ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে বেকারের সংখ্যা অনেক তাই শুধু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে লাভ হবে না, প্রয়োজন সব নিয়ামকের সমন্বয় সাধন্ ॥ জলি রহমান

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে মুদ্রানীতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৬ আগস্ট ২০১৭

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে মুদ্রানীতি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দারিদ্র্য বিমোচন , কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা এসব সামষ্টিক লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বিবেচনা করে প্রতি অর্থবছরে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য প্রণয়ন করা হয় মুদ্রানীতি। মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্যই হলো ব্যাপক মুদ্রা অর্থাৎ ব্যাংকের সকল চলতি এবং সঞ্চয়ী আমানতের সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণ। প্রতিটি দেশের লক্ষ্য থাকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। এ জন্য পর্যাপ্ত ঋণ প্রয়োজন। তাই সঠিক মানুষের কাছে ঋণ পৌঁছে দেয়া ও তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ঋণের প্রবৃদ্ধি না হলে মন্থর হয়ে পড়ে অর্থনীতি। যার প্রভাব পড়ে প্রবৃদ্ধিতে । সঙ্কোচিত হয় কর্মসংস্থান। এসব দিক বিবেচনায় রেখেই বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রনীতি প্রণয়ন করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অতিসতর্ক। যার প্রমাণ মিলেছে মুদ্রানীতি ঘোষণার মাধ্যমে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাকের গবর্নর ফজলে কবির। মদ্রানীতিতে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বর্তমানের অর্জনের তুলনায় কিছুটা বেশি, তবে আগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ধরা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া মদ্রানীতিতে শেয়ারবাজার নিয়ে কোন নেতিবাচক বক্তব্য নেই। সব মিলিয়ে মদ্রানীতির ভঙ্গি শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের ভীতি কাটাতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঘোষিত মদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারী খাতের ঋণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং জুন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। গত মে পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১৬ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে ১০০ টাকা ঋণ বিতরণ হলে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন করে আরও ১১৬ টাকা ২০ পয়সা বিতরণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। আগের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া আগামী জুন পর্যন্ত সরকারী খাতের ঋণের প্রাক্কলন করা হয়েছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমালে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে। একই সঙ্গে গত কয়েক বছরের আমানতের সুদহার হ্রাসের প্রবণতা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিকে অর্থনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথার্থ মনে করেছেন। তার মতে, মুদ্রা ও ঋণ প্রবাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ঋণ জোগানের যে কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে, তা যথোচিত। জাহিদ হোসেন বলেছেন, এবারের মুদ্রানীতির ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য হলো, চলতি মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ব্যাপক মুদ্রার জোগানের পার্থক্য খুবই কম। চলতি অর্থবছরে সরকারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আর স্থির মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রক্ষেপণ হলো, মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। ফলে মূল্যস্ফীতি যোগ করলে চলতি মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১৩ শতাংশের কাছাকাছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরে ব্যাপক মুদ্রা জোগানের প্রবৃদ্ধি ধরেছে যা ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগের মুদ্রানীতিগুলোতে ব্যাপক মুদ্রা জোগানের লক্ষ্যমাত্রা চলতি মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমপক্ষে ২ শতাংশ বেশি ছিল। এবার সে চেষ্টা করা হয়নি। কারণ ব্যাংক ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা মোকাবেলা করা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের বাস সেখানে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি গুরুত্ব দিতে হবে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে। দেশে বেকারের সংখ্যা অনেক তাই শুধু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে লাভ হবে না, প্রয়োজন সব নিয়ামকের সমন্বয় সাধন। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈশ্বিক, অভ্যন্তরীণ এবং সামষ্টিক অর্থনীতিকে বিবেচনায় রেখেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে, যা মূলত পরবর্তী কয়েকটি মাসের জন্য কার্যকর থাকে। পরবর্তী মাসগুলোতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ব্যাপক কোন পরিবর্তন ঘটলে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি সে অনুযায়ী সমন্বয় করে।
×