মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশের অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অসাড় ও শ্বাসরুদ্ধকর হাজারো বিধি নিয়ম এবং পুঁজিবাদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা না থাকা আমলাদের বজ্রমুষ্টি থেকে শৃঙ্খলামুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের একটা উপায় হলো ব্যবসায়িক পটভূমি ও বিনিয়ন্ত্রণের দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন এক ব্যক্তিকে এবং তার আগে সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রধান পদ আরেক ব্যক্তিকে নিয়োগদানের মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের এই স্ট্র্যাটেজির পরিচয় পাওয়া গেল।
২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কটের জবাবে ওবামা আমলে ডড ফ্রাঙ্ক এ্যাক্ট নামে একটি আইন পাস করা হয়েছিল এবং তার অধীনে ফেডারেল পর্যায়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল এক নতুন তত্ত্বাবধানকারীর পদ। এ পর্যন্ত এই শক্তিধর ও ক্ষমতাবান পদটি ঘরোয়াভাবে প্রদান করা হয়েছিল ফেডারেল বোর্ডের সদস্যকে। প্রথমে ড্যানিয়েল টারুল্লোকে এবং তিনি চলে যাওয়ার পর জেরোম পাওয়েলকে। গত ১১ জুলাই এই পদের জন্য আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন দেয়া হয়েছে র্যান্ডাল কোয়ার্লেসকে। পদটি ভাইস চেয়ারম্যানের যার দায়িত্ব হবে আর্থিক বিষয়াদির তত্ত্বাবধান করা।
কোয়ার্লেস এর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। শীর্ষস্থানীয় ল ফার্ম ডেভিস পল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনজীবী হিসেবে এবং অর্থ দফতরের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। অতি সম্প্রতি ধনাঢ্য পরিবারগুলোর পক্ষে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সাইনোশিওরের প্রধান ছিলেন ডেভিস পল। তার নিয়োগ এখন সিনেটের অনুমোদনের অপেক্ষায়।
শোনা যায় কোয়ার্লেস স্বচ্ছ ও প্রত্যক্ষ নিয়মকানুনের দ্বারা পরিচালিত নীতির পক্ষপাতী। তাই যদি হয় তাহলে অর্থলগ্নির ব্যাপারে ওবামা প্রশাসনের নীতি থেকে এটা একটা পরিবর্তন সূচিত করবে। ওবামা প্রশাসনের সময় অর্থলগ্নির ক্ষেত্রে জটিল এবং কখনও কখনও পরস্পরবিরোধী নির্দেশ জারি করা হতো। সুপারভাইজাররা সুস্পষ্ট মানদ-হীন স্ট্রেস টেস্টের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে কঠিন চাপে রাখত। এতে অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বড় ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল। তা ছাড়া রেগুলেটররা বিশাল ঐচ্ছিক ক্ষমতাও পেয়ে গিয়েছিল। এখন কোয়ার্লেস এসে অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কতখানি গতিবেগ সঞ্চার করতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়।
অর্থলগ্নি ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল পরিবর্তনের আরেকটি লক্ষণ হলো গত মে মাসে সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান দে জে ক্লেটনকে নিয়োগ দিয়েছেন। এসইসি এখন এক দারুণ গোলমেলে ও সমস্যাকবলিত সংস্থা। ডড ফ্রাঙ্ক এ্যাক্ট অনুযায়ী এই সংস্থার যে সব নতুন নিয়মকানুন রচনা করার কথা তার এক-তৃতীয়াংশ এখনও বাকি রয়ে গেছে। কমিশনের পাঁচজন সদস্যের মধ্যে তিনজনের শূন্যপদ এখনও পূরণ হয়নি। ওবামা শেষ যে দুজনকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন তা কংগ্রেসের অভ্যন্তরে গভীর আদর্শিক বিভাজনের কারণে অনুমোদন লাভ করতে পারেনি। এসইসির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তিনটি বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণ, সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও দক্ষ বাজার পরিচালনা এবং মূলধন গঠন সুগম করা। তবে অনেক সময় এগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার বিরোধ বাধে।
গত ১২ জুলাই নিউইয়র্কের ইকোনমিক ক্লাবে ক্লেটন তার প্রথম প্রকাশ্য বক্তৃতায় অর্থলগ্নি বাজারের এক নিরানন্দ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত দুই দশকে আমেরিকায় প্রকাশ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা দারুণ হ্রাস পেয়েছে। এটা অর্থলগ্নি বাজারের গভীর কাঠামোগত সমস্যারই প্রতিফলন। এটা গড় আমেরিকানদের ক্ষতির কারণ ঘটাচ্ছে। কারণ তারা শক্তিশালী কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে না।
ক্লেটন এই অবস্থার পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। তার প্রথম পদক্ষেপটি নেয়া হয় ১০ জুলাই। এদিন এক নতুন বিধি কার্যকর হয় যার ফলে কোম্পানিগুলোকে এসইসিতে মূলধন বাড়ানোর জন্য প্রাইভেট রেজিস্ট্রেশন বিবরণী দাখিল করার এবং এইভাবে কোম্পানির পরিসর বাড়ানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রতিযোগীরা সদ্ব্যবহার করতে পারে এমন স্পর্শকাতর তথ্য প্রকাশ বিলম্বিত করারও ব্যবস্থা রয়েছে। পরিবর্তনটা সামান্য। তবে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা ও দর্শনে যে বৃহত্তর পরিবর্তন আসছে এটা তার ইঙ্গিত হতে পারে।
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: