ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আলো-বাতাসকে স্থাপত্যের আত্মা মনে করতেন রবীন্দ্রনাথ

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ৭ আগস্ট ২০১৭

 আলো-বাতাসকে স্থাপত্যের আত্মা মনে করতেন রবীন্দ্রনাথ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবিবার ছিল বাইশে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণবার্ষিকী। ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা আয়োজনে স্মরণ করা হয়েছে কবিগুরুকে। এসব আয়োজনের মাঝে ছিল চির নতুনের কথা বলা রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে আবিষ্কারের চেষ্টা। তেমনই এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। পরিবেশ ও নির্মাণসংস্কৃতি প্রসঙ্গে রবীন্দ্র ভাবনা মেলে ধরে মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘পরিবেশ, নির্মাণসংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক একক বক্তৃতা। এ বিষয়ে বক্তৃতা করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট স্থপতি, রবীন্দ্র গবেষক ও পরিবেশবিদ অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রাবণের বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘পরিবেশ, নির্মাণসংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন কলকাতার বিশিষ্ট স্থপতি, রবীন্দ্র গবেষক ও পরিবেশবিদ অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাকে দৃশ্যভাষায় সহায়তা করেন সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। মূল বক্তৃতায় অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শুধু প্রযুক্তি দিয়ে যে স্থাপত্যের মুক্তি ঘটবে না বরং সাহিত্য-সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগের মধ্য দিয়েই স্থাপত্যের পূর্ণতা সম্ভব, তা রবীন্দ্রনাথ গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন। বিশ্ব পরিবেশ নিয়ে তার ভাবনা ছিল নিগূঢ় এবং তা তিনি বিশদ করে লাভ করেছেন পূর্ববঙ্গের শিলাইদহ, পতিসর, শাহজাদপুরে বসবাসের সূত্রে। বস্তুত পূর্ববঙ্গের শিলাইদহই ছিল শান্তি নিকেতনের প্রাককথন। তাই আলো-বাতাস ও পরিসরকে স্থাপত্যের আত্মা মনে করতেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি বলেন, যে কোন নির্মাণকে সৃষ্টিমুখী করে গড়ে তুলতে হবেÑ এই ছিল রবীন্দ্রবিশ্বাস। স্থাপত্য তার কাছে ছিল আকারের মহাযাত্রা। আমরা আজ উদগ্রতাকে এবং বিশালতাকে স্থাপত্যের গুণ হিসেবে জ্ঞান করছি কিন্তু রবীন্দ্রচিন্তার আলোকে স্থাপত্যকে যদি আমাদের মানবীয় ভাবনার অংশী করে তুলতে পারি তবে দেখব স্থাপত্যের ভেতর প্রকৃতির স্পন্দন জাগানোতেই এর মহিমা নিহিত। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, প্রকৃতির প্রতি রবীন্দ্রনাথের যে ব্যাকুলতা ছিল তা পূর্ববঙ্গে এসে পূর্ণতা পায়। আর তার স্থাপত্যিক বিকাশ তিনি ঘটান শান্তি নিকেতনে। সেখানকার গৃহনির্মাণকলা থেকে শুরু করে শিক্ষা-পরিসর পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় লগ্নতার সাধনা করেছেন। মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান বলেন, বাঙালী জীবনের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি শান্তি ও সম্প্রীতির, সৃষ্টি ও কল্যাণের ভাবনা ভেবেছেন সবসময়। তার স্থাপত্যচিন্তাতেও খুঁজে পাওয়া যায় কালোত্তীর্ণ মানবভাবনা। অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা একাডেমি এবার ভিন্ন আঙ্গিকে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করছে। তার সাহিত্যকর্মের মতোই স্থাপত্যচিন্তাও ব্যতিক্রমী এবং মৃত্তিকালগ্ন যা আজকের দিনেও আমাদের জন্য সমান প্রাসঙ্গিক। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া। বক্তৃতা ও গানে সাজানো চমৎকার এ আয়োজনটি উপভোগ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আলতাফ হোসেন, অধ্যাপক ফকরুল আলম, অধ্যাপক মহুয়া মুখোপাধ্যায়, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবি রুবী রহমান, কাজী রোজী, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, ফারুক মাহমুদ, তারিক সুজাত, ছড়াকার আসলাম সুভাষ সিংহ রায়, কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত প্রমুখ। শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির অনুষ্ঠান বাংলা একাডেমি ও প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর যৌথভাবে চব্বিশে শ্রাবণ মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ির বকুলতলায় বিশেষজ্ঞ বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেবেন প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আলতাফ হোসেন। লোকসংস্কৃতি, পল্লী পুনর্গঠন এবং রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করবেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট স্থপতি, রবীন্দ্র গবেষক ও পরিবেশবিদ অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করবেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রাশিদ আসকারী, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহিনুর রহমান এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট লেখক-গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন কুষ্টিয়া জেলার জেলা প্রশাসক মোঃ জহির রায়হান অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
×