ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এসব স্থাপনার মধ্যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিপণি বিতান, আবাসিক ;###;হোটেল ও ব্যাংক রয়েছে

মামলা হচ্ছে ॥ অগ্নিঝুঁকিতে কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৬ আগস্ট ২০১৭

মামলা হচ্ছে ॥ অগ্নিঝুঁকিতে কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানীতে অবস্থিত অগ্নিঝুঁকি রয়েছে এমন কয়েক হাজার ‘ঝুঁকিপূর্র্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ স্থাপনার বিরুদ্ধে অতি দ্রুত অগ্নি আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরপর দুই দফা নোটিস দিলেও কোন কাজ করেনি তালিকাভুক্ত এসব প্রতিষ্ঠান। ফলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে অগ্নি আইন লঙ্ঘনকারীদের আর কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ। কোনরকম অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা নেই ও অগ্নি আইন লঙ্ঘন করে তৈরি করা এসব স্থাপনাকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংস্থাটির করা জরিপ শেষে চিহ্নিত করা হয়। এসব স্থাপনার মধ্যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী বিভিন্ন হাসপাতাল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিপণী বিতান, আবাসিক হোটেল, ক্লিনিক, বেসরকারী হাসপাতাল ও ব্যাংক রয়েছে। অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে কারণ চিহ্নিত করে দুই দফা নোটিস প্রদানের পরও এসব প্রতিষ্ঠান কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পরপর দুই দফা নোটিস দেয়ার পরও আইন লঙ্ঘন করে নিয়মিত কার্য সম্পাদন করে যাচ্ছেন ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখানোর কারণে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় এসব প্রতিষ্ঠানকে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রথম দফা নোটিস পাঠানো হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে। এরপর একমাস সময় দিয়ে এপ্রিল-মে মাসে পুনরায় ওইসব প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে গিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির কোন লক্ষণ দেখতে পায়নি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। নোটিস পাওয়ার পর সকল প্রতিষ্ঠানই গা-ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে। পরে সংস্থাটি ওইসব প্রতিষ্ঠানকে দ্বিতীয় দফা নোটিস প্রদান করে। নোটিসে সক্ষমতা বৃদ্ধি না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু এরপরও নোটিসপ্রাপ্ত কোন প্রতিষ্ঠানই সংশ্লিষ্ট দফতরকে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এ সংক্রান্ত কোন চিঠির উত্তর পর্যন্ত প্রদান করেনি। এসব প্রতিষ্ঠানে অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধির নোটিস পাঠানোর পর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত চার মাসে ঢাকায় কমপক্ষে ৩০টি ছোট বড় অগ্নিকা- ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় থাকা উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলসহ পাশাপাশি তিনটি ভবনে গত ৩ জুলাই অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ হোটেলটিকে প্রথম দফায় গত মার্চ মাসেই অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ এতে কোন সাড়া প্রদান করেনি। পরে সক্ষমতা তৈরির জন্য দ্বিতীয় দফা নোটিস প্রদান করে। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ তাতে কোন প্রকার কর্ণপাত পর্যন্ত করেনি। পরে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট টানা ৫ ঘণ্টা চেষ্টার পর এসব ভবনের আগুন পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় দুজন দগ্ধ হয়ে মারা যান ও আহত হন কয়েকজন। এর আগে গত ২ জুলাই লালবাগ এলাকার একটি ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দোকানে আগুন লেগে দোকানমালিক মামুনুর রশিদ, কর্মচারী জাকির ও শামীম, বন্ধু মাসুম, দোকানের ক্রেতা আবুল কাশেম দগ্ধ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে বন্ধু মাসুম ও কর্মচারী জাকির এবং শামীম মারা যান। মূলত কোন প্রকার অগ্নি আইন ও ভবন নির্মাণের নিয়ম না মেনে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় প্রতিনিয়তই অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। ফায়ার সার্ভিস আইন অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি আইন লঙ্ঘন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে তাকে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে অপরাধী প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী কমপক্ষে উক্ত প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে আইন অমান্যকারীকে তিন বছরের জেল ও তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াফত করার বিধান রয়েছে। এছাড়া সম্পত্তি বাজেয়াফত করার সময় বা সংস্থাটির কোন কাজে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাধা প্রদান করলে তাকে ছয় মাসের কারাদ- প্রদান করা হবে। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনাকারীদের ক্ষেত্রেও একই আইন প্রযোজ্য হবে। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গুলশানের মার্কেটে আগুন লাগার পর ফেব্রুয়ারি মাসে দুই সিটি কর্পোরেশন ও আশপাশের জনবহুল এলাকায় অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা যাচাই করতে মাঠে নামে ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। এ সময় নিয়ম ভেঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন এমন সকল প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে সংস্থাটি। সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৮৮ থেকে কোন কোন ক্যাটাগরিতে ৯৮ ভাগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। এ তালিকায় কিছু স্থাপনাকে ঝুঁকিপূর্ণ ও কিছু স্থাপনাকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত করা হয়। এরপর অগ্নি আইন মানতে সংস্থাটি কর্তৃক এসব প্রতিষ্ঠানে অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে একমাস করে সময় দিয়ে মোট দুই দফা নোটিস প্রদান করা হয়। কিন্তু নোটিস পাওয়ার পর কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানই কোন সাড়া দেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিতে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অগ্নি আইনে মামলা করতে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকা-ের পর ঢাকাকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে ফায়ার সার্ভিস মহানগরীর সব ধরনের