ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রবীন্দ্রনাথ আমার অনুপ্রেরণা ॥ চঞ্চল খান

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৫ আগস্ট ২০১৭

রবীন্দ্রনাথ আমার অনুপ্রেরণা ॥ চঞ্চল খান

রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ড. চঞ্চল খান। একাধারে গবেষক, লেখক, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা, চিত্রশিল্পী, সংগঠক ও শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গীত চর্চার পাশাপাশি গবেষণা করছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃজন ও কর্ম নিয়ে। কবিগুরুর ৭৬তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশ হচ্ছে শিল্পীর রবীন্দ্রসঙ্গীতের ষষ্ঠ একক এ্যালবাম ‘মহারাজ’। এ্যালবাম, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও সৃজনকর্ম নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। ‘মহারাজ’ এ্যালবাম সম্পর্কে বলুন। চঞ্চল খান : কবিগুরুর ‘মহারাজ’ ভাবনা নিয়ে এই এ্যালবাম। প্রেম, প্রকৃতি ও পূজা পর্বের গানে মহারাজ এসেছে ঘুরে ফিরে। যেমন একটি গান আছে ‘মহারাজ, একই সাজে এলে হৃদয়পুরমাঝে!’ কবির সেই মহারাজ কখনও ঈশ্বর, কখনওবা প্রকৃতি ও প্রেমের প্রতীক। সেই ভাবনার আলোকে সাজিয়েছি এ্যালবামের গানগুলো। আমার কাছে মহারাজ হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাই এ্যালবামের নামও দিয়েছি ‘মহারাজ’। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে প্রকাশিত এ এ্যালবামে রয়েছে ১০টি গান। কলকাতার জেএমডি স্টুডিওতে ধারণ করা হয়েছে গানগুলো। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন রাহুল চ্যাটার্জি। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র সম্পর্কে বলুন। চঞ্চল খান : ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ’ আর ‘টাইমলেস গীতাঞ্জলি’ শিরোনামে দুটো তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছি। এর মধ্যে ‘টাইমলেস গীতাঞ্জলি’ করার পেছনে একটা চাপ কাজ করেছিল। ঢাকার একটি নামকরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের এক ছাত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম গীতাঞ্জলি পড়েছো কিনা। উত্তর এলো ‘না’, কারণ তিনি ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্রী। আমি অবাক হয়ে বললাম এই কারণেই গীতাঞ্জলি আপনাদের পড়া উচিত বেশি করে, কারণ গীতাঞ্জলির নোবেল বিজয় ইংরেজী সাহিত্যকে সমৃদ্ধি করার জন্য। সেই দিন ভাবলাম আর বই না, সহজভাবে দৃষ্টিনন্দন যোগ্য একটা কিছু করতে হবে। আনন্দের বিষয়, অনেকেই এই কাজ দুটোর উছ¦সিত প্রশংসা করেছে। শিল্পের নানা মাধ্যমে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন? চঞ্চল খান : সঙ্গীত চর্চার পাশাপাশি আমি শিক্ষকতা, গবেষণা ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করছি। আমার সব কাজের পেছনে রবীন্দ্রনাথ আমার অনুপ্রেরণা। সঙ্গীতের পাশাপাশি আমি একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলাম। পৃথিবীর সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছি। দেশ-বিদেশে শিক্ষকতা করেছি, রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চার নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আমরা সবাই তো কম বেশি নানা ধরনের কাজ করি। আমার মনে হয়, গুরুত্ব বুঝে শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ করা জরুরী। তাতে একসঙ্গে অনেক ধরনের কাজ করা যায়। আপনি তো রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিষ্ঠালগ্নের একজন সক্রীয় কর্মী? চঞ্চল খান : জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ গঠিত হয় ১৯৮০ সালে। ড. সন্জীদা খাতুন, ওয়াহিদুল হক, তারেক আলী, মফিদুল হক, ডাঃ সারওয়ার আলী, জামিল চৌধুরীসহ অনেক গুণীজনের সঙ্গে কর্মী হয়ে কাজ করেছি এই পরিষদ গড়ার জন্য। আমাদের কর্মী বাহিনীতে ছিলেন অনেকেই। আজকের সম্মিলন পরিষদ আমাদের সেই দিনের সংগ্রামের ফসল। এই ইতিহাস কেউ কেউ মনে না রাখলেও, আমার হৃদয়ে, নিভৃতে এই সংগঠনটি দীপ্ত হয়ে আছে। চিরকাল তাই থাকবে। আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার প্রাক্তন উপদেষ্টা, বর্তমানে সদস্য। রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ কেমন ? চঞ্চল খান : এটা আনন্দের কথা। যখন রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ বা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার অনুষ্ঠানে এক ঝাঁক নবীন শিল্পী গান করে দারুণ লাগে। কিন্তু কষ্টের জায়গাও আছে। পড়াশুনা করে গান করা দরকার। ভেতর পানে তাকানো জরুরী। গুটিকয়েক গান জানা যথেষ্ট না। রবীন্দ্রনাথের বহুমাত্রিক গান আছে, নানা রঙের, নানা ঘরাণার, সেসব গানও জানতে হবে, শিখতে হবে। একজন রবীন্দ্রপ্রেমী হিসেবে আপনার প্রাপ্তি কী? চঞ্চল খান : চার দশক ধরে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে আমার আত্মার বন্ধন। রবীন্দ্রনাথকে গভীরভাবে পাওয়াই আমার বড় পাওয়া। গান করতে গিয়ে তার দর্শন জানছি, অসংখ্যবার পড়ছি তার বহুমাত্রিক রচনা। অনুবাদ করছি, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করছি। প্রতিদিন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আছি-কী জীবনে, কী স্বপনে। যতদিন বাঁচব, রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই থাকব। -গৌতম পান্ডে
×