ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দার্জিলিংয়ে আন্দোলন ॥ বিশ্ববাজারে চায়ের ঘাটতি

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৫ আগস্ট ২০১৭

দার্জিলিংয়ে আন্দোলন ॥ বিশ্ববাজারে  চায়ের ঘাটতি

হিমালয় পর্বতমালার শান্ত-সমাহিত পাদদেশ দার্জিলিংয়ে প্রচ- অসন্তোষের কারণে অত্যন্ত মানসম্পন্ন চায়ের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ব। কারণ, এ উৎকৃষ্ট চায়ের চাষ হয় এখানেই। দৃশ্যমান পাহাড়ী স্টেশনের এপ্রান্ত ওপ্রাপ্ত জুড়ে কয়েক ডজন বিস্তৃত সবুজ প্রান্তরে রোপণ করা হয় প্রচুর বর্ধনশীল এই চা। জুন-আগস্টে তোলা এ চায়ের বার্ষিক উৎপাদন দাঁড়ায় প্রায় ৮০ লাখ কিলো। এ চায়ের অধিকাংশই বিক্রি করা হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু স্থানীয় গুর্খা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে ৫০ দিন যাবত শোডাউন চলে আসার কারণে চা উৎপাদন ৯০ শতাংশ নেমে এসেছে জুনে। গুর্খারাই চা উৎপাদন শ্রমিকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। দার্জিলিংয়ে অসন্তোষের কারণে পর্যটন শিল্পও অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রধান গুর্খা গ্রুপ চা তোলা বন্ধ করে দিয়েছে এবং চা শিল্প বন্ধ রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। আগাম বলা হচ্ছে যে, চায়ের দাম বাড়তে পারে ২০ শতাংশের বেশি এবং দার্জিলিংয়ে কিছুসংখ্যক চা বাগানের কয়েক বছর লেগে যাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে। আম্বিত্তক চা বাগানের পরিচালক সঞ্জয় মিত্তাল এএফপিকে বলেছেন, এ বছরের ফলন শেষ। এ অচলাবস্থার নিরসন হলে আগামী বছর আমাদের অবস্থানে ফিরতে পারব, আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু সিলিগুড়ি টি ট্রেডার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অংকিৎ লোচান বলেন, ধর্মঘট আরও কয়েক মাস চললে প্রায় ৫০ শতাংশ চা বাগান বন্ধ হয়ে যাবে অন্তত দুই বা তিন বছরের জন্য। সরকারী চা শিল্প সংস্থা টি বোর্ড ইন্ডিয়া বলেছে, জুনে মাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার কিলোগ্রাম চা পাওয়া গেছে। গত বছরে এ মাসটিতে উৎপাদন ছিল ১৩ লাখ কিলোর বেশি। ব্রিটিশ কর্মকর্তা আর্থার ক্যাম্বেল ১৮৪১সালে দার্জিলিংয়ে চা উৎপাদনের সূচনা করেন এবং বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন শুরু হয় ১৮৫০-এর দশকে। এ চাই হচ্ছে একমাত্র ভারতীয় ব্র্যান্ড যা আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত। এর মানে এ এলাকায় উৎপাদিত চাকেই দার্জিলিং নামে আখ্যায়িত করা যায়। জুনের প্রথম দিক থেকে চলে আসা সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে এবং চলে গেছেন হাজার হাজার পর্যটক। নিহত হয়েছে ৩জন। গুর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম) পশ্চিমবঙ্গে একটি গুর্খাল্যান্ড প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে প্রথম সারিতে রয়েছে কয়েক দশক ধরে। তাদের কথা হচ্ছে, বাইরের বাংলাভাষী লোকেরা তাদের সম্পদ শোষণ করছে এবং তাদের সংস্কৃতি ও ভাষা চাপিয়ে দিয়েছে। গুর্খাদের পৃথক বাসভূমি প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো শুরু হয় ১৯শতকে। ১৯৮০ সালে অসন্তোষে মারা যায় ১ হাজার ২শ’ লোক। লোচাল বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমরা চীন, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের কাছে এ চায়ের বাজার হারাতে পারি।
×