ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদক প্রতিরোধে-

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৫ আগস্ট ২০১৭

মাদক প্রতিরোধে-

মাদকের বিস্তার কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। এর থাবা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। শুধু শহর নয়, গ্রাম পর্যায়েও ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, প্যাথেডিনসহ নানা নেশাজাতীয় দ্রব্য। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে সমাজ ও পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসছে, বেড়েছে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ। ধনী-দরিদ্র উভয় পরিবারের কিশোর-কিশোরী, বিশেষ করে তরুণ সমাজ বিপথগামী হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবাই। মাদক সংক্রান্ত অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করে থাকে; এই সংক্রান্ত আইন বলবৎ রয়েছে। ফি-বছর মামলা নিষ্পত্তিও হচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। এই সংক্রান্ত অপারেশনাল টিম রয়েছে, কাজ করে চলেছে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরও আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কার্যক্রম চালু রয়েছে। তারপরও কিছুতেই ভাঙ্গা যাচ্ছে না মাদক নামের ভয়াবহ সিন্ডিকেট। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে যে হেনস্থা হতে পারে মাদকসেবী, এই বোধই যেন তাদের মধ্যে নেই। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে ১৪৫টি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে বছরে ৯ হাজার ২২০ জন মাদকসেবীর চিকিৎসা করা হচ্ছে। যেখানে প্রতি বছর দেশে নতুন বহু মাদকসেবী যুক্ত হচ্ছে। দেশের মোট মাদকসেবীর মধ্যে ৪১ ভাগই বেকার এবং ১৪ ভাগ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ ৫৫ ভাগ লোক মাদকের টাকা জোগাতে কারও না কারও ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায়ে মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে মাদকের আগ্রাসন বন্ধে যৌথ বাহিনী গঠন করা হচ্ছে। এই বাহিনী দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চালাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের পর মিয়ানমার সরকারও বাংলাদেশে মরণ নেশা ইয়াবার পাচার ঠেকাতে আন্তরিকতার কথা জানিয়েছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইয়াবা পাচার বন্ধে যৌথভাবে অভিযান চালাবে। ইয়াবা চোরাচালান বন্ধে সীমান্তবর্তী নাফ নদীতে ১৫ দিন পরীক্ষামূলকভাবে মাছ ধরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ওই সময় জেলেদের সরকারীভাবে সহায়তা করা হবে। নানা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মাদক সেবন ও কেনা-বেচায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় তরুণরা। দেশে বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ পথশিশু রয়েছে। এদের অনেকেই কোন না কোনভাবে মাদক সেবনে জড়িত। এসব শিশু-কিশোর টানা মাদকাসক্তের কারণে পার্কে, খামারে, রাস্তাঘাটে, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, মাদকের ভয়াবহতায় নিষ্পাপ শিশু-কিশোররা অপরাধী হয়ে উঠছে। ইয়াবা বন্ধে করণীয় সম্পর্কে মিয়ানমারে চলতি মাসেই অনুষ্ঠিত হতে চলছে তিন দিনব্যাপী এক সভা। এতে যোগ দিচ্ছে কোস্টগার্ড, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। আলোচনার মূলে থাকছে ইয়াবা বন্ধের বিষয়টি। আশা করা যায় ইয়াবা পাচারের মূল রুট বন্ধে এই সভা থেকে বাংলাদেশ আশানুরূপ ফল পাবে। তবে মাদক রোধে পরিবার ও সমাজের অভিভাবকসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোরও দায়িত্ব রয়েছেÑ সেকথা ভুললে চলবে না।
×