ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আদিবাসী দিবসের কর্মসূচী ঘোষণা ॥ ১০ দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৬ আগস্ট ২০১৭

আদিবাসী দিবসের কর্মসূচী  ঘোষণা ॥ ১০ দাবি  বাস্তবায়নের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতিসংঘের আদিবাসী অধিকারবিষয়ক ঘোষণাপত্র অবিলম্বে বাস্তবায়নসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। এসব দাবির মধ্যে রয়েছেÑ এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়নে আদিবাসী জনগণ ও সংগঠনসমূহের পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, আদিবাসীদের জীবনে প্রভাব ফেলবে এমন উন্নয়ন প্রকল্প নেয়ার আগে তাদের সঙ্গে সংলাপ বাধ্যতামূলক করা, আদিবাসীদের ভূমির অধিকার ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া, পার্বত্য শান্তিচুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠন করা ইত্যাদি। ৯ আগস্ট ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা এসব দাবির কথা জানান। লিখিত বক্তব্যে সন্তু লারমা বলেন, বর্তমান সরকার বলছে, উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভেসে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগণ, গরিব প্রান্তিক কৃষক, দলিত হরিজন, খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ, চা-বাগানের শ্রমিকসহ লাখ লাখ মানুষ কথিত এ উন্নয়নের জোয়ারে ডুবে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১৩১ জন মানুষ মারা গেল এবং ২০ হাজার পরিবার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলো, অথচ সরকারের সেখানে কোন তৎপরতা নেই। সাজেকে ১৫ হাজার মানুষ খাদ্যাভাবে হাহাকার করছে, সেখানে ১০ হাজার টন খাদ্য দরকার। কিন্তু সরকার নির্বিকার। সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা ৬-৯ আগস্ট আদিবাসী দিবসের নানা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এ সময় আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজনের দাবিও জানান তিনি। তিনি বলেন, ৯ আগস্ট সকাল ১০টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মূল অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এছাড়া ক্ষুদ্র জাতিসত্তা জনগণের বসবাস রয়েছে দেশের এমন সব জেলায় এ দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে আদিবাসী দিবসের বাণীতে আদিবাসী অধিকার ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেন সন্তু লারমা। তিনি বলেন, দেশে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগণের যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তার কোন প্রতিকার নেই। তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রের দায়িত্বহীন ও বৈরী আচরণ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দেশে তাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আদিবাসী অধিকার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। এতে আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার, ভূমি, অঞ্চল বা টেরিটরি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর পূর্ণ অধিকার, ভূমির ওপর ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ, আদিবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, শিক্ষাসহ নিজস্ব ভাষা ও জীবনধারা সংরক্ষণের স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। আদিবাসী ফোরামের সদস্য সচিব সঞ্জীব দ্রংয়ের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেনÑ ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, মানবাধিকারকর্মী নুমান আহমেদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা ও রবীন্দ্রনাথ সরেন। অনুষ্ঠানে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, এ দেশ থেকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগণের অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এ ধরনের তৎপরতাকে তিনি গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধস হিসেবে চিহ্নিত করেন। অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, দেশে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগণ থাকলেও তাদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হচ্ছে না।
×