ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওরা আত্মগোপনে ভারতে আছে বলে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়েছে বাংলাদেশ

জেএমবির দুই শীর্ষ জঙ্গী সালাউদ্দিন ও মিজান হামলার ছক কষছে

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৫ আগস্ট ২০১৭

জেএমবির দুই শীর্ষ জঙ্গী সালাউদ্দিন ও মিজান হামলার ছক কষছে

শংকর কুমার দে ॥ ভারতের মাটিতে লুকিয়ে থেকে বাংলাদেশে জঙ্গী হামলার ছক কষছে জেএমবির দুই শীর্ষ জঙ্গী সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ও বোমা মিজান। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে(এনআইএ)। এও জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গী বিরোধী অভিযানে টিকতে না পেরে জ্এেমবির অনেক জঙ্গীই এখন ভারতের মাটিতে আত্মগোপনে আছে। ভারতের মাটিতে আত্মগোপনে থাকা এমন দুর্ধর্ষ ও শীর্ষ জঙ্গীর মধ্যে আছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়া জেএমবির দুই জঙ্গী সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ও বোমা মিজান। তারা শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারতের জন্যও বিপজ্জনক, তাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে ঢাকার গোয়েন্দাদের দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, ভারতের কোথাও লুকিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গী সালাউদ্দিন ও বোমা মিজান। সেখান থেকেই জঙ্গী সংগঠন জেএমবিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে তারা। সম্প্রতি ঢাকায় আসা ভারতের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ) ও জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই জঙ্গীর অবস্থান এবং কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারাদের। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের(সিটিটিসি) এক কর্মকর্তা জানান, ভারতের মাটিতে আত্মগোপনে থাকা সালাউদ্দিন ও বোমা মিজানের জঙ্গী তৎপরতার বিষয়টি ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তারা যে ভারতে আত্মগোপন করে সে দেশের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশে জঙ্গী হামলা করতে পারে সে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। সালাউদ্দিন ও বোমা মিজানকে গ্রেফতারের জন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে তারা আশ্বস্ত করেছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এও বলেছেন, সালাউদ্দিন ও বোমা মিজানকে ধরতে না পারলে শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারতের জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে। ফের জেএমবির তৎপরতা বাড়তে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতে আত্মগোপন করে থাকা দুই জঙ্গীর মধ্যে সালাউদ্দিন গত ১৩ জুলাই ‘সাহম আল-হিন্দ’ নামে জঙ্গীদের একটি চ্যানেলে সাক্ষাতকার দিয়েছে যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। জঙ্গী চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাতকারে সালাউদ্দিন বলেছে, তিনটি কর্মপদ্ধতি: দাওয়াত বা উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ ও কিতাল বা সশস্ত্র যুদ্ধ নিয়ে জেএমবি আবার সংগঠিত হচ্ছে। এর মানে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি জেএমবির সদস্যরা ফের কিতাল বা সশস্ত্র যুদ্ধে নামতে যাচ্ছে। ভারতের মাটিতে লুকিয়ে থেকে জঙ্গী চ্যানেলে সাক্ষাতকার দেয়ার ঘটনাটিতে তাদের জঙ্গী তৎপরতার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, দুর্ধর্ষ শীর্ষ জঙ্গী সালাউদ্দিন ও বোমা মিজান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। ২০১৪ সালে প্রিজনভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আত্মগোপনে থেকে সে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে সে অনুযায়ী সে ভারতে আছে। বিষয়টি সম্প্রতি এসটিএফ ও এনআইএ-কেও জানানো হয়েছে। তারাও আমাদের মতো তাকে খুঁজছে বলে জানিয়েছেন সে দেশের কর্মকর্তারা। সালাউদ্দিন ও বোমা মিজান জেএমবির অনেক পুরনো নেতা। তারা চুপচাপ আত্মগোপনে থাকবে না। জেএমবিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে পুরনো জেএমবি সংগঠিত হতে সময় লাগবে। কারণ তাদের বেশিরভাগ নেতাকর্মী কারাবন্দী। শীর্ষ কিছু নেতার অনেকের ফাঁসি হয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে তিন জঙ্গীকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। যার একজন পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। বাকি দুজন হচ্ছে সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ও বোমা মিজান। বোমা মিজানের পুরা নাম জাহিদুল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে হারুর ওরফে কামরুল। বোমা তৈরিতে বিশেষ পারদর্শী হওয়ায় যাকে বোমা মিজান বলেই চেনে সবাই। মিজানসহ সালাউদ্দিনকে ধরতে বাংলাদেশ পুলিশ ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ৫ লাখ টাকা করে পুরস্কারও ঘোষণা করে। জেএমবির জঙ্গীরা প্রিজনভ্যানে হামলা করে পুলিশ হত্যা ও আহত করে দুই জঙ্গীকে ছিনিয়ে নেয়ার পর তাদের ধরার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গীবিরোধী অভিযানের তীব্রতায় অন্য জঙ্গীদের সঙ্গে সালাউদ্দিন ও বোমা মিজানও ভারতে পালিয়ে গিয়ে জেএমবির কার্যক্রম সংগঠিত করে। এক সময় ভারতেও সমর্থক ও অনুসারী তৈরি হয়। সেখানে ছোট পরিসরে সাংগঠনিক কার্যক্রমও শুরু করে। তবে এ নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কোন ধারণাই ছিল না। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের জঙ্গীদের তৎপরতার বিষয়টি প্রকাশ পায়। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, জেএমবির শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই কারাগারে এবং অনেকের ফাঁসির দ- কার্যকর হয়েছে। বাইরে অল্প যে কয়েকজন রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম এই সালাউদ্দিন, যাকে সোহেল, সজীব এবং তওহীদ নামেও ডাকা হয়। জেএমবির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সে এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতিষ্ঠাতা আমির আব্দুর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাজ করেছে সে। ফলে তার বিষয়ে কিছুটা ‘ভয়’ থেকেই যায়। তার মোটিভেশন ক্ষমতা অনেক বেশি। খুব অল্প সময়ে সে লোকজনকে মোটিভেটেড করে দলে ভেড়াতে পারে। অনেক বেশি ডেডিকেটেডও। ২০১৪ সালে খাগড়াগড়ে যে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে সেসব বোমা তৈরি হচ্ছিল বাংলাদেশে হামলার জন্য। তদন্তে ভারতীয় গোয়েন্দারা এ তথ্য জানতে পারেন, যা ঢাকার গোয়েন্দাদেরও অবহিত করা হয়েছে।
×