ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তামণির হাত কেটে ফেলতে হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৪ আগস্ট ২০১৭

মুক্তামণির হাত কেটে ফেলতে হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রক্তনালির বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামণির ডান হাতটা অক্ষত রেখেই যাতে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়, চিকিৎসকরা প্রথম সে চেষ্টা করবেন। সম্ভব না হলে হাত কেটে হলেও অস্ত্রোপচার করতে হবে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা জানান বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডাঃ সামন্তলাল সেন। তিনি জানান, অস্ত্রোপচার না করলে তার মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। মুক্তামণির বাবা-মা মেয়ের হাত কেটে ফেলতে হলেও অস্ত্রোপচারে সম্মতি দিয়েছেন। তাদের কাছে মেয়ের হাতের চেয়ে জীবন আগে। ডাঃ সামন্তলাল সেন জানান, মুক্তামণির বায়োপসি করা হবে আগামী শনিবার। বায়োপসি (এক ধরনের অস্ত্রোপচার) করার সময় হাত থেকে ঠিক কতটুকু জায়গা কাটতে হবে তা বায়োপসি করার সময় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগে থেকে কিছুই বলা সম্ভব নয়। বায়োপসির ফল থেকে জানা যেতে পারে তার বিরল রোগের নাম। প্রধান সমন্বয়ক সামন্তলাল সেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসা সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে করা সম্ভব কি-না তা দেখার নির্দেশ দেন। তারপর বার্ন ইউনিটের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তামণিকে সেখানকার চিকিৎসকদের দেখানো হয়। তার সব প্রতিবেদন পাঠানো হয়। তবে সেখান থেকে মুক্তামণির অবস্থাকে ‘ডিফিকাল্ট কেস’ বলে ই-মেইলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, মুক্তামণির হাত কেটে ফেলতে হতে পারে। আর এ মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে মুক্তামণির অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হবে না। বিভিন্ন ডায়াগনোসিস করে দেখতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীকে এ কথা জানানোর পর তিনি বার্ন ইউনিটেই মুক্তামণির চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ডাঃ সামন্তলাল সেন জানান, ঢাকা মেডিক্যালের চিকিৎসকরা কয়েকদিন আগেই জোড়া লাগানো যমজ শিশুকে অস্ত্রোপচার করে আলাদা করতে সফল হয়েছেন। দেশবাসী দোয়া করবেন আর আমরা চেষ্টা করব। আমরা অগ্রাধিকার দেব তার হাতটি যাতে রক্ষা করতে পারি। বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, এ ধরনের বিরল রোগের চিকিৎসার অনেকগুলো স্তর থাকে। মুক্তামণি প্রথম যখন আসে তখন তার হাত থেকে বের হওয়া গন্ধে কেউ টিকতে পারত না। এখন কিন্তু আর তার হাত থেকে গন্ধ বের হয় না। তার একটি অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসা শেষ করা যাবে না। কমপক্ষে ছয় থেকে সাতটি অস্ত্রোপচার লাগবে। তার রক্তকণিকা কম থাকায় ঝুঁকি তো আছেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক চিকিৎসক জুলফিকার লেনিন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী মুক্তামণির চিকিৎসা চলছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের সক্ষমতা বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা না পারলেও এখানকার চিকিৎসকরা সফল হবেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, সিঙ্