতিয়ার। সাংবাদিকতা পেশা একটি পবিত্র পেশা। এ পেশা ধরে রাখার জন্য সকলের দায়িত্ব রয়েছে। অপসাংবাদিকতার দিকে আমাদের সচেতন হতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কোন শক্তি থাকবে না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক, টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ ছানোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মোহাম্মদ মুখলেছুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহাদুজ্জামান। টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাডভোকেট জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস হোসেন, ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রতন, জীবন ইসলাম, আশরাফ আলী, ফিরোজ মান্না ও উদয় হাকিম। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেনÑ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলা। এই অনুষ্ঠানে ঢাকায় কর্মরত টাঙ্গাইলের ৭ সাংবাদিককে সহযোগী সদস্যপদ দেয়া হয়েছে। তারানা হালিম ঘোষণা করেন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সব সাংবাদিককে একটি ট্যাব দেয়া হবে। তাছাড়া প্রেসক্লাবের আইটি রুমকে আরও সমৃদ্ধ করতে যা কিছু প্রয়োজন তা করে দেয়া হবে। সাংবাদিকদের কল্যাণ ফান্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, এ কাজটি আমরা করে দেয়ার চেষ্টা করব। সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজটি করা জরুরী।
×