ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তুফান সরকার কি ফের ছাড়া পেয়ে ত্রাসের রাজত্ব শুরু করবে!

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৬ আগস্ট ২০১৭

তুফান সরকার কি ফের ছাড়া পেয়ে ত্রাসের রাজত্ব শুরু করবে!

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষ এবং সুধীজনের শঙ্কা- শিশু ধর্ষক তুফান সরকার তার সন্ত্রাসী ক্যাডার এবং ঘটনার আড়ালের খবরের সঙ্গে যারা অভিযুক্ত তারা কি ফের ছাড়া পেয়ে পূর্বাবস্থার ফিরে গিয়ে মাদক, হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, জুয়ার ত্রাসের রাজত্ব শুরু করবে! আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বগুড়ার পুলিশ সুপারের আশ্বস্তের কথা : আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। স্বচ্ছ তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে। এই ঘটনা শুধু নয় কোন অপরাধের ঘটনাতেই অভিযুক্তদের ছাড় দেয়া হবে না। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মমতাজ উদ্দিন ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সংগঠন মানে অপরাধ করার লাইসেন্স নয়। সহযোগী ও ভূঁইফোর কিছু সংগঠনের কারণে আওয়ামী লীগের দুর্নাম হচ্ছে। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব কথা শুনে বগুড়ার মানুষ আশা ও শঙ্কার মধ্যে দোদুল্যমান। দেশজুড়ে চাঞ্চল্যকর বগুড়ার শিশু ধর্ষণ এবং মা ও মেয়েকে বেধড়ক মারপিট করে চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনার নিন্দার ঝড় এখনও কাটেনি। দৈনিক জনকণ্ঠসহ মিডিয়াকর্মীদের সাহসী রিপোর্টিং সাধারণ মানুষ ও সুধীজনের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সুধীজনরা বলছেন, তারা এতদিন সংবাদকর্মীদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। সাধারণ মানুষ এখনও বিশ্বাস করে, যত বিতর্কই থাক শেষ পর্যন্ত সংবাদকর্মীরা সাধারণ মানুষের পাশেই দাঁড়ায়। বগুড়ার ঘটনায় আরও একবার প্রমাণিত হলো ‘পেন ইজ মাইটার দ্যান সোর্ড’। অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংবাদকর্মীরা যেভাবে জোটবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে তাতে ‘কুখ্যাতদের’ ভীত নড়ে উঠেছে। এরা এখন পালাবার পথ খুঁজছে। মিডিয়া এগিয়ে আসায় পালাবার যে কোন পথ নেই পুলিশ তাও প্রমাণ করছে। দিনে দিনে মিডিয়ারও অনেক রকমফের ঘটেছে। এখন আর কোন খবরই লুকিয়ে রাখা, ক্যামোফ্লেজ করা ফেব্রিকেট ও এক্সাজেরেট করার উপায় নেই। সত্য তার আপন গতিতেই বের হয়ে আসবে। আর অর্ধ সত্য যে পুরো মিথ্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর তাও প্রমাণিত হচ্ছে। যে রাজনৈতিক দলের মধ্যে অপরাধীরা প্রবেশ করে কলুষিত করেছে তাদের তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করার বিষয়টিকে সুধীজন ইতিবাচক দৃষ্টি নিয়ে দেখছেন। বগুড়ার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত নেতা তুফান সরকারের ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের গ্রেফতার করার পর প্রথমদিকে সাধারণজন মনে করেছিল ‘এ আর এমন কি। আগেও যা হয়েছে এখনও তাই হবে।’ তবে এবারের ঘটনা এতটাই কলঙ্কিত অধ্যায় যা সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ছাইচাপা আগুন স্ফুলিঙ্গ হয়ে ছিটকে জ্বলে ওঠার আগেই ঘটনার পরপরই পুলিশ প্রধান অভিযুক্ত ধর্ষক তুফান সরকারসহ চার ক্যাডারকে গ্রেফতার করে। পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে গ্রেফতার করা হয় এজাহারে অভিযুক্ত দশ জনের মধ্যে বাকি পাঁচজনকে। তাদের পাবনা ও ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এজাহারভুক্ত একজন অভিযুক্ত শিমুলকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তুফান সরকারের স্ত্রী শাশুড়ি জ্যাঠাসসহ সন্ত্রাসী ক্যাডাররা আছে। সবচেয়ে বিস্মিত হওয়ার কথা, পৌরবাসী ভোট দিয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের যে কাউন্সিলরকে নির্বাচিত করেছে সেই জনপ্রতিনিধি তুফান সরকারের জ্যাঠাস মার্জিয়া হাসান রুমকী ধর্ষিতা শিশু ও তার মাকে নির্যাতনকারীদের একজন। এই ঘটনার পর সাধারণ লোকজন রুমকির বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় তুলেছে। সুধীজনরা মহিলা আওয়ামী লীগের নব্য নেত্রীকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে যে জনপ্রতনিধি নারীকে সুরক্ষা করবে সেই যখন নির্যাতক তখন তার পৌর কাউন্সিলর পদটি খারিজ করে দেয়া হোক। তবে ঘটনার পর জেলা প্রশাসন থেকে জনপ্রতিনিধি চুমকির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সমাজকল্যাণ অধিদফতরের উপ-পরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সূত্র জানায় তদন্তে রুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওপর মহলে তার কাউন্সিলর পদ বাতিলের সুপারিশ করা হবে। বগুড়ার শিশু ধর্ষণের ঘটনা এবং মা ও মেয়েকে নির্যাতনের পর প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অব্যাহত রয়েছে। শনিবার সকালে শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় চকসুত্রাপুর কমিউনিটি ওয়ার্কার্স গ্রুপের আয়োজনে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচী, জুবিলি স্কুলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মানববন্ধন করেছে। বগুড়ার যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্ক যৌন হয়রানির সকল ঘটনা নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানায়। সমাবেশে এক সুধীজন বলেন, ‘হু ইজ অর হু আর দ্য গড ফাদার অব দ্য গড ফাদার’ তাদেরও মুখোশ উন্মোচন করে আইনের আওতায় আনা হোক। এদিকে তুফান সরকার ও গংদের পক্ষে কৌশলে প্রচার শুরু হয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে তুফান সরকারের ক্যাডার যারা আত্মগোপন করেছিল তারা ফের মুখ বের করতে শুরু করেছে। কচ্ছপ যেভাবে দ্রুত মুখ লুকিয়ে সুযোগমতো খোলসের ভেতর থেকে মুখ বের করে তুফান সরকারের ক্যাডার ও অনুসারীরা বিভিন্ন পয়েন্টে একত্রিত হয়ে তুফান সরকার তার ভাইদের পক্ষে প্রোপাগা-া চালাচ্ছে। তারা বলছে যার টাকা আছে তার সবই আছে। তবে নগরীর মানুষ এখন এতটাই সচেতন হয়েছে যারা এই কথাগুলো বলছে তাদের মুখের ওপর প্রতিবাদ করছে। তারা বলছে আইনের হাত টাকার চেয়ে অনেক বেশি লম্বা। এই ঘটনা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ মাদক সম্রাটদের বিরুদ্ধে লোকজন ফুঁসিয়ে উঠেছে। অনেকেই বলাবলি করছেন- নারায়ণগঞ্জের নূর হোসেনের মতো লোক ছাড়া পায়নি। সরকার তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। সেখানে বগুড়ার তুফান সরকার ও তার ভাইয়রা কোনভাবেই ছাড়া পাবে না। গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের বিপক্ষে কখনই যাবে না। সাধারণ মানুষের ভোটেই তারা ক্ষমতায় এসেছে। বর্তমান সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের যথেষ্ট আস্থা আছে। বগুড়ার ক্ষমতাধর মাদক সম্রাট ধর্ষক চাঁদাবাজ গংদের যেন উপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় সাধারণ লোকজন তাই আশা করছে। আর যেন কোন তুফান সরকারের সৃষ্টি না হয়। কোন গড ফাদার আর যেন কোন তুফান সরকারের সৃষ্টি না করে।
×