ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ নির্যাতন খবর প্রকাশের পর সর্বমহলে তোলপাড়, আটক ৩ ॥ গাঢাকা প্রভাবশালীদের

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৭ আগস্ট ২০১৭

অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ নির্যাতন  খবর প্রকাশের পর সর্বমহলে তোলপাড়, আটক ৩ ॥ গাঢাকা প্রভাবশালীদের

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ডিমলা উপজেলার খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলনঝাড় গ্রামের গরু চুরির অপবাদ দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ সর্বমহলে তোলপাড় সৃষ্টি করে। রবিবার দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ শেফালীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের বিস্তারিত খবর প্রকাশে এই দিন দুপুরে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করে। তিনজনকে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘটনার নেপথ্যের প্রভাবশালী নায়করা সকলে গা ঢাকা দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটককৃতরা হলোÑ দেবারু মামুদের ছেলে নির্যাচিতা শেফালীর বড় বোন আকলিমার স্বামী রফিকুল ইসলাম (৩৫) শাশুড়ি অপেয়া বেগম (৫২) ও খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম্য পুলিশ রশিদুল ইসলাম। এদিকে রবিবার সকাল হতে বিকেল পর্যন্ত এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করেছেন নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (ডোমার ডিমলা সার্কেল) জিয়াউর রহমান। সূত্র মতে, এ সময় এলাকার অনেকে ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের অপসারণ দাবি করেন। অপরদিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্যাতনের শিকার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা শেফালী চিকিৎসাধীন রয়েছে। সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে তার খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। শেফালীকে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে শেফালীর সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, আমার শারীরিক অবস্থা ভাল নাই। পেটের সন্তান নড়াচড়া করে না। আমি বাঁচব না মরব জানি না। নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জনকণ্ঠের এই প্রতিনিধিকে বলেন, প্রকাশিত সংবাদে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার শেফালী অসুস্থ হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তার পক্ষে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি আরও জানান, নির্যাতিতা শেফালীর বিরুদ্ধে গরু চুরির ঘটনাটি সাজানো বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এদিকে এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, পুলিশের তদন্তের সময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শিমুল ইসলাম সত্য ঘটনা না বলার জন্য হুমকি প্রদান করে। অপরদিকে ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি নিয়ে সাংবাদিকরা যা প্রকাশ করেছে তা সত্য নয়। এটি একটি পারিবারিক ঘটনা। গরু চুরিকে কেন্দ্র করে নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটতে পারে। এছাড়া শেফালীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এদিকে এত কিছু হওয়ার পরেও ঘটনার নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালীরা শেফালীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনার মামলায় যাতে তাদের নাম না আসে সে ব্যাপারে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন তার মতো করে মামলা সাজানোর পাঁয়তারা করছে। এলাকাবাসীর দাবি মামলার বাদী করা হোক নির্যাতনের শিকার শেফালীকে। কারা কারা তাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে শেফালী নিজেই সব ভাল বলতে পারবে। আমরা যা দেখেছি তাই পুলিশের তদন্তে বলেছি। আমরা এর সঠিক মামলা ও বিচার চাই। উল্লেখ্য, মিথ্যা গরু চুরির ঘটনা সাজিয়ে গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা হতে শেফালীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়।
×