ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেজিস্ট্রার শাহুল আফজালকে দীর্ঘ মেয়াদে ছুটি ষ দুই সহকারী রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ

শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ দাবিই মেনে নিল ব্র্যাক ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৬ আগস্ট ২০১৭

শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ দাবিই মেনে নিল ব্র্যাক ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে অধিকাংশ দাবিই মেনে নিয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকের ওপর হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মোঃ শাহুল আফজালকে দীর্ঘ মেয়াদে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় অপর দুই অভিযুক্ত সহকারী রেজিস্ট্রার মোঃ মাহিউদ্দিন ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জাভেদ রাসেল পদত্যাগ করেছেন। ঘটনার শিকার শিক্ষক ফারহান উদ্দিন আহমেদেরও অব্যাহতি পত্রও প্রত্যাহার করা হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে ছাত্রীর লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তও শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। চুক্তিতে থাকা আইন বিভাগের শিক্ষক ফারহান উদ্দিন আহমেদের ওপর হামলা ও তাকে চাকরিচ্যুতির নোটিসের জের ধরে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক সপ্তাহের মাথায় শনিবার সন্ধ্যায় এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিকেলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এসব সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। পূর্বঘোষিত সূচী অনুযায়ী আজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে দাবি অনুসারে রেজিস্ট্রারকে চাকরিচ্যুত না করে ছুটিতে পাঠানোয় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আপত্তি তুলেছে। যদিও অধিকাংশ দাবি পূরণ ও কিছু বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করায় আজ থেকে সকলেই ক্লাসে ফিরবেন বলে বলছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যাদের মাঝে এখনও অসন্তোষ আছে তারাও ক্যাম্পাসে ফিরবেন বলেই আশা করছেন বাকি শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের অন্যতম ফারহান রাতে জানিয়েছেন, তারা রবিবার থেকে ক্লাসে যাবেন, পরীক্ষায়ও বসবেন। তবে আমাদের বাকি দাবির বিষয়ে আমাদের চাপ অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও কদিন ধরে বলা হচ্ছিল, দাবির বিষয়টি আমলে নিলে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হলেও কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের রক্ষা করতে উল্টো শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হলে সংকট জটিল আকার ধারণ করে। তবে শেষ পর্যন্ত শনিবার অধিকাংশ দাবিই মেনে নিলে সমস্যার সমাধান হয়। শিক্ষার্থীরা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, রেজিস্ট্রার শাহুল আফজালের অধীনে তারা কোন ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবেন না। এছাড়া শিক্ষক ফারহান উদ্দিন আহমেদকে চাকরিতে পুনর্বহাল ও তাঁকে ‘লাঞ্ছিতকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার করতে হবে। এসব ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে টানা সাত দিন ধরে অচল ছিল প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নতুন এই সিদ্ধান্তের পর অবস্থান জানতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, কর্তৃপক্ষ দেরিতে হলেও পদক্ষেপ নিয়েছে। আন্দোলনকারী ফারহান বলেন, দাবি পূরণ হয়েছে কিছু। তবে রেজিস্ট্রারকে অপসারণ না করে ছুটিতে পাঠানো নিয়ে আমাদের বক্তব্য আছে। আন্দোলনের শুরু কথা তুলে শিক্ষার্থী জানান, চুক্তিতে থাকা শিক্ষক ফারহান উদ্দিন আহমেদকে গত ৩০ জুলাই মানবসম্পদ বিভাগ থেকে চাকরিচ্যুতির নোটিস দেয়া হয়। কিন্তু তিনি তা নিতে অস্বীকৃতি জানালে রেজিস্ট্রার বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা তাঁর আইডি কার্ড নিয়ে নেন এবং তাঁকে লাঞ্ছিত করেন। এরপর থেকেই মহাখালীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। যিনি মারধরের শিকার হয়েছিলেন সেই শিক্ষক ফারহান উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমার শিক্ষানবিশ সময় শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে স্থায়ী হওয়ার জন্য আবেদন করি। সেই আবেদন নাকচ করে আমাকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়। আমি ভিসির কাছে ব্যাখ্যা চাইছি। তবে কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে আমার আইডি কার্ড জমা দিতে বলা হয়েছিল। আইডি কার্ড জমা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রেজিস্ট্রার তার দুই সহযোগীকে আমার আইডি ছিনিয়ে নিতে বলে। তখন আমাকে মারধর করা হয়। তারা আইনকানুন না মেনে পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। আমি এর বিচার দাবি করেছি। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ শাহুল আফজাল, সহকারী রেজিস্ট্রার মাহিউদ্দিন এবং অফিস অব কো-কারিকুলাম এ্যাক্টিভিটিজের সিনিয়র অফিসার জাভেদ রাসেলকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত। নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা, যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তদন্ত করা। তদন্ত চলাকালে ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব ধরনের এ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা দাবির মধ্যে আরও ছিল- শিক্ষার্থীদের হয়রানির জন্য ভিসির প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা, আলোচনার ভিত্তিতে নতুন করে পরীক্ষার সময়সূচী নির্ধারণ করা।
×