ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজিতে বেড়েছে ১৩-১৫ টাকা ষ দেশে ফলনও ভাল, আসছে ভারত থেকে, বর্তমান মজুদে ডিসেম্বর পর্যন্ত দাম বাড়ার কোন কারণ নেই কোরবানি সামনে রেখে বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

সক্রিয় সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৫ আগস্ট ২০১৭

সক্রিয় সিন্ডিকেট

এম শাহজাহান ॥ মাত্র এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। পণ্যটির জাত, মান ও বাজারভেদে দাম বৃদ্ধির হার আরও বেশি। কোরবানি সামনে রেখে পেঁয়াজের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সিন্ডিকেটের বড় ধরনের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বছর দেশে ফলন ভাল হয়েছে পেঁয়াজের। সেই সঙ্গে আমদানিতে কোন ধরনের শুল্ক না থাকায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে দেদার পেঁয়াজ আনছেন ব্যবসায়ীরা। পণ্যটির আমদানি মূল্যও বাড়েনি। এ বাস্তবতায় দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের যে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানো যাবে। পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ও আমদানি মূল্য বিবেচনায় নিলে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বাবদ ব্যবসায়ীদর খরচ পড়েছে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা। অথচ রাজধানীর বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত। দাম আরও বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পাইকারি মূল্য বেশি হলে খুচরাপর্যায়ে দাম বাড়বেই। আর সেটির প্রভারও ভোক্তাপর্যায়ে পড়বে। দাম নিয়ন্ত্রণ না হলে আগামী কোরবানিতে বেশি দাম দিয়ে ভোক্তাদের পেঁয়াজ কিনতে হবে বলে অভিমত খুচরা ব্যবসায়ীদের। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক নেই, দেশে উৎপাদন ভাল। এ অবস্থায় দাম বাড়ার কোন সুযোগ নেই। তবে হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা উদ্বিগ্ন কর্মকর্তারা। শীঘ্রই পেঁয়াজের মজুদ, উৎপাদন ও আমদানি পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করবে মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু সম্প্রতি জনকণ্ঠকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংসহ সরকারী যেসব পদক্ষেপ থাকে তা করা হচ্ছে। কোরবানি সামনে রেখে মসলাজাতীয় পণ্যের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয় ঠিকই কিন্তু এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। কী কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হবে। তিনি বলেন, মোটা চালের দাম কমে এসেছে, গত রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। আশা করছি কোরবানিতে কোন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। এদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বর্তমানে ৩০ থেকে ৪৫ টাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। সংস্থাটির হিসাবে, গত এক মাসে দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ১৩ টাকা দাম বেড়ে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায় এবং আট টাকা দাম বেড়ে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। যদিও বাজারভেদে এ মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে, দেশে গড়ে প্রতি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ২০ হাজার টন। এর মধ্যে নবেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। এছাড়া রমজান মাস ও কোরবানির সময় পেঁয়াজের দেড় থেকে দুই লাখ টন বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এ চাহিদাকে পুঁজি করে সক্রিয় ওঠে সিন্ডিকেট। এবারের রমজানে পেঁয়াজ নিয়ে কোন কারসাজি না হলেও কোরবানি ঈদকে টার্গেট করেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। দেশে উৎপাদন, আমদানি ও ভোগ হিসাব করলে এখনও দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকার কথা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাবে দেখা গেছে, দেশে বছরে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। আর চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়ে থাকে ১৯-২০ লাখ টন। তবে বছরে ১৯ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হওয়ার তথ্যটি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, দেশের পেঁয়াজের চাহিদার ৬০ ভাগ দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ হয়। বাকিটা আমদানি করে মেটাতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর শ্যামবাজারের একজন আমদানিকারক ও বড় আড়তদার জনকণ্ঠকে বলেন, পচনশীল কাঁচাপণ্যের বাজার চাহিদা ও যোগানের ওপর নির্ভর করে। বাজারে এখনও দেশী পেঁয়াজের যোগান আছে ঠিক, কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়। পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকলে এত তাড়াতাড়ি দাম বাড়ত না। তিনি বলেন, দেশে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টিতে মজুদকৃত পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকের মোকামে পানি উঠে পণ্যদ্রব্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতায় ইতোমধ্যে খাতুনগঞ্জের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এসব কারণেও এখন বাজার চড়া। এদিকে, কোরবানি সামনে রেখে প্রতি বছর অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের বাজার। সরকারী বিভিন্ন পদক্ষেপে গত বছর বাজার স্থিতিশীল থাকলেও এ বছর ইতোমধ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। গত কয়েক বছর আগে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দেড় শ’ থেকে ২০০ টাকায় পেঁয়াজ খেয়েছেন ভোক্তারা। ওই সময় টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করে বাজার সামাল দেয় সরকার। এ বছর এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণে বাস্তবসম্মত কর্মসূচী নেয়া না হলে পেঁয়াজের দাম কোথায় ওঠে তা নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ভোগ্যপণ্যের বাজার সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বাজারে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়ে আদা ৮০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১৫০ টাকায়। তবে চিনির দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬২ টাকায়। আমদানির পরও মোটা চালের দাম কমছে না। টানা বৃষ্টি ও বর্ষার কারণে শাকসবজির দাম কিছুটা বাড়লেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ মাছ। সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে ইলিশের। মাঝারি সাইজের প্রতি জোড়া ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়। এছাড়া ভোজ্যতেল, আটা, ডালসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
×