ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের বাসায় বাসায় ফোনে হুমকি

অনশন স্থগিত করলেও ব্র্যাক ভার্সিটি ছাত্রদের বিক্ষোভ সমাবেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৫ আগস্ট ২০১৭

অনশন স্থগিত করলেও ব্র্যাক ভার্সিটি ছাত্রদের বিক্ষোভ সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দাবি পূরণে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ৭২ ঘণ্টার জন্য অনশন কর্মসূচী স্থগিত করলেও শুক্রবার সকাল থেকে ক্যাস্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাতের ঘোষণা অনুসারে অনশন কর্মসূচী স্থগিত রাখা হয়েছে, তবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে শুক্রবার সব পরীক্ষা বর্জন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বাসায় বাসায় ফোন করে ছাত্রত্ব বাতিল, বহিষ্কারসহ নানা হুমকি দিচ্ছে। অভিভাবকদের ফোন করে হুমকি দেয়া হচ্ছে। টানা ৬ দিন ধরে অচল থাকা এ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তি দাবিতে চলা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আগের তিন দফা দাবির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর নিরাপত্তাকর্মীদের হামলার বিচারের দাবি যুক্ত করে শুক্রবার বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। আইন বিভাগের শিক্ষক ফারহান উদ্দিন আহমেদকে বহিষ্কারের আদেশ জারি ও তার উপর হামলাকারী রেজিস্ট্রার শাহুল আফজাল, সহকারী রেজিস্ট্রার মাহি উদ্দিন ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের সিনিয়র অফিসার জাভেদ রাসেলের পদত্যাগের দাবিতে গত রবিবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন সোমবার দিনভর বিক্ষোভ এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাদ আন্দালিবকে অবরুদ্ধ করে রাখার পর মঙ্গলবার সকালেও কয়েকটি ভবন নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে আসা ক্যাম্পাসে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তারা রেজিস্ট্রার শাহুল আফজাল, সহকারী রেজিস্ট্রার মাহি উদ্দিন ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের সিনিয়র অফিসার জাভেদ রাসেলকে বরখাস্তের দাবি জানান। পরে শিক্ষার্থীদের ভবনের বাইরে সড়কে বিক্ষোভ চালাতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের বের করে দিয়েছে নিরাপত্তাকর্মীরা। আন্দোলনের মুখে বুধবারই প্রথম তদন্ত কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করেছিল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসূফ হায়দার, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামসহ পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি পুনর্গঠন করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে থাকা শিক্ষকরা এ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়টিরও শিক্ষক। কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ বুধবারই ঘোষণা করেছিল দু’দিন সকল ক্লাস স্থগিত থাকবে, যদিও পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। তবে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিলেও বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ, অনশনে অচল হয়ে পড়ে শিক্ষা কার্যক্রম। তারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটিতে বিতর্কিত ও আজ্ঞাবহ কমিটি হিসেবে অভিহিত করে এসব কর্মকা- বন্ধ রেখে দাবি পূরণের আহ্বান জানান। আন্দোলনকারীদের একজন কামরুন নাহার ডানা বলেন, শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানিয়ে’ বৃহস্পতিবার রাতে অনশনকারীরা অনশন স্থগিত করেন। কিন্তু তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। অনশন স্থগিত করা হলেও অন্যান্য কর্মসূচী চলছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী রেজিস্ট্রারকে তদন্ত চলাকালে কাজ থেকে অব্যাহতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেয়ায় শুক্রবার তারা ফের অবস্থান কর্মসূচী শুরু করেছেন এবং পরীক্ষা বর্জন করছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছিলাম, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রেজিস্ট্রার তার পদে থাকতে পারবেন না। ভার্সিটি থেকে এখনও কোন পাবলিক এ্যানাউন্সমেন্ট দেয়া হয়নি। আবার ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে ফোন দিয়ে হেনস্থা না করারও কোন পাবলিক এ্যানাউন্সেমেন্টও আসেনি। রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ শাহুল আফজালের অধীনে কোন পরীক্ষা না দেয়ারও ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন ফারহান বলছিলেন, কর্তৃপক্ষ সময় ক্ষেপণ করে অপরাধীদের রক্ষা করার বৃথা চেষ্টা করছে। তারা কথিত কমিটি নিয়ে কাজ করতে চায়। কিন্তু ওই বিতর্কিত আজ্ঞাবহ কমিটির কোন মূূল্য নেই আমাদের কাছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের বাসায় বাসায় ফোন করে হুমকি দেয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে আন্দোলন করলে স্কলারশিপ বাতিল হবে, ছাত্রত্ব থাকবে না ইত্যাদি। শিক্ষার্থীদের দাবি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ শাহুল আফজাল, সহকারী রেজিস্ট্রার মাহি উদ্দিন এবং অফিস অব কো-কারিকুলাম এ্যাক্টিভিটিজের সিনিয়র অফিসার জাভেদ রাসেলকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত। নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা, যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তদন্ত করা। তদন্ত চলাকালে ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা দাবির মধ্যে আরও আছে- শিক্ষার্থীদের হয়রানির জন্য ভিসির প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা, আলোচনার ভিত্তিতে নতুন করে পরীক্ষার সময়সূচী নির্ধারণ করা, আন্দোলনরত শিক্ষার্থী কামরুন নাহার ডানা বলেন, এই রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিসহ সব দাবি মেনে নেয়ার দাবি আমরা আবার জানাচ্ছি। সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিতে হবে। তিনি বলেন, শুক্রবার বা অন্য কোন দিন আমরা পরীক্ষা দিতে বাধা দিচ্ছি না। কারও যদি পরীক্ষার দেয়ার ইচ্ছা থাকে তারা দিতে পারেন। ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষা দিতে যায়নি। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের নাঈব রিদওয়ান বলেন, আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরা কেউই পরীক্ষায় অংশ নেইনি।
×