স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয়। অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা রয়েছে কি না তা জানতে পরিদর্শনের মধ্যে মাটির নিচের জলাধারের ধারণক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, ভবন বা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, ধোঁয়া ও তাপ শনাক্তকরণ যন্ত্রের উপস্থিতি রয়েছে কি না, ভবনের মেঝের আয়তন, জরুরী বহির্গমন সিঁড়ি, প্রয়োজনীয় লিফট ইত্যাদি বিবেচনায় নেয়া হয়। তালিকাযুক্ত স্থাপনাগুলোর মধ্যে এসব সমস্যা থাকায় যে কোন সময় অগ্নিকা-ের কারণে জীবনহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘সন্তোষজনক’ বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মতামত দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ঢাকার প্রায় সব হাসপাতাল, আবাসিক হোটেল, বিপণিবিতান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়। এ সময় তালিকায় থাকা রাজধানীর মোট ৯শ’ ৯৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ৮শ’ ৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ৯৪টিকে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে। শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই। ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় রয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজি প্রেস উচ্চ বিদ্যালয়, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, মাস্টার মাইন্ড স্কুল, মাইলস্টোন কলেজ, তেজগাঁও আদর্শ স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ইস্পাহানী বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়, সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলসহ নামীদামী অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে মোট ৪শ’ ৩৩টি হাসপাতালের মধ্যে ১শ’ ৭৪ টিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ২শ’ ৪৮টি হাসপাতালকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। তালিকা অনুযায়ী শতকরা ৯৭ ভাগ হাসপাতালেরই অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই বলে জানা গেছে। অগ্নিঝুঁকি বিচারে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে শমরিতা হাসপাতাল, এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার-২, ক্রিসেন্ট গ্যাস্ট্রোলিভার এ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, ধানম-ি জেনারেল এ্যান্ড কিডনি হাসপাতাল, প্যানোরমা হসপিটাল, ধানম-ি মেডি এইড জেনারেল হাসপাতাল, মেরিস্টোপ বাংলাদেশসহ বেশকিছু স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিস ঢাকার ৩শ’ ২৬টি আবাসিক হোটেল পরিদর্শন করে ২শ’ ৪৭টিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ৭০টি আবাসিক হোটেল। তালিকা অনুযায়ী ঢাকার ৯৭ ভাগ হোটেলই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় পান্থপথের হোটেল নিউ ক্যাপিটাল, গ্রীন রোডের হোটেল গ্রীন প্যালেস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সম্রাট, হোটেল গ্রীন ওয়ে ইন্টারন্যাশনাল, শ্যামলীর হোটেল ক্যাটলিনা ইন, অনন্যা আবাসিক হোটেল, শ্যামলী আবাসিক হোটেলের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। সবচেয়ে সমস্যাগ্রস্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে বিপণীবিতান। ফায়ার সার্ভিসের মতে, ঢাকার ১ হাজার ১শ’ ২৬টি বিপণিবিতানের মধ্যে মাত্র ৪৬টির অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা রয়েছে। হিসেব অনুযায়ী ৯৬ ভাগ বিপণিবিতানেরই অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা নেই। ফায়ার সার্ভিস ঢাকায় সরকারী- বেসরকারী ব্যাংকগুলোর ৬শ’ ৯২টি শাখা পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ ৬শ’ ৪৯টিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। আর অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে ১শ’ ৭৩টি ব্যাংক শাখা। এ হিসাবে ঢাকায় ব্যাংক কার্যালয়ের মধ্যে ৯৪ শতাংশেরই অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতে প্রথমবারের মতো গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুই সিটি কর্পোরেশন ও আশপাশের জনবহুল এলাকায় অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা যাচাই করতে মাঠে নামে ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। ঢাকাকে ৪ ভাগে ভাগ করে করা তালিকায় অগ্নি আইন ভঙ্গ করে ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন এমন সকল প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করা হয়। তালিকায় অগ্নিঝুঁকি রয়েছে এমন কয়েক হাজার ‘ঝুঁকিপূর্র্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে ব্যাংক বীমা, সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিক, বেসরকারী স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিপণীবিতানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা তৈরির জন্য গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা পরপর দুই দফা নোটিস দিয়েছি। কিন্তু কোন নোটিসকেই এসব প্রতিষ্ঠান কোন প্রকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ সমাজের অত্যন্ত প্রভাবশালী ও নেতৃস্থানীয়। এমনকি কোন প্রকার সক্ষমতা তৈরি করে আমাদের রিপোর্ট পর্যন্ত করেনি তালিকাভুক্ত এসব প্রতিষ্ঠান। তাই ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, অগ্নি আইন লঙ্ঘনকারীদের আর কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। আমরা এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা পরিচালনাকারী ও শিক্ষা গ্রহণকারী ছাত্রছাত্রী বা সেবা প্রদান ও গ্রহণকারী নাগরিকদের জীবন বাঁচাতে এবং কোন প্রকার অগ্নি আইন যাতে লঙ্ঘন না হয় তার জন্য কাজ করতে দায়বদ্ধ। নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ও নিরাপদ জীবনের জন্য বারবার নোটিস দেয়ার পরও কোন কাজ না হওয়ায় অতি দ্রুত আইন লঙ্ঘনকারী কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি। যে কোন সময় এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে তাদের তালিকাও প্রায় চূড়ান্ত। অগ্নি আইন লঙ্ঘনকারীকে নিয়মানুযায়ী তিন বছরের জেলসহ তার সম্পত্তি বাজেয়াফতের বিধান রয়েছে। মামলার পরপরই অগ্নি আইন অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামা হবে। এমনকি এ কাজে বাধা প্রদানকারীকেও আইনানুযায়ী ৬ মাসের কারাদ- ও জরিমানা করা হবে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনস্বার্থে আইন লঙ্ঘনকারী ও সংশ্লিষ্ট কাউকেই কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। তিনি জননিরাপত্তায় অগ্নি আইন মানতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
×