ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইজারা নিয়ে এবারও সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৬ আগস্ট ২০১৭

ইজারা নিয়ে এবারও সিন্ডিকেট

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আর মাত্র মাস খানেকের মধ্যে পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির পশুর বাজার ইজারা দিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) আগে থেকেই তৎপর হয়ে গেল মাস থেকে দরপত্র আহ্বান করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এ পশুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সৃষ্টি হয়েছে সিন্ডিকেট। ফলে চসিক মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে বলে নিশ্চিত ধারণা পাওয়া গেছে। গত বুধবার চসিক পরিচালনাধীন কোরবানির ৬টি পশুর হাট নিয়ে দরপত্র জমা পড়েছে ৪টির ক্ষেত্রে। অপর দুটিতে কোন দরপত্রই পড়েনি। এছাড়া যে চারটিতে দরপত্র জমা হয়েছে সেগুলোতে দর উঠেছে ৩ কোটি ৬১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৬ টাকা। এ চার পশু বাজারের মধ্যে সর্বোচ্চ অঙ্কের দর পড়েছে বাকলিয়া নুর নগর হাউজিংস্থ পশু বাজার নিয়ে। এছাড়া যে দুটি জন্য কোন দরপত্র জমা পড়েনি সেগুলো হচ্ছে সল্টগোলা রেলক্রসিংসংলগ্ন বাজার ও কমলহাট মহাজন হাট পশু বাজার। এসব পশু বাজার অস্থায়ী হলেও চসিক প্রতিবছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় করে থাকে। আর এ পশু বাজারগুলো নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট চক্র প্রতিবছরই তৎপর থাকে। এবারও ঘটেছে তাই। ফলে দরপত্র ক্রেতাদের দুই-তৃতীয়াংশ দর জমা দেয়নি। যারা দিয়েছে তারা সিন্ডিকেট গঠন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চসিকের রাজস্ব বিভাগ জানিয়েছে, সিন্ডিকেটের বিষয়টি তাদের অজানা। তবে যে দুটির জন্য কোন দরপত্র পড়েনি সে ক্ষেত্রে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হবে। পশুর বাজার দরপত্রের মাধ্যমে নিতে আগ্রহী এমন কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের ঘটনা প্রতিবছর ঘটছে। কিন্তু বিহীত কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না। সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দরপত্র জমা পড়লে এতে চসিক তথা সরকারের কোষাগারে বড় অঙ্কের মুনাফা জমা হতো। কিন্তু প্রভাবশালীদের দ্বারা গঠিত সিন্ডিকেট চক্র তা হতে দিচ্ছে না। চসিকের রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এরা নিজেদের কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণের মতো নিজেদের পকেটকে সমৃদ্ধ করছে। ফলে প্রকারান্তরে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে কোরবানিদাতাদের সংখ্যা দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি। আবার এর মধ্যে এককভাবে কোরবানিদাতার সংখ্যা আরও বেশি। ফলে চট্টগ্রামে বিপুল পরিমাণ গরু, ছাগল, উট, ভেড়া জাতীয় পশু বিক্রি হয়ে থাকে। তা আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। পশু বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিবছর যে সিন্ডিকেট তৎপরতা লক্ষণীয় তাতে ক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এমনও দেখা গেছে মাঝপথে পশুবোঝাই যানবাহন আটকে রেখে বাজার দর বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের ঘটনা তো রয়েছে। তবে তা কখনও বেশি, কখনও কম। ঈদুল আজহা এলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বাড়ানো হয়। কিন্তু এতে কখনও পরিপূর্ণ সফলতা এসেছে বলে কোন রেকর্ড নেই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচালনায় স্থায়ী ও অস্থায়ী যেসব পশু বেচাকেনার হাট রয়েছে সর্বত্রই সিন্ডিকেট সদস্যদের প্রভাব বিদ্যমান থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সিন্ডিকেট সদস্যদের দৌরাত্ম্য না থাকলে দরপত্রের বিপরীতে চসিকের রাজস্ব আহরণ যেমন সমৃদ্ধ হতো, তেমনি পশুর ক্রেতা-বিক্রেতারাও নির্বিঘেœ কোরবানির পশু নিয়ে কর্মকা- চালিয়ে যেতে পারত। এ ক্ষেত্রে দাবি উঠেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থার মধ্যে যে সমন্বয়ের বক্তব্য দেয়া হয় তা নামমাত্র। বাস্তবে এর লেশমাত্র থাকে না। ফলে সিন্ডিকেট সদস্যদের দৌরাত্ম্যও থামছে না।
×