ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্ষুধা, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পেরেছে। মানব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে

বিশ্ব পরিসরে সুসম্পর্ক-

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৫ আগস্ট ২০১৭

বিশ্ব পরিসরে সুসম্পর্ক-

নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উঠে দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশকে। বিশ্ব পরিসরে অবস্থান নিতে হলে তাকে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। বিশ্ব মানবের সঙ্গে সংযোগ বাড়িয়ে ঠাঁই নিতে হবে মানবিকতার পরাকাষ্ঠা হিসেবে। সবার সঙ্গে সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ আর পারস্পরিক সম্পর্ককে করে তুলতে হবে দৃঢ়। এই চলার পথে নিকট ও দূর প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রটিকে সমৃদ্ধ ও গতিশীল করে তোলা প্রয়োজন। বাংলাদেশ তার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই জোট নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। কারও সঙ্গে শত্রুতায় বিশ্বাসী নয় বলেই সব সময় সবার প্রতি বাড়িয়ে দিয়ে আসছে বন্ধুত্বের হাত। দেশটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছে স্বাধীনতা। তাই বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রতি তার সহমর্মিতা, সহানুভূতি চিরজাগরূক। স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে আজকের যে বাংলাদেশের পথচলা, তা অতীতে বহুবার বিঘিœত হয়েছে। জোট নিরপেক্ষ অবস্থান হয়েছে নড়বড়ে। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক জান্তা শাসকরা মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বিনষ্ট করে স্বাধীনতা বিরোধিতায় যেসব দেশ পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে মত্ত ছিল। খোদ পাকিস্তানী ভাবধারায় দেশগুলোর প্রতি এমন অবস্থান নেয়, যা আনুগত্যের দৃষ্টান্তে পরিণত হয়। দেশগুলো একাত্তরে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষাকে ধূলিসাত করে দিতে পাকিস্তানীকে সমর্থন শুধু নয়, রসদও যোগান দিয়েছিল। যার পরিণতিতে ত্রিশ লাখ বাঙালী গণহত্যার শিকারে পরিণত হয়েছিল। সেই বাঙালী আজ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে। একুশ শতকে এসে বাংলাদেশ নিম্ন আয় থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পেরেছে। আগামী ক’বছরের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। ক্ষুধা, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পেরেছে। মানব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা বিস্তারের পরিধি বেড়েছে। বিশেষত নারী শিক্ষা ও নারীর উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। সাফল্য বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। এই অগ্রগতির পেছনে বিশ্ব মানবের সহযোগিতা কম নয়। বিশেষ করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক অগ্রগতির সোপানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। সম্প্রতি সাক্ষাতে আসা পাকিস্তানী হাইকমিশনারকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়েও দিয়েছেন, বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কে বিশ্বাসী। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সমস্যা থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতাও চলমান থাকবে এবং যে কোন সমস্যাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। তিনি যে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেছেন তা হচ্ছে দারিদ্র্য। দারিদ্র্যকে এই অঞ্চলের প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, এই অঞ্চলের দেশগুলো থেকে দারিদ্র্যের মূলোৎপাটনে একযোগে কাজ করা সঙ্গত। বাংলাদেশ আলোচনার মাধ্যমে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদিত সীমান্ত সমস্যার সমাধান, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমার সমস্যার সমাধান করেছে। এমনকি মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়ও দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে। পাকিস্তানের শত্রুভাবাপন্ন আচরণের বিপরীতে বাংলাদেশ শত্রুতামূলক অবস্থান নেয়নি। বরং পাকিস্তানের জনগণের প্রতি সহমর্মিতা অব্যাহত রেখেছে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের সূতিকাগার হলেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক অবস্থান নেয়নি। বাংলাদেশ মনে করে, আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়গুলোর সমাধান সম্ভব। শুধু এশিয়া নয়, বাংলাদেশ বিশ্ব পরিসরে তার অবস্থানকে আরও সংহত করতে চায়। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গতিশীল করায় আগ্রহী। এরই আলোকে ঢাকা-মস্কো পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, অস্ট্রিয়া ও কানাডা নতুন করে রুট চালু করতে যাচ্ছে। জোরদার হবে কূটনৈতিক সম্পর্ক। ওসব দেশে বাঙালীর কর্মসংস্থানও বেড়ে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা যত সহজ ও দৃঢ় হবে, নানা ক্ষেত্রে দেশ তত সমৃদ্ধ হবে। বিশ্ব পরিসরে অবস্থান নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা যে প্রয়োজন বাংলাদেশ তা জানে। এই চলা যাতে কোন প্রতিবন্ধকতার সামনে থেমে না যায় সেই কামনা দেশবাসীরও।
×