ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাল নেই হাট-বাজারের নরসুন্দর

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৫ আগস্ট ২০১৭

ভাল নেই হাট-বাজারের নরসুন্দর

কালের পরিবর্তন আর যুগের চাহিদা পাল্টে যাবার কারণে ভাল নেই এক সময়ের জৌলুসধারী নাপিত পেশার শীল গোত্রের মানুষরা। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার গ্রামগঞ্জে ও হাট-বাজারে নেই নাপিতপাড়া কিংবা নাপিত পট্টি। আগের দিনে গ্রামীণ শহরের গলির মোড়ে এবং রাস্তা পাশের ছায়াশীতল গাছতলায় এবং হাট-বাজারে নাপিত পট্টিতে বসে চুল-দাড়ি কাটার কাজ করত নরসুন্দর বা নাপিতরা। সনাতন ধর্মীয়রা তাদের শীল গোত্রীয় বলেও অবহিত করেন। সে সময়টাতে এ পেশায় অন্য কোন গোত্র বা ধর্মের মানুষরা যুক্ত হবার কথা কল্পনাও করত না। আর এখন আধুনিক মানের সেলুন ও জেন্স পার্লার নামের প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা করছে সব ধর্মের মানুষ। এ পেশা বা ব্যবসার ধরন পরিবর্তন তথা হাট-বাজারেও এখন চাকচিক্যময় সেলুন হওয়ায় অনেক স্থানে এদের আর দেখা যায় না। তবে যারা আজও আধুনিক সেলুনের ব্যবস্থা করতে পারেনি তারা রয়ে গেছে রাস্তা পাশের গাছ তলায়। এদের একজন বগুড়ার আদমদীঘি সদর উপজেলার সুদিন গ্রামের শ্রী পবন চন্দ্র। হাটে বাজারের খোলা স্থানে বসে পুরনো দিনের মতো চুল দাড়ি কামানোর প্রথাকে আঁকড়ে ধরে রোজগারের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে চলে কোন রকমে চলে তার ৪ জনের সংসার নামক রাজ্য। পবন চন্দ্র বলেন, আমি অর্থাভাবে হাট-বাজারের গাছতলা থেকে উঠে এসে বড় আয়না ঝুলানো সেলন দোকান নামী-দামী সেভিং সামগ্রীর ব্যবস্থা করতে পারিনি। তাই পেটের তাগিদে আজও গাছের নিচে বসে বাপ-দাদাদের এই পেশা আঁকড়ে ধরে আছি। যুব সম্প্রদায় ও একটু সম্পদশালীরা কেউ আর আমার মতো নাপিতদের কাছে কাঠ বা প্লাস্টিকের টুলে বসে চুল দাড়ি কামাতে আসে না। সেলুনে যেতে যারা টাকার ভয় করে সেই মানুষগুলোই শুধু আসে আমার মতো পবন নাপিতদের কাছে। আলাপচারিতায় প্রবন চন্দ্র বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই ক্ষুর, কেঁচি নিয়ে বাবার হাত ধরে এ পেশায় নেমে পড়েছি। এ পেশায় নিজেকে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে আর অভাবের সংসারের হাল ধরতে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারিনি। এ কাজের মাধ্যমে অনেকের ভাগ্যের অনেক পরিবর্তন হলেও তার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি বলে জানাতে দ্বিধা করলেন না। পবন বলেন, বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি যে, জমিদার আমলে হিন্দু সম্প্রদায়ের শীল গোত্রের সদস্যরাই শুধু নরসুন্দর বা নাপিতের কাজ করত। সে আমলে এ পেশা ছিল রমরমা। তখন তারা হাট বাজারে দল বেঁধে কাজ করত। এলাকা ভেদে বিয়ের দিন বা আগের দিন বর ও কনের বাড়িতে নরসুন্দরদের ডাক পড়ত। সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ ছিল অবধারিত। কিন্ত কালের পরিবর্তনে ও যুগের চাহিদার কারণে নরসুন্দর পেশার এখন ধরন বদলেছে। শহর-বন্দর ও হাট-বাজারের রাস্তার ফুটপাথ ও গাছ তলা থেকে উঠে এসেছে চকচকে দোকানের মধ্যে। নাম হয়েছে হেয়ার ড্রেসার ও জেন্সপার্লার ইত্যাদি। তবে এখনও হাট বাজারে সাবান ও অনামী সস্তা সেভিং ক্রিম এবং ছোট আয়না নিয়ে টুল পেতে চুল-দাড়ি কাটার কাজ করতে দেখা যায়। কিন্তু সংখ্যা একবারে হাতে গোনা। মোঃ হারেজুজ্জামান হারেজ, সান্তাহার থেকে
×