ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাজ নেই ঢাকা মশক নিবারণী দফতরের

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৫ আগস্ট ২০১৭

কাজ নেই ঢাকা মশক নিবারণী দফতরের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর লালবাগের ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কাছেই ব্যস্ত সড়কের পাশে একটি অফিসের দোতলা ভবন। ১০ নম্বর ঢাকেশ্বরী রোডের এ ভবনটিতে মানুষের যাতায়াত নেই বললেই চলে। প্রবেশের গেটটিও বেশিরভাগ সময় থাকে বন্ধ। যদিও এ অফিসের অধীনে কাজ করেন ২৯১ কর্মী। অফিসটির নাম ‘ঢাকা মশক নিবারণী দফতর’। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ দফতরের জন্ম ১৯৪৮ সালে। সে সময়ে দফতরটি ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। ঢাকা মশক নিবারণী দফতরের দোতলা ভবনটি নির্মিত হয়েছে ২০১০ সালে। এর আগ পর্যন্ত টিনশেড অফিস ছিল বলে জানান দফতরের কেশিয়ার জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘দফতরটি অনেক পুরনো। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি দোচালা টিনের ঘর ছিল। ২০১০ সালে পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়।’ মশক নিবারণী দফতরের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে চোখে পড়ে প্রচুর খালি ড্রাম। এসব ড্রামে মশা মারার ওষুধ থাকে বলে জানালেন কেশিয়ার জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মশা মারার জন্য যে ওষুধ কেনে, সেগুলো এখানে মজুদ রাখা হয়। ওষুধের ব্যবহার শেষে ড্রামগুলোও এখানে রাখা হয়। তারাই পরে খালি ড্রামগুলো সরিয়ে নেয়।’ মশক নিবারণী দফতর নাম হলেও এ অফিসের লোকজন নিজেরা এখন আর মশা নিবারণের কাজ করেন না। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে মশা নিবারণের কাজ করেন। এমনকি মশা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটির নেই কোন গবেষণা কার্যকর্ম, নেই মশা মারার কোন যন্ত্র। দফতরটির বেশিরভাগ কর্মীই কাজ করেন দুই সিটি কর্পোরেশনের অধীনে। জানা গেছে, ১৯৪৮ সালে যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মশক নিবারণী দফতরটি প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এ প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদ ছিল সহকারী পরিচালক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন চিকিৎসক এ পদে দায়িত্ব পালন করতেন। ১৯৮০ সালের দিকে দফতরটিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়া হয়। বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা দফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কোন কাজ না থাকায় মশক নিবারণী দফতরে তার জন্য কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও তিনি বেশিরভাগ সময় মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন। এখন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সরজ কুমার নাথ দফতরটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মশক নিবারণী দফতর সূত্রে জানা গেছে, এ অফিসের জনবল কাঠামো অনুসারে ৩৯৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা। তবে বর্তমানে প্রায় ১০৫টি পদ শূন্য রয়েছে। দফতরের ২৯১ জন কর্মী ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে কাজ করছেন। এ ২৯১ জনের মধ্যে ক্রু আছেন ২৬৭ জন, যারা সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের ওষুধ ছিটানোর স্প্রে মেশিন পরিচালনা করেন। ক্রুদের তদারকির জন্য রয়েছেন ১০ জন সুপারভাইজার। দুই কর্পোরেশনের ১০টি অঞ্চলে কাজ করেন তারা। এছাড়াও রয়েছেন কয়েকজন ইনসেক্ট কালেক্টর (আইসি)। তবে সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কাজ করলেও কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে এ দফতর। বিভিন্ন সময়ে ঢাকা মশক নিবারণী দফতরটি বিলুপ্তির প্রস্তাব উঠেছিল বলে জানান এখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরজ কুমার নাথ। তিনি বলেন, ‘ঢাকা মশক নিবারণী দফতরটি এখন আর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মশা নিবারণ করে না। সিটি কর্পোরেশনের অধীনে আমাদের কর্মীরা কাজ করেন। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই রাজস্ব খাতভুক্ত। দফতরটি বিলুপ্ত হলে তাদের ভবিষত কী হবে, এত কর্মী মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার প্রয়োজন আছে কি-না এসব বিষয় ভাবা হচ্ছে।’ সরজ কুমার নাথ বলেন, ‘এক সময় এখানে মশা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব উঠেছিল। পরে তার আর বাস্তবায়ন হয়নি। এখন সিটি কর্পোরেশনকে আমরা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।’ ভবনে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে
×