ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই চীনের সীমিত অভিযান!

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৬ আগস্ট ২০১৭

শীঘ্রই চীনের সীমিত অভিযান!

চীন, ভারত ও ভুটান সীমান্ত সংলগ্ন দোকলাম অঞ্চল থেকে ভারতীয় বাহিনীকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে চীন দু’সপ্তাহের মধ্যে সেখানে সীমিত পর্যায়ের সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে। বেজিংয়ে রাষ্ট্র পরিচালনাধীন এক দৈনিকে এ কথা বলা হয়েছে। খবর এএফপি ও ইনোমিক টাইমসের। ভারতের সিকিম সীমান্তের কাছে ভুটানের এক বিতর্কিত এলাকায় চীনের সড়ক পথ নির্মাণকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুন থেকে সেখানে চীন ও ভারতীয় বাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে আছে। ভুটান এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ভারত তাকে সমর্থন করে বলেছে যে, এই স্পর্শকাতর এলাকায় চীনের সড়ক নির্মাণের একতরফা কার্যক্রম এই এলাকার স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করবে। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর প্রবেশ পথ ও সরবরাহ লাইন হুমকির সম্মুখীন হবে। দু’দেশের মধ্যে সৃষ্ট এই অচলাবস্থার মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, উভয়পক্ষকে প্রথমে সৈন্য প্রত্যাহার করে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। শুক্রবার ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র গোপাল বাগলে বলেন, দোকলাম এলাকা নিয়ে ভুটানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে ভারত। সাংহাই একাডেমির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রিসার্চ ফেলো হু ঝিয়ংয়ের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে বেজিংয়ের গ্লোবাল টাইমস দোকলামে আসন্ন চীনের সামরিক অভিযানের খবর দেয়। এ বিষয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য না করলেও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং গত বৃহস্পতিবার বলেন, ভারত সে এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা ধরনের রসদপত্র মজুদ এবং ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে পনেরো পৃষ্ঠার এক দলিলে এ মানচিত্রসহ সশস্ত্র ভারতীয় সৈন্য ও সাঁজোয়া যানের গতিবিধি আলোকচিত্রসহ প্রকাশ করা হয়। এর পরপরই চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রেন গুকিয়াং সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করে বলেন, কোন দেশেরই চীনা সেনাবাহিনীকে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না এবং বেজিং এ পর্যন্ত যথেষ্ট সংযম প্রদর্শন করেছেÑ তবে তারও একটি সীমারেখা আছে। চীনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মুখপাত্রদের উচ্চারিত প্রায় প্রতিটি শব্দ চলতি সপ্তাহে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সরকারী বার্তা সংস্থা সিনহুয়া, কমিউনিস্ট পার্টি মুখপাত্র পিপলস ডেইলি, চীনা সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া খবরের প্রতিধ্বনি করেছে। শনিবারে প্রকাশিত নিবন্ধে গবেষক হু ঝিয়ং রাষ্ট্র পরিচালিত চ্যানেল সিসিটিভির এক খবরের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিব্বতে সম্প্রতি চীনা বাহিনী তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করে আসল যুদ্ধের মহড়া দিয়েছে। ভারত-চীন সম্পর্ক নিয়ে হু ঝিয়ং বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোকে ভারত চীনের প্রতি অপরিণত নীতি গ্রহণ করেছে। দেশটি চীনের মতো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। এটি এমন একটি এলাকা নিয়ে বিবাদ জিইয়ে রাখতে চাচ্ছেÑ যে এলাকাটি আসলে দর কষাকষির বিষয়ই নয়। চীন ও ভারতের মধ্যে আসলেই যুদ্ধ শুরু হবে কীনা এ ব্যাপারে অন্য একদল বিশ্লেষক ভিন্ন ধর্মী যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। তারা বলছেন, গরম গরম কথা বা বাগাড়ম্বর সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে আগ্রহী নয়। এই মতবাদের জোরালো সমর্থক ফুডান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেন ডিংলি বলেন, ‘উভয়পক্ষই নিজ নিজ মানসম্মান বাঁচিয়ে যুদ্ধাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। চীন ও ভারত যেন দু’টি অসুখী শিশুর মতো আচরণ করছে।’ ব্রিকস জোটভুক্ত পাঁচটি দেশের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি দেশ হচ্ছে চীন ও ভারত এবং আগামী মাসের প্রথম দিকে চীনের জিয়ামেন শহরে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের পর দু’টি দেশ সমঝোতামূলক অবস্থানে পৌঁছতে পারবে বলে অনেকের বিশ্বাস।
×