ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তুফান ও রুমকিকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৭ আগস্ট ২০১৭

তুফান ও রুমকিকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ

সমুদ্র হক/মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া থেকে ॥ বগুড়ায় ধর্ষণ এবং অপহরণ করে মেয়ে ও মাকে নির্যাতনের মামলায় রবিবার বিকেলে প্রধান অভিযুক্ত শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত নেতা তুফান সরকার ও তার জ্যাঠাস পৌর নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিকে পুলিশ পুনরায় আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানায়। বগুড়ার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আদালত উল্লিখিত দুই জনের রিমান্ড নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠায় এবং তাদের জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয়। এদিকে ধর্ষিতা মেয়েটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। তার শারীরিক ক্ষত সেরে গিয়েছে। তবে মানসিক ক্ষত (সাইকোলজিক্যাল ট্রমা) সেরে উঠতে অনেকটা সময় লাগবে। এমনটি জানিয়েছেন চিকিৎসক। প্রয়োজনে কোন সাইকোলজিস্টের কাছে তার কাউন্সিলিং করাতে হতে পারে। ধর্ষিতা শিশু ও তার মাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে জানানো হবে। এই বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, ছাড়পত্র দেয়ার পর পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করে মা ও মেয়ে কোথায় থাকবেন এই বিষয়ে আদালতের কাছে সিদ্ধান্তের আবেদন জানাবেন। আদালত থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর পুলিশ মেয়ে ও মায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এই বিষয়ে শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, বিভাগীয় প্রধান জানিয়েছেন মেয়ে ও মা মোটামুটি সুস্থ। তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়ার ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন। তারপরও ছাড়পত্র দেয়ার আগে আরও কোন জটিলতা আছে কি না তা পরীক্ষা করা হবে। আজ সোমবার মেয়ে ও মাকে ছাড়পত্র দেয়া হবে। তারপর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের আদালতে হাজির করা হবে। উল্লেখ্য, এর আগে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আমান উল্লাহ ধর্ষিতা শিশু ও তার মায়ের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। ওই আদালত ধর্ষিতা শিশু ও তার মায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বগুড়ার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। মা ও মেয়ে নিজের বাড়িতেই থাকতে চান ধর্ষিতা তরুণী ও তার মা জানিয়েছেন তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তারা শহরের নামাজগড় লেনে তাদের বাড়িতেই থাকতে চান। তাদের জীবনের ওপর যে ঘটনা ঘটে গেল তারপর সামাজিকভাবে তারা কতটা নিরাপদ থাকবে এ নিয়েও তারা শঙ্কিত। তাদের যেন ভাবনার অন্ত নেই। ধর্ষিতা মেয়ে এখনও বলছে, সে লেখাপড়া করতে চায়। জীবনের যে ঝড় তা ভুলে যেতে চায়। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা পেতে চায়। লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চায়। সর্বোপরি তার ও তার মায়ের ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। যাতে আর কোন মেয়ের জীবনে যেন এমন কলঙ্ক নেমে না আসে। আর কোন তুফান ও তার ক্যাডার সন্ত্রাসী যেন তৈরি না হয়। শিমুল এখনও গ্রেফতার হয়নি বগুড়ার চাঞ্চল্যকর এই দুই মামলায় এজাহারভুক্ত দশ অভিযুক্তের মধ্যে পুলিশ নয়জনকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত শিমুলকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ জানিয়েছে শীঘ্রই শিমুলকে গ্রেফতার করা হবে। মামলার তুফান সরকারের দুই ক্যাডার আতিক ও মুন্না আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। ধর্ষিতা শিশু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। পুলিশের এক সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত যে জবানবন্দী তথ্য উপাত্ত ও আলামত মিলেছে তাতে দ্রুতই মামলার চার্জশীট দেয়া সম্ভব হবে। রুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো এখন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই কমিটি প্রতিদিন বিকেল ৩টায় জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে প্রত্যক্ষদর্শী সর্বস্তরের মানুষের সাক্ষ্য গ্রহণ করছেন। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন সমাজকল্যাণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম খান ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। রুমকি আওয়ামী লীগের কেউ নয় রবিবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মমতাজ উদ্দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেন ‘কেউ ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানালেই সে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে এমনটি ধরে নেয়া ঠিক নয়। পৌর কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি কাগজে কলমে আওয়ামী লীগের কেউ নয়। রুমকি এখনও বিএনপির নেত্রী।’ তার এই বক্তব্যের পর একজন সংবাদকর্মী প্রশ্ন করেন রুমকি আওয়ামী মহিলা লীগের যুগ্ম সম্পাদকের পরিচয় দিয়েছে এবং আওয়ামী মহিলা লীগ কোন বক্তব্য দেয়নি। তাকে বহিষ্কারও করেনি। এই বিষয়ে মমতাজ উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলোর আলাদা গঠনতন্ত্র আছে। আওয়ামী লীগ সরাসরি তাদের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না। তবে মমতাজ উদ্দিন বলেন, বগুড়ার ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার আগে তুফান গংদের যে খবরগুলো বিভিন্ন সূত্রে জেনেছিলেন এই বিষয়ে ওই গংদের বহুবার সাবধান করে দেয়া হয়েছে। এখনও তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে মাদক সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ জুয়ার লোকদের কোন স্থান নেই। প্রমাণ পাওয়া মাত্র কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একটি ঘটনা অনেক ঘটনার উন্মোচন করছে ধর্ষণ এবং মেয়ে ও মাকে নির্যাতনের ঘটনার পর কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়া শুরু হয়েছে। তুফান গংদের অপরাধের তালিকা একের পর এক উন্মোচিত হতে শুরু করেছে। শহরের প্রতিটি পাড়া ও মহল্লায় তুফান গংদের ক্যাডার অনুসারিরা রয়েছে। এমনকি উল্লেখযোগ্য উপজেলাগুলোতেও এসব ক্যাডার ত্রাস সৃষ্টি করে। এমন কোন স্থান নেই যেখানে মাদকের আখড়া নেই। যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি তোলা থেকে শুরু করে জায়গা জমি দখল, জুয়ার মেলা বসানো থেকে হেন কোন অপরাধ নেই যা তারা করে না। হাট বাজার ইজারা দখলও করে তারা। বগুড়ার ২শ’ ৮৩টি হাটবাজার থেকে তিন বছর আগে যে রাজস্ব আদায় হতো তিন বছরের ব্যবধানে তা পাঁচ কোটি টাকা কমেছে। তবে এই পরিমাণ শুধু পাঁচ কোটি নয় আরও বেশি, সূত্র এমনটি জানিয়েছে। তুফান গংরা কত কোটি টাকার মালিক তুফান ও তার ভাইরা কত কোটি টাকার মালিক তার কোন হিসাব নেই। জনশ্রুতি আছে তারা কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক ও রিক্সা থেকে প্রতিদিন শুধু তুফানের আয় সাড়ে চার লাখ টাকা। তার ওপর প্রতিদিনের মাদক ব্যবসা বগুড়াকে কেন্দ্র করে গোটা উত্তরাঞ্চলে সম্প্রসারিত। এই মাদক আসে টেকনাফ ও সীমান্ত গলিয়ে। দেশের মাদকের বড় চাঁইদের সঙ্গে তুফানের সঙ্গে গভীর ও সুসম্পর্ক আছে। তুফানের ভাই ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা নিত্যদিন চাঁদা তোলা থেকে যত অপরাধ তার সবই করে।
×