ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুই হাতবিহীন কিশোর জাহিদুলের পথচলা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৫ আগস্ট ২০১৭

দুই হাতবিহীন কিশোর  জাহিদুলের পথচলা

ছয় বছর আগে বিদ্যুতস্পর্শে দুই হাত হারায় কিশোর জাহিদুল ইসলাম (১৪)। তাতে দুঃখ নেই তার, নেই কোনো স্থবিরতা। আপনগতিতে ছুটে চলেছে সে। লক্ষ্য হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে যাওয়ার। সাধ আছে, জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলে যোগ দেয়ার। এমন ইচ্ছার কথা জানায় মণিরামপুরের শ্যামকুড় ইউনিয়নের লাইড়ী মোড় এলাকার মাহাবুর বিশ্বাসের ছেলে জাহিদুল। স্থানীয় ধলিগাতী হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সে। জাহিদুলের মা রাশিদা বেগম জানান, ‘এক মেয়ে ও তিন ছেলের মধ্যে জাহিদুল সবার ছোট। ৬ বছর আগে জাহিদুল যখন ৩য় শ্রেণীর ছাত্র, তখন পাশের একটি দোতলা বাড়ির ছাদে উঠে বিদ্যুতায়িত হয়ে নিচে পড়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মণিরামপুর পরে সদর হাসপাতাল, তারপর খুলনা আড়াইশ’ বেডে ১৩ দিন। অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিন মাস চিকিৎসা করান ছেলেকে। তিন মাসে ৬ বার অপারেশন করে পঁচা হাত কাটতে কাটতে বাম হাতের কনুইয়ের ওপরের কিছু অংশ আর ডান হাতের কনুইয়ের নিচের কিছু অংশ অবশিষ্ট থাকে। তিনমাস পর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এরপর তিন বছর কেটে গেছে জাহিদুলের সুস্থ হতে। তবে, এখনও বর্ষা মৌসুমে তার হাতে পঁচন ধরে বলে জানান রাশিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘জাহিদুলের বাবা স্থানীয় একটি ইটভাটায় চাকরি করেন। এই ছেলে নিজে কিছু করতে পারবে এমনটি ভাবিনি। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছি। পরে ছেলের চঞ্চলতা দেখে মনে সাহস পাই। ভাবলাম, নিজেরা না থাকলে এই ছেলের উপায় কী হবে! তাই ছেলেকে আবার স্কুলে পাঠাই।’ চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হলেও বয়স বেশি হওয়ায় একই বছর ৫ম শ্রেণীতে তুলে দেয়া হয় জাহিদুলকে। সেখান থেকে জিপিএ-৪.৭৫ পেয়ে সে ভর্তি হয় পাশের ধলিগাতী হাই স্কুলে। সেখানেও ভাল করায় স্কুলের সবাই তার প্রতি খুশি। জাহিদুলের চলার পেছনে মায়ের ভূমিকা অনন্য। রাশিদা বেগম বলেন, ‘জামা, প্যান্ট নিজেই পরতে পারে। খাবার মেখে দিলে মুখ দিয়ে নিজে নিজে খায়। জাহিদুলের প্রতিবেশী মামুন, আসাদুজ্জামান ও শরিফুল জানান, দুই হাত না থাকলেও প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে সে স্কুলে যায়। দু’তিনজনকে সাইকেলের পেছনে নিয়ে চালানো তার জন্য কিছুই না। শুধু সাইকেল চালানো নয় ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় গ্রামের আর দশটা ছেলের থেকেও জাহিদুল ভাল খেলে। গ্রামের মাঠে তার সর্বোচ্চ রান ১০৭। সে জানায়, জীবনের বড় শখ ‘ইত্যাদিতে’ যাওয়ার। প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেট খেলায় যোগ দিতে চায় সে। তাছাড়া লেখাপড়া করে বড় চাকরি করারও আশা করে সে। ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার পাল বলেন, ‘লেখাপড়ায় জাহিদুল খুবই ভাল। দুই হাত না থাকলেও তার লেখা খুবই সুন্দর। স্কুলের পরীক্ষায় শিক্ষকরা তাকে অতিরিক্ত সময়ও দেন। তাছাড়া কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজেও সে ভাল। এজন্য শিক্ষকরা তার লেখাপড়ার খরচ ফ্রি করে দিয়েছেন।’ কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেলে জাহিদুলের সাফল্য পাওয়া সহজ হতো বলে মনে করেন তিনি। সাজেদ রহমান, যশোর অফিস থেকে
×