ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উখিয়ায় শরণার্থী ও আশ্রিতদের অবস্থা দেখলেন ওআইসি মহাসচিব

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ চাই

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৫ আগস্ট ২০১৭

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ চাই

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বাংলাদেশে আশ্রিত ও শরণার্থী হিসেবে বসবাসরত রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমদ আল- ওথাইমিন। বাংলাদেশ সফররত ওআইসি মহাসচিব শুক্রবার দুপুরে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছে সেখান থেকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ও আশ্রিতদের স্থান পরিদর্শন করেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওআইসি মহাসচিব শরণার্থী ক্যাম্প ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শরণার্থীদের নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার বর্ণনা শুনে বিস্মিত হন। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বর নির্যাতন চলেছে, কিভাবে তাদের স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, ধর্ষণ ও লুটপাট করা হয়েছে এসবের বর্ণনা শুনে তিনি বিচলিত হন। পরিদর্শন শেষে কথা বলেন উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। নিজ দেশে তাদের মুক্ত পরিবেশে বসবাসের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দিতে হবে নাগরিকত্ব। মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের সব নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় সে দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছি।’ কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাখাইন প্রদেশে নির্যাতিত হয়ে এদেশে আশ্রিত জামালিদা বেগম, জাকারিয়াসহ বেশকিছু রোহিঙ্গা সদস্যের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। এরপর তিনি ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লক ঘুরে দেখেন। ওআইসি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ওআইসি সব সময় সংহতি প্রকাশ করে আসছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ, মুসলিম দেশসমূহ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের প্রতি দফায় দফায় আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এ ব্যাপারে কোন কর্ণপাত করছে না। তিনি এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে মানবাধিকারসহ আন্তর্জাতিক সকল সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জাতিগত দাঙ্গার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। শরণার্থী ও আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ হলেও নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ৩২ হাজার। গত বছর মিয়ানমারে নতুন করে সহিংসতার পর লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর দমন নিপীড়ন বন্ধে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বৈঠকে বসেছিলেন ওআইসির দেশসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ৫৭ দেশের ইসলামী এ জোটটি প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকার বরাবরই অনমনীয় মনোভাব পোষণ করে আসছে। যে কারণে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বড় অংশটি রয়েছে বাংলাদেশে। এসব নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দেয়ায় ওআইসি মহাসচিব সরকারের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসতেই হবে। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের সকল অধিকার নিশ্চিত করে নাগরিকত্বও দিতে হবে।
×