ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডাক্তারী পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে, দ্রুত বিচারে যাচ্ছে মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৫ আগস্ট ২০১৭

ডাক্তারী পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে, দ্রুত বিচারে যাচ্ছে মামলা

সমুদ্র হক/মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া থেকে ॥ বগুড়ায় তরুণী ধর্ষণ মামলাটি এখন শিশুধর্ষণ মামলায় পরিণত। ডাক্তারী পরীক্ষায় তরুণীর বয়স ১৭ বছরের প্রমাণ মিলেছে। জাতিসংঘের শিশুসনদ অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু ধরা হয়। তবে বাংলাদেশে এ বয়সীদের পরিচিতি হয় কিশোর অথবা বালিকা। যা প্রকারন্তরে শিশু পর্যায়েই পড়ে। শিশুধর্ষণ মামলার সঙ্গে মেয়ে ও মাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতনের পর চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয়া হয়। এখন শিশুধর্ষণ এবং নারী (মা) ও শিশু নির্যাতন মামলা একসঙ্গে চলবে। সূত্র জানায় পুলিশের কাছে ওইদিনের সকল ঘটনার আলামত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং মেডিক্যাল রিপোর্ট এসেছে। যাতে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন খুবই স্বচ্ছ তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে অতিদ্রুত প্রতিবেদন (চার্জশিট) দেয়া সম্ভব হবে। মামলা দুটি দ্রুত বিচার আদালতে (স্পিডি ট্রায়াল) নেয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে দ্রুত বিচার আদালতে নেয়ার প্রক্রিয়া হয়েছে।অভিযুক্তদের রিমান্ডের আবেদন এদিকে পুলিশ এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত তুফান সরকারকে (শ্রমিক লীগের বরখাস্তকৃত নেতা) শুক্রবার বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে তৃতীয়দফায় পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন জানায়। একইদিনে তুফান সরকারের জ্যাঠাস পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিকে প্রথম দফার চারদিনের রিমান্ড শেষে একই আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের এবং অভিযুক্ত মুন্নাকে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন জানায়। আদালত শুনানি শেষে প্রধান অভিযুক্ত তুফান সরকার ও মার্জিয়া হাসান রুমকির প্রত্যেকেকে দুইদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। অভিযুক্ত মুন্না আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। ডাক্তারী পরীক্ষায় যা মিলেছে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে গত সোমবার ধর্ষিতা শিশুর সকল ধরনের মেডিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। মেডিক্যাল রিপোর্টটি বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের হাতে পৌঁছেছে। শজিমেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ এ কে এম সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড ধর্ষিতা শিশুর শারীরিক সকল পরীক্ষা করেছেন। এ বোর্ডে ছিলেন ডাঃ নূরে জান্নাত, যিনি নারীত্বের বিষয়গুলো পরীক্ষা করেছেন। বয়স নির্ধারণী পরীক্ষা করেছেন রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ রেজাউল করিম নয়ন, প্যাথলজি বিভাগের সার্বিক পরীক্ষা করেছেন সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ রওনক চৌধুরী। সূত্র জানায় বগুড়ার ঘটনাটি অতি সেনসেটিভ হওয়ায় ডাক্তারী পরীক্ষার এইচভিএস, সোয়াপ, ফিজিক্যাল হিস্টরি, আর্গানসহ অন্য পরীক্ষা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করা হয়েছে। যা তিনদিনের মধ্যে শেষ করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সূত্র জানায় ডাক্তারী পরীক্ষায় মেয়ের বযস ১৭ বছরের প্রমাণ মিলেছে। মেয়েকে যে ধর্ষণ এবং শারীরিকভাবে অমানিবক নির্যাতন করা হয়েছে তারও প্রমাণ মিলেছে। মেয়ের মায়ের নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পুলিশের এক সূত্র জানায়, এ সব আলামত বিচার কার্যের সময় আদালতে উপস্থাপন করা হবে। মামলার চার্জশিটে বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে। রিমান্ডের আবেদনের সময় রিমান্ডের আবেদনে শুনানির সময় অভিযুক্তদের পক্ষে এখনও কোন আইনজীবীকে দেখা যায়নি। এক সূত্র জানিয়েছে, বগুড়ার চাঞ্চল্যকর এত বড় একটি ঘটনায় আইনজীবীদেরও মানবিকতা দেখা যাচ্ছে। বগুড়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট আমানউল্লাহ্ ইতোমধ্যে ধর্ষিতা শিশু ও তার মায়ের নিরাপত্তা চেয়ে শিশু আদালতে আবেদন করেছেন। আদালত মা মেয়ের সুচিকিৎসা নিশ্চিত ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের আদেশ দিয়েছে। শিমুল এখনও গ্রেফতার হয়নি চাঞ্চল্যকর এ মামলার এজাহারভুক্ত দশ অভিযুক্তের মধ্যে তুফান সরকারের ক্যাডার শিমুলকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, তাকে শীঘ্রই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। সকল তথ্যউপাত্ত আলামত এখন পুলিশের কাছে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর এ মামলার এজাহারভুক্ত সকল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। নারী পৌর কাউন্সিলর রুমকির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মা ও মেয়ের চুল কাটার কাঁচি, ক্ষুর, কর্তিত চুল মারধর ও নির্যাতনে ব্যবহার করা স্টিলের পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। নারী কাউন্সিলর রুমকির কাছ থেকেও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। রুমকির যে সেল ফোন দিয়ে মা ও মেয়েকে নির্যাতন ও চুল কর্তনের দৃশ্যধারণ করা হয় তাও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তুফান সরকারের সিন্ডিকেট অল্পদিনেই বিত্ত বৈভবের মালিক তুফান সরকার অশিক্ষিত হয়েও দেশের অপরাধ জগতের প্রভাবশালী ও চাঁইদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। ইয়াবাসহ যেসব মাদক সমুদ্রপথে টেকনাফ হয়ে এবং দেশের বিভিন্ন সীমান্ত গলিয়ে দেশের ভেতরে এসেছে তার উল্লেখযোগ্য চালান আসত তুফান সরকারের কাছে। তুফান সরকারের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ক্যাডাররা তা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিত। বগুড়া নগরীতে যত মাদক ব্যবসা তা নিয়ন্ত্রিত হতো তুফান সরকারের মাধ্যমে। এ জন্য বিপুল অঙ্কের অর্থ দিতে হতো তুফান সরকারকে। তুফান সরকার যে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে তাদের জন্য ৫০টি দামী মোটরসাইকেল কিনে দেয়া হয়। এ মোটরসাইকেলে তুফান বাহিনী নগরীতে মহড়া দিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিত। তুফান ক্যাডারদের প্রতিদিন ভাতা প্রদান করা হতো।
×