ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একটি মিনি অয়েল লাইটার ট্যাঙ্কার আটক

চোরাচালান পণ্যের তালিকায় এবার ডিজেল

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৭ আগস্ট ২০১৭

চোরাচালান পণ্যের তালিকায় এবার ডিজেল

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বিদেশ থেকে দেশে চোরাই পথে পণ্য আসার তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে ডিজেল। বিষয়টি বিস্ময়কর হলেও গত এক বছর ধরে চোরাই পথে ডিজেলের চালান আসছে এবং খালাসও হচ্ছে। অথচ অকটেন, পেট্রোল, ডিজেলসহ বিভিন্ন জ্বালানিজাতীয় পণ্য এককভাবে সরকারী পর্যায়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আমদানি করে থাকে। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত পর্যায়ে এ জাতীয় তেল আনা হয়। অপরিশোধিত তেল ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে পরিশোধিত হয়ে থাকে। জ্বালানি তেলের বিপণনকারী হচ্ছে তিনটি তেল কোম্পানি অর্থাৎ পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে যে কনডেনসেট পাওয়া যায় তাও বেসরকারী পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত রিফাইনারি কোম্পানিগুলোতে পরিশোধন করে তা বিপিসির মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানো হয়। কিন্তু বর্তমানে স্পর্শকাতর এ সেক্টরের জ্বালানি ডিজেল সম্পূর্ণ অবৈধ পথে বিদেশ থেকে বিশেষ করে সিঙ্গাপুর থেকে মিনি অয়েল ট্যাঙ্কারযোগে বহির্নোঙ্গর এলাকার বাইরে পৌঁছানো হচ্ছে। এরপর ছোট ছোট অয়েল লাইটার ট্যাঙ্কারযোগে খালাস হয়ে বাজারজাত করছে একটি সিন্ডিকেট। বিষয়টি অয়েল সেক্টরের অলিখিতভাবে জানা রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি সমুদ্র এলাকা বা এর বাইরে হয়ে আসছে বিধায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পক্ষে করণীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যসামগ্রী প্রধানত চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর ও জেটিতে এবং মংলা বন্দর ও এর জেটিসমূহে খালাস হয়ে থাকে। বিশাল সমুদ্র এলাকায় দেশীয় নৌসীমা পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আর বহির্নোঙ্গর এলাকায় কার্যক্রম চালিয়ে থাকে কোস্টগার্ড। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড বিভিন্ন ধরনের চোরাচালানের সামগ্রী আটক করে থাকে। কিন্তু পেট্রোলিয়ামজাত সামগ্রী চোরাই পথে আসার পর আটক করার কোন ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু গত শনিবার মধ্যরাতে বহির্নোঙ্গর এলাকার বাইরে থেকে খালাস হওয়া চারটি ডিজেলবোঝাই মিনি অয়েল লাইটার ট্যাঙ্কার চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে নৌবাহিনী খোয়াজ খিজির-২ নামের একটি মিনি অয়েল ট্যাঙ্কার আটক করেছে। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌবাহিনী বা আইএসপিআর থেকে এ বিষয়ে কোন তথ্য জানা যায়নি। তবে একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, মিনি অয়েল ট্যাঙ্কারবোঝাই ডিজেল আটকের ঘটনা সত্য। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, তারাও এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছে। কিন্তু এ জাতীয় চোরাই পণ্যের চালান আটকের কোন এখতিয়ার তাদের নেই। বঙ্গোপসাগরে বিশাল এলাকার বাইরে বিদেশ থেকে ডিজেলবোঝাই অয়েল ট্যাঙ্কার আসার অভিযোগ কাছে তাদের রয়েছে। বর্তমানে দেশী-বিদেশী জাহাজে ব্যাঙ্কারিং (জ্বালানি সরবরাহ) একেবারে হ্রাস পাওয়ায় ব্যাঙ্কারিংয়ে লিপ্ত মিনি অয়েল ট্যাঙ্কারগুলোর একটি অংশ এ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট এর নেপথ্যে কাজ করছে। যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একটি সূত্র জানায়, তাদের কাছে এ ধরনের কোন খবর নেই। যেহেতু জ্বালানি তেল সরকারী পর্যায়েই আমদানি হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি কোন কোন জ্বালানি পণ্য সরকারী অনুমতি নিয়ে বেসরকারী পর্যায়ে আমদানি হয়ে থাকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর এর শুল্কায়ন শেষে খালাসের অনুমতি দেয়া হয়। সূত্র জানায়, গত এক বছরজুড়ে চোরাচালানি চক্রের কার্যক্রমে ডিজেল সংযুক্তি হওয়ার ঘটনাটি রীতিমতো বিস্ময়কর। আমদানির সব নিয়ম-কানুন বাদ দিয়ে চোরাই পথে মিনি অয়েল ট্যাঙ্কারযোগে জ্বালানি তেল বিশেষ করে ডিজেল আনার ঘটনাটি বিস্ময়কর এবং অভিনবও বটে, যা অতীতে কখনও ঘটেনি। এখন চলছে। গত শনিবার মধ্যরাতে যে চারটি মিনি অয়েল ট্যাঙ্কারযোগে চোরাই পথে ডিজেল আনা হয়েছে তার আরেকটি নাম পাওয়া গেছে। সেটি হচ্ছে প্যাসিফিক গ্লোরী। জাহাজে ব্যাঙ্কারিং হ্রাস পাওয়ার আগে তিন তেল কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা বছরে গড়ে দেড় লক্ষাধিক টন ব্যাঙ্কারিং করে আসছিল। কিন্তু বহির্নোঙ্গর এলাকার বাইরে অপেক্ষাকৃত সস্তামূল্যে ডিজেল মিলছে বিধায় বৈধ তৎপরতা হোঁচট খেয়েছে। ব্যাঙ্কারিংয়ের কাজে নিয়োজিত মিনি অয়েল ট্যাঙ্কারগুলোর কার্যক্রম থমকে গেছে। অনেক ট্যাঙ্কার অলস অবস্থায় রয়েছে। আবার বহু মালিক এ জাতীয় মিনি অয়েল ট্যাঙ্কার বিক্রিও করে দিয়েছে। ব্যাঙ্কারিংয়ের কাজে ৩০টিরও বেশি মিনি ট্যাঙ্কার সংযুক্ত ছিল। এখন নেই বললেই চলে। এ বিষয়ে বন্দর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি তাদের কানে এসেছে। কিন্তু কোন সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। মামলাও হয়নি।
×