ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে শিল্পীদের ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৬ আগস্ট ২০১৭

রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে শিল্পীদের ভাবনা

‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্ত কমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান’-কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুকে বন্দনা করেছেন এভাবেই। তিনি প্রয়াত হওয়ার আগেই প্রয়াণকে উপলব্ধি করেছেন নানাভাবে। তার কাব্যে মৃত্যুর প্রতিধ্বনি শোনাগেছে বারবার। প্রতিবারই মৃত্যুকে জয়ের এক আরাধনাপ্রতিম প্রয়াস ছিল তার। আজ রবিবার এই মহামানবের ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ দিনটিকে ঘিরে রবীন্দ্রগানে নিবেদিতদের ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন গৌতম পা-ে। পাপিয়া সারোয়ার : রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবসকে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। তবুও তাঁর জন্ম ও মৃত্যু দিবসে আমরা যেন নতুন করে নিজেকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রেরণার সুযোগ পাই। এভাবেই চলছে, চলবে। নতুন-পুরনো, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সবাইকে রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা সব সৃষ্টিই প্রেরণা যুগিয়ে যাবে আনাদিকাল। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম দুরাবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথকে আরও সুগম করে তোলে। তাঁর গান আমাদের শান্তি দিতে পারে। শুধু গান নয়, তার কবিতা ও বিভিন্ন লেখা সব সময়ই আমাদের পথ চলার সাথী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ মা হারান, এরপর তাঁর বৌদি, পরবতীতে সন্তান এ সব কিছুর দু:খ-কষ্টকে জয় করে তিনি লিখেছেন আমৃত্যু। আমরা কিছুটা হলেও তাঁর প্রয়াণ দিবসে এসব থেকে অনুপ্রেরণা পেতে পারি। মিতা হক : রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য-সঙ্গীতের মাধ্যমে সকল দীনতা হীনতার অবসান ঘটিয়ে সুন্দর স্নিগ্ধ শান্তিময় এক পৃথিবীর কামনা করেছেন যা সকলের জন্য মঙ্গলময় এবং সুখকর। আমরা বাঙ্গালীরা ধন্য এবং গর্বিত এ কারণে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো একজন মহামানব বাঙ্গালীর ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। বাঙ্গালীকে বিশ্বের কাছে স্বমহিমায় পরিচিত করানোর দায়িত্ব তিনিই প্রথম নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মের মধ্যে গানই সর্বশ্রেষ্ঠ। একথা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিভিন্ন লেখনীতে তুলে ধরেছেন। তিনি ভারতীয় সঙ্গীতের বিশাল ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতায় বাঙ্গালীর চিরায়ত সঙ্গীত রচনা করে গেছেন। সমসাময়িক সঙ্কটময় জীবনের বিপর্যয় কাটিয়ে মানুষের কল্যাণের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা তাঁর গান। সুতরাং রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু নেই। তিনি আমাদের মাঝে ছিলেন, থাকবেন। তপন মাহমুদ: রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ নেই। প্রতিদিনের জীবনে রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক। আজ দেড়শ বছর পেরিয়েও রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে বিশেষ করে বাঙ্গালীদের কাছে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। প্রতিক্ষণে তিনি আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছেন। তবে তাঁর জন্মদিন ও মৃত্যু দিনকে কেন্দ্র করে যেহেতু অনেক কিছুই আবর্তিত হয়ে থাকে তাই এদিনেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সকল সচেতন বাঙ্গালী সমাজ। বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করে বিশ্বে পরিচিতি ঘটানোর মতো যে দুরূহ কাজকে তিনি জয় করেছেন, যতদিন বাঙ্গালী থাকবে ততদিন স্মরণ করবে এই অসাধারণ ব্যক্তিত্বকে। আমাদের হৃদয়ের অস্তিত্বে রবীন্দ্রনাথ সবসময় মিশে আছেন, এ উপলব্ধি কেউ বুঝতে পারে কেউ পারে না। বুলবুল ইসলাম: আমার কাছে রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবস গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, তাঁর সৃষ্টিকর্ম এ সবকেই আমি বেশি গুরুত্ব দেই। রবীন্দ্রনাথের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পরিবারের অনেকের অকাল মৃত্যু তাঁকে সয়ে যেতে হয়েছিল। সেই কষ্টটাকে তিনি সারাজীবন জয় করে নিয়েছিলেন। মৃত্যু বেদনা তাঁকে কখনও গ্রাস করতে পারেনি। এ সবের মাঝে তিনি জীবনের আনন্দ ও সৃষ্টি চালিয়ে গেছেন। আমাদের উচিত তাঁর এই মহানুভবতাকে স্মরণ করা। সব কিছুর মাঝে আমাদের এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। অণিমা রায় : রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণবার্ষিকীকে আমি শোক দিবস হিসেবে ভাবি না। অন্য সাধারণ মানুষের পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া আর রবীন্দ্রনাথের চলে যাওয়া এক নয়। কেননা তিনি তো আমাদের পূর্ণ করে রেখে গেছেন। তাঁর সৃষ্টিকর্মের মধ্যে তিনি সব সময় আমাদের মাঝে আছেন। তাঁর প্রয়াণ দিবসে আমরা সাধারণ শোকগাঁথা মিশ্রিত গানই বেশি গেয়ে থাকি। রবীন্দ্রনাথ যতই মৃত্যুকে জয় করার কথা বলুক না কেন সাধারণ মানুষ কিন্তু তা পারছি না। এ কারণেই এমন করা হয়। তবে রবীন্দ্রনাথ আছেন, থাকবেন। নিজেদের নতুন করে উপলব্ধি করার জন্যই দিনটির তাৎপর্য আছে।
×