ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লঙ্কা-বাংলার রাইট আবেদন বাতিলে সঠিক নিয়ম মানা হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৬ আগস্ট ২০১৭

লঙ্কা-বাংলার রাইট আবেদন বাতিলে সঠিক নিয়ম মানা হয়নি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্সের রাইট শেয়ার আবেদন বাতিলে সঠিক নিয়ম পরিপালন করা হয়নি। কোম্পানিটির রাইট আবেদন বাতিল হওয়ার পেছনে একজন পরিচালকের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার না থাকায় বিষয়টি বিবেচনা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনোনীত পরিচালক মির্জা এজাজ আহমেদের ২ শতাংশের কম শেয়ার ধারণ নিয়েই লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্স ২০১২ সালে রাইট শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন পেয়েছিল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২০১১ সালে জারিকৃত শেয়ার ধারণসংক্রান্ত নোটিফিকেশনটি কোন বাধা হয়নি। তবে ২০১৭ সালে এসে রাইট শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে কোম্পানিটিকে। এক্ষেত্রে লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্স বা ইস্যু ম্যানেজার এএফসি ক্যাপিটালের কেউ শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির রাইট শেয়ার প্রস্তাব নাকচের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চান না। জানা গেছে, লঙ্কা-বাংলার অন্যতম পরিচালক মির্জা এজাজ আহমেদ, যিনি কোম্পানিটির এসএসসি হোল্ডিংস লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক। তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান (এসএসসি হোল্ডিংস) দীর্ঘদিন ধরে লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্সের ১.০৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। এতে শেয়ার ধারণসংক্রান্ত ২০১১ সালের ২২ নবেম্বর বিএসইসির জারিকৃত নোটিফিকেশনের ‘ডি’ ধারা পরিপালন না করার কারণ দেখিয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্সের রাইট শেয়ার প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে মির্জা এজাজ আহমেদের একই পরিমাণ শেয়ার ধারণ নিয়ে ২০১২ সালে লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্স রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন পায়। এছাড়া তিনি ওই সময় থেকে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জানা গেছে, ২০১১ সালের ২২ নবেম্বর জারিকৃত বিএসইসির নোটিফিকেশন নং এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০৯-১৯৩/১১৯/এডমিন/৩৪-এর ‘এ’ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রত্যেক তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে মোট পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। অন্যথায় কোম্পানি রাইট শেয়ার ও পুনঃপ্রস্তাবের (আরপিও) মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে পারবে না বলে ‘সি’ ধারায় বলা হয়েছে। তবে লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্সের উদ্যোক্তা/পরিচালকদের কাছে সম্মিলিতভাবে ৩৪.৬৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। অপরদিকে একই নোটিফিকেশনের ‘ডি’ ধারায় বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত) মোট পরিশোধিত মূলধনের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। অন্যথায় পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা হারাবে। একই নোটিফিকেশনকে কেন্দ্র করে ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর বিএসইসি আরেকটি নোটিফিকেশন জারি করে। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক ব্যতীত অন্য পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে বলা হয়েছে। এ হিসাবে লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্সের মনোনীত পরিচালক মির্জা এজাজ আহমেদের জন্য ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক নয়। বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্সের একজন পরিচালক ২ শতাংশের কম শেয়ার ধারণ করায় শেয়ার ধারণসংক্রান্ত নোটিফিকেশনের ‘ডি’ ধারায় কোম্পানিটির রাইট শেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কিন্তু এ ধারায় রাইট শেয়ার নিয়ে কিছু বলা হয়নি- এমন প্রশ্নে জানান, কমিশন এটাকেই রাইট শেয়ার ইস্যুর জন্য বিবেচ্য বলে মনে করেছে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্সের রাইট শেয়ার প্রস্তাব নাকচের অর্ডারটি দেখিনি। না দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না। এদিকে শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে রাইট শেয়ার ইস্যুর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্সের শেয়ারে চাহিদার সৃষ্টি হয়। গত বছরের ২৬ অক্টোবর রাইট শেয়ার ঘোষণার সময় কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ২৭.৭ টাকা, যা চলতি বছরের ৩ আগস্ট লেনদেন শেষে ৫৭ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিএসইসি গত ১ আগস্ট লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্স কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে রাইট শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব নাকচের বিষয়টি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, কোম্পানিটি দুটি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে একটি রাইট শেয়ার ছাড়ার জন্য গত ৩ জানুয়ারি বিএসইসিতে আবেদন করেছিল। এক্ষেত্রে প্রতিটি শেয়ার শুধুমাত্র অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে ইস্যু করতে চেয়েছিল।
×