ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক প্রাপ্তিতে এনামুল হককে সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৬ আগস্ট ২০১৭

স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক প্রাপ্তিতে এনামুল হককে সংবর্ধনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুমাত্রিক পরিচয়ের এক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. এনামুল হক। এই ভাষাসৈনিক, প্রতœতত্ত্ববিদ ও গীতিকবিকে সংবর্ধনা প্রদান করা হলো শনিবার বিকেলে। বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বের এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন এবং ২০১৪ সালে একুশে পদকপ্রাপ্তি উপলক্ষে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়। একই আয়োজনে উদ্্যাপন করা হয় বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এনামুল হককে এ সম্মাননা জানানোর আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা ক্লাবের সিনহা লাউঞ্জে। সংবর্ধনাপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে এনামুল হক বলেন, আজ যে সংবর্ধনা আপনারা আমাকে দিয়েছেন, তাতে আমি কৃতজ্ঞ। আমি সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমার শরীরে অনেক ব্যাধি থাকা সত্ত্বেও নিরন্তর কাজ করে যেতে চাই। সেজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল এনামুল হককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো। তারপর তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত হয় তাঁর রচিত গান ও কবিতা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ও সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহবুব আলম। এনামুল হককে নিবেদিত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী হাশেম খান, শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, প্রাচীন বাংলার লিপিবিশারদ ড. শরিফুল ইসলাম ও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আলী ইমাম বলেন, জাতির জন্য ও দেশের জন্য অনেক বড় কাজ করেছেন এনামুল হক। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। ইতিহাসকে সবার কাছে তুলে ধরেছেন তিনি। স্বদেশ রায় বলেন, এনামুল হকের মতো মানুষের দিকে তাকিয়ে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। আশি বছর বা নব্বই বছর এই দীর্ঘ জীবন বড় কিছু নয়। তিনি মানুষের কাছে যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবেন। ড. এনামুল হকের দিকে তাকালে আমরা আড়াই হাজার বছরের পুরনো ইতিহাসের। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে এনামুল হক রচিত কবিতাপাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যা। আর এনামুল হক রচিত গান গেয়ে শোনান সুবীর নন্দী। আমিনা সুন্দরী ও ক্রীতদাসের হাসি নাটকের মঞ্চায়ন শনিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার দুটি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো দুটি নাটক। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নাটক আমিনা সুন্দর। অন্যদিকে নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চ নাট্যশিল্পীদের সহায়তা তহবিল গঠনে মঞ্চস্থ হয় নাগরিক নাট্যাঙ্গনের নাটক প্রযোজনা ক্রীতদাসের হাসি। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো চট্টগ্রামের অমর লোককাহিনী ‘ভেলুয়া সুন্দরী’ ও ‘নছর মালুম’ এ দুই গল্প অবলম্বনে ‘আমিনা সুন্দরী’ নাটকটি রচনা করেছেন এসএম সোলায়মান। নির্দেশনা দিয়েছেন রোকেয়া রফিক বেবী। বাঙালী নারীর শাশ্বত প্রেম ও পুরুষশাসিত সমাজে নারীর প্রতি পুরুষের প্রবঞ্চনা এ নাটকটির প্রধান উপজীব্য। গল্প ৩০০ বছরের পুরনো হলেও নারীর প্রতি অবমাননার এ ধরন ঘরে ঘরে আজো বর্তমান। সেই সূত্র ধরে আমিনা সুন্দরী হয়ে উঠেছে প্রাসঙ্গিক ও হাজার নারীর জীবন বাস্তবতার গল্প। আমিনা সুন্দরী নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেলিম মাহবুব, চন্দন রেজা, প্রশান্ত হালদার, রিয়াজ হোসেন, ফেরদৌস আমিন বিপ্লব, সাইফ সুমন, কামরুজ্জামান মিল্লাত, ফৌজিয়া করিম অনু, শিল্পী চৌধুরী, আনিকা মাহিন, দীপ্তা, হাসনাত প্রদীপ, সুজন প্রমুখ। প্রখ্যাত কথাশিল্পী শওকত ওসমানের উপন্যাস অবলম্বনে নাটক ‘ক্রীতদাসের হাসি’ নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেত্রী হৃদি হক। নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব লাকী ইনাম। নাগরিক নাট্যাঙ্গনের ২১তম প্রযোজনাটির প্রেক্ষাপট পাকিস্তান আমলের জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন ও বর্বর স্বৈরশাসন। আইয়ুব খানের অপশাসনের যে গল্পটি খলিফা হারুন অর রশিদের চরিত্রের মাধ্যমে চিত্রায়ণ করা হয়েছে, তা যেন আজও ভাস্বর। সেই নাটকে হাসল না ক্রীতদাস। আইয়ুবি অপশাসনের ইতিহাস উঠে এসেছে নাটকের ভাঁজে ভাঁজে। নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক লাকী ইনাম বলেন, অসম্ভব মেধাবী সাহিত্যিক ছিলেন শওকত ওসমান। তিনি খলিফা হারুন অর রশিদের গল্পের মধ্য দিয়ে রূপকার্থে তুলে এনেছেন আইয়ুব খানকে। যেই শাসন বাংলার মানুষ কখনও মেনে নেয়নি। সেই গল্পটিকেই নাট্যরূপ দিয়েছি। প্রযোজনাটির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন হৃদি হক, রনি, জুয়েল জহুরসহ নাগরিক নাট্যাঙ্গনের একঝাঁক শিল্পী।
×