ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্তঅজয় দাশগুপ্ত ‌

সিডনির মেলব্যাগ ॥ রাজাকারমুক্ত আওয়ামী লীগ হোক শক্তির উৎস

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৬ আগস্ট ২০১৭

সিডনির মেলব্যাগ ॥ রাজাকারমুক্ত আওয়ামী লীগ হোক শক্তির উৎস

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সত্য বলেন। তিনি রাখঢাক না রেখেই বলেছেন কাছের মানুষ নামে পরিচিত লোকরাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। তারা যারা বাসায় আসত, বাবা ডাকত সে নিমকহারামদের কারণেই নিহত হয়েছিলেন জাতির পিতা। আগস্টকে আমরা বলি শোকের মাস। বাঙালী জাতির জীবনে বাংলাদেশীদের ইতিহাসে এমন কঠিন করুণ দিন আর আসেনি। আজ যখন পেছনে তাকাই পনেরো আগস্টের সেই ভয়াবহ দিনটি মনে করিয়ে দেয় কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল এদেশের ভবিষ্যত। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছিল তারা খুব ভাল জানত তারা কি করতে যাচ্ছে। এবং এর পরিণাম কি হতে পারে। তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকে মেরেই কাজ সারেনি, তাদের সার্থকতার আরও অনেকদিক এখন স্পষ্ট। এখনও আমরা জাতিগত দ্বন্দ্ব আর রাজনৈতিকভাবে রাজাকারী বলয় থেকে বেরুতে পারিনি। এখন তো কোন কোন বিষয় ও সাধারণভাবে দেশের মানুষের মনে বিভেদরেখা ঘুচে গেছে বললেই চলে। অনেকে বলেন, এত বছর পর পাকিস্তান কি করেছিল বা ভারত কেন পাশে দাঁড়িয়েছিল তার হিসাবের প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে সহজ হিসাব ভারত এখন চরম দুশমন আর পাকিস্তান দোস্ত। এই মানসিকতার পেছনে যে ষড়যন্ত্র তার নীলনকশায় নিহত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তীকালে জাতীয় চারনেতা। আজ যখন আবার আরেকটি আগস্ট আমাদের সামনে, যখন আমাদের দেশের সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, তখনও এরা সক্রিয়। রাজনীতির খোলসে বার বার বদলে যাওয়া এদেরকে আমরা চিনি. জানি। তারপরও ভ্রান্তিবিলাস যায় না। তারা রং বদলায় আর আমরা সেই রং সেই খোলসে পা কাটি। রাজনীতিতে চিরশত্রু বা চির মিত্র বলে কোন ধারণা নেই। আজ যে বন্ধু কাল সে দুশমন হতেই পারে। সেটা সব দেশে সব রাজনীতিতেই সত্য। আমাদের দেশে এরশাদ সাহেবকে দেখলেও শিখতে পারি আমরা। তিনি যে কার বন্ধু কার দুশমন নিজেও জানেন না। এমন রাজনৈতিক নেতা বা দল প্রয়োজনে কাছে আসতে পারে আবার প্রয়োজনে তাদের দূরে ঠেলে দিলেও দেয়া যায়। এ নিয়ে হাসি ঠাট্টা চললেও মানুষ এটাকে খেলার অংশ বলে ধরে নেয়। কারণ, এতে লাভ লোকসান দুইই রিলেটিভ। কিন্তু আমরা নিশ্চয়ই আশা করি না ভারতে বিজেপি ও কংগ্রেসের জোট হবে। আমরা এও আশা করি না, পাকিস্তানের নিভু নিভু বামেরা মুসলিম লীগের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করবে। এটা যেদিন হবে সেদিন হয়তো মানুষের ফেরেশতা অথবা শয়তান ছাড়া আর কোন পরিচয় থাকবে না। বাংলাদেশে আমরা সেই কবে থেকে রাজাকারদের আস্ফালন দেখছি। একাত্তরের পর পরাজয়ের পর বিচারে তারা প্রাণ হারাতে পারে সে বাস্তবতা প্রায় চলেই গিয়েছিল। শেখ হাসিনার অকুতোভয় নেতৃত্বে তা হবার পর আমরা নিশ্চয় আওয়ামী লীগের কাছ থেকে তাদের ছানাপোনাদের পুনর্বাসন আশা করি না। এদের মনে অন্তরে চেতনায় এখনও পাকিস্তান বিরাজমান। তার আগে একটা কথা পরিষ্কার করা উচিত কাদের আমরা নব্য রাজাকার বলি। শুধু জন্ম পরিচয়ে রাজাকারের সন্তানদের আমরা রাজাকার বলি না। যে মূর্খটি সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়, পাকিস্তানীরা আমার মা-বোনকে ধর্ষণ করলেও জাতভাই। তাকে আমরা কি বলব? যে মেয়েটি এত সব জানার পরও গালে উল্কি এঁকে আফ্রিদি মেরি মি বলে চিৎকার করে তাকে আমরা কি বলব? যে লোকটি নিশিদিন নৌকার পরাজয় চেয়ে দোয়া করছে, সরকারে আছে বলে আওয়ামী লীগার হবার ভান করছে তাকে আমরা কি নামে ডাকব? একথা বলার দরকার পড়ে না এখন এরাই দেশের সমস্যা। এই দু-মুখো চরিত্রের বাংলাদেশীরা এক পা রাখে নৌকায় আরেক পা পাকিস্তানী জাহাজে। এরা সরকারী দল বলে লীগে ঢুকে পড়বে আর বারোটা বাজাবে এটাই কি ইতিহাসের পাঠ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগস্টের শুরুতে তাঁর ভাষণে বলেছেন বঙ্গবন্ধুকে কারা হত্যা করেছিল। সেই রাজাকারের দল এখন আবারও ঘিরে ধরছে। আমরা নষ্ট হতে জানি তারা জানে না। কারণ তাদের জন্মই নষ্ট রাজনীতিতে। এরা আজ আওয়ামী লীগের জয় বা শাসনামলে হালুয়া রুটির জন্য নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের কারণে এ দলে আসতে চাইছে। এলে কি করবে আমরা সবাই জানি। সে বাস্তবতা নেয়ার সময় এখন আর হাতে নেই। একদিকে খালেদা জিয়ার ষড়যন্ত্র আরেকদিকে দেশব্যাপী শাসনসঙ্কট। এই সঙ্কট যারা তৈরি করছে তারা ত্যাগী বা দলের আসল কর্মী নেতা কি-না সেটাও ভাবার সময় হাজির। মুখে যে যাই বলুক সাধারণে লীগের জনপ্রিয়তা তত নেই। কৌশলে সামাজিক মিডিয়ায় ও নানাভাবে সরকারকে দলকে অপমান করা হচ্ছে। তাদের দায়ী করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে। যৌক্তিক অযৌক্তিক সবদিক থেকে এই আক্রমণ বা আগ্রাসনের জবাব দেবার উপায় একটি। আদর্শ ছাড়া এর কোন উত্তর হতে পারে না। দেশের রাজনীতিতে পনেরো আগস্ট আর একুশে আগস্টের দূরত্ব খুব বেশি না একটি আরেকটিকে প্রভাবিত করে না? কে বোঝে না এ দুয়ের উদ্দেশ্য আর কি তারা চেয়েছিল সৌভাগ্য তারা একুশে আগস্ট সফল হতে পারেনি। তাই বলে তারা কি হাল ছেড়ে দিয়েছে? আজ যারা আওয়ামী লীগে আসার জন্য পা বাড়িয়ে আছে এরাই জিয়া মোশতাকের বংশধর। তাছাড়া এতদিন ধরে এতকাল ধরে পথে মাঠে যারা সংগ্রাম করল তারা আজ তুচ্ছ বা পর হবে কোন কারণে? এই জটিল সমীকরণের ভেতর দিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে আবার এক আগস্ট। এই মাসে বাঙালী যখন শোককে শক্তিতে পরিণত করার কথা তখন দলের সম্পাদক বা নেতারা যদি বলেন রাজাকারের সন্তানরা আওয়ামী লীগ করতে পারবে, আমরা শঙ্কিত হই। পারবে না বলি না, তবে পারার আগে কিছু কাজ আছে করার। পিতা বা নানা বা চাচার রাজাকারীর জন্য মাফ চাইতে হবে। বলতে হবে তারা এর দায় নেবেন না। বলতে হবে তারা জিয়াউর রহমান ও বিএনপি-জামায়াতকে একচোখে দেখেন কিনা। এর বাইরে আপনি আমাদের মতো দর্শক থাকতে পারেন লীগের নেতা হতে পারেন না। এই আগস্টে আমরা শেখ হাসিনার মঙ্গল কামনায় এবং দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে মোশতাক ও রাজাকার মুক্ত দেখতে চাই। নেতারা কি জনগণ ও লীগের শুভানুধ্যায়ীদের কথা শুনবেন আদৌ? [email protected]
×