স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বাগমারায় জেএমবি স্টাইলে আব্দুস সালাম (৪০) নামে এক পল্লী চিকিৎসককে তুলে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে তালতলি বাজারে নিজের ওষুধের দোকান থেকে তাকে তুলে নিয়ে গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদে নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে বাগমারা থানা পুলিশ দুপুর ১২টার দিকে ওই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। নির্যাতনের শিকার আব্দুস সালামের বাড়ি ওই ইউনিয়নের কনোপাড়া গ্রামে। স্থানীয়রা জানান, ২০০৪ সালে বাগমারায় জেএমবির শীর্ষ নেতা বাংলাভাই যেভাবে লোকজনকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করত একই কায়দায় পল্লী চিকিৎসককে তুলে নিয়ে নির্যাতন করার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ইব্রাহিম হোসেন নামে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সকাল সোয়া ৯টার দিকে আব্দুস সালাম তার ওষুধের দোকানে ছিলেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে পাঁচ ব্যক্তি তার দোকানে যায়। এদের মধ্যে একজন গ্রাম পুলিশ ছিলেন। মোটরসাইকেল থেকে নেমেই তারা স্থানীয় ইউপি সদস্য আবেদ আলী মোল্লার উপস্থিতিতে দোকানের ভিতর প্রবেশ করে আব্দুস সালামকে পিটিয়ে জখম করে এবং টেনেহিঁচড়ে বের করে। এ সময় দোকানের আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়। পরে আব্দুস সালামকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় তারা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত আব্দুস সালাম বলেন, কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা আমার দোকানের ভিতরে প্রবেশ করে মারপিট শুরু করে। এ সময় তারা দোকানে ভাংচুর চালায় এবং ক্যাশ বাক্স থেকে ১০ হাজার টাকা লুট করে। এরপর তারা আমাকে তুলে নিয়ে যায় গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর সরকারের সামনে ফের নির্যাতন করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে বলে জানান আব্দুস সালাম।
ইউপি সদস্য আবেদ আলী মেম্বার বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রামরামার আরঙ্গবাদ গ্রামের শফিকুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করে। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠক ডাকা হয়। যা নোটিস দিয়ে আব্দুস সালামকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সালিশে উপস্থিত না হওয়ায় চেয়ারম্যান একজন গ্রাম পুলিশসহ ৪/৫ জন লোক পাঠিয়ে সালামকে ডেকে নিয়ে যেতে বলে। তবে সে স্বেচ্চায় যেতে রাজি না হওয়ায় তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেছে। তবে আব্দুস সালামকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন আবেদ আলী। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, ইউনিয়ন আদালতে সালামের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে চারবার নোটিস পাঠানো হয়। তিনি হাজির হন না। এ কারণে চৌকিদারকে দিয়ে তাকে ডাকতে পাঠানো হলে চৌকিদার জালালকেই মারপিট করে সালাম। পরে তাকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। তাকে নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটেনি। পরে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়।
বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে এসআই শাহীনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের গিয়ে আহত অবস্থায় আব্দুস সালামকে উদ্ধার করে। সেখান থেকে পুলিশ তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। পরে পুলিশ সালামের ওষুধের দোকান পরিদর্শন করে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দী নেয়। যাতে সালামের দোকানে ভাংচুর ও লুটপাটের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এ ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: