ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শোকরে মাস

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৬ আগস্ট ২০১৭

শোকরে মাস

স্টাফ রিপোর্টার॥ আজ শোকাবহ আগস্টের ষষ্ঠ দিন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর বাঙালীর ইতিহাসে আগস্ট শোকের মাস হিসেবেই স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। তাই আগস্ট এলেই বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশে শোক এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রকাশ শুরু হয়ে যায়। এ মাসেই ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে বাঙালীর হৃদয়। হারানো বেদনা ফিরে ফিরে আসে। তাই আগস্ট এলে বাঙালীর হৃদয় থেকে ধ্বনিত হয় সুফিয়া কামালের সেই বিখ্যাত উক্তি ‘এই বাংলার আকাশ-বাতাস, সাগর-গিরি ও নদী/ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু, ফিরিয়া আসিতে যদি/হেরিতে এখনও মানবহৃদয়ে তোমার আসন পাতা/এখনও মানুষ স্মরিছে তোমারে, মাতা-পিতা-বোন-ভ্রাতা। অথবা গানে গানে ধ্বনিত হয় ‘যদি রাত পোহালেই শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই, তবে বিশ্ব পেত মহান নেতা, আমরা পেতাম জাতির পিতা। পিতা নেই। রয়েছে তার দেশ। দেশে আজও কোটি কোটি প্রাণে বাজে বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বান। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। ’৭১ সালের ৭ মার্চে সেই বর্জ্র কণ্ঠের আহ্বানেই এসেছিল স্বাধীনতা। বাঙালী জাতি পেয়েছিল মুক্তি। মুক্তির আসল ফসল ঘরে তোলার আগেই নারকীয় হত্যাকা-ের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হলো বঙ্গবন্ধুকে। আবার পরাধীনতা শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার চেষ্টা করা হলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে কি হবে; আজ বাঙালী জাতি তার সেই বর্জ্র কণ্ঠের আহ্বানের মধ্যে মুক্তি খোঁজার চেষ্টা করে চলেছে। বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু আজও উন্নয়নের দর্শনের মূলে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুই। একমাত্র প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া দর্শন। এর ওপর ভিত্তি করে দেশ আজ সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক মন্দার এই বিশ্বে বিশাল জনসংখ্যার একটি বহর নিয়ে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা অনেক দেশের কাছে বিস্ময়ের মতো। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে। অনেক সমস্যার বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে। এসবে মূলে রয়েছে বঙ্গবন্ধুরই গৃহীত পদক্ষেপ। বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু তার হত্যাকা-ে বাঙালী জাতির ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা হয়েছে শোকাবহ-রক্তাক্ত আগস্ট। বীর বাঙালীর ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায়। এই আগস্ট আমাদের চেতনার ধমনিতে নতুন করে সাড়া জাগায়। ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বাঙালী কলঙ্কমুক্ত হলেও আমাদের প্রতিটি শিরা-উপশিরা ও ধমনিতে তীব্র ঘৃণার উদ্রেক করে এ মাস। ইতিহাসে অনেক বিজয়ের কাহিনী লেখা আছে। কিন্তু বিজয়ের সেসব কাহিনী রক্তের স্রোতধারায় মিশেছে আগস্টে এসে। এ মাস নতুন করে ভাবতে শেখায়। এ মাস প্রতিশোধের চেতনায় শানিত করে সবাইকে। কেননা, এ মাসেই আমরা হারিয়েছি ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বাঙালী কালজয়ী মহাপুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ইতিহাসের বাঁক ঘোরানো এক সিংহপুরুষ। বাঙালী জাতির চরিত্র সম্পর্কে তার চেয়ে আর কেউ বেশি জানতেন না। তবুও তিনি জীবনের বিনিময়ে সেই জাতির জন্যই রচনা করেন ইতিহাসের এক অমোঘ অধ্যায়। পৃথিবীতে কোন জাতিই মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। আর স্বাধীনতার জন্য এই স্বল্পতম সময়ে প্রায় ত্রিশ লাখ বাঙালীর আত্মদানের ঘটনাও ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধুর এক তেজোদীপ্ত ভাষণেই উদ্বুদ্ধ গোটা জাতি বহু কাক্সিক্ষত সেই স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বভাবনেতা। কী বাল্যে, কী কৈশোরে বা কী মত্ত যৌবনে; সবখানেই ছিলেন তিনি এক কালজয়ী মহাপুরুষ। বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির ইতিহাসের এক অবিভাজ্য সত্তা। আর সে জন্যই আগস্ট মাসজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করছে জাতির জনকের প্রতি। আগামী ১৫ আগস্ট বাঙালী জাতি আবার বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধুকে।
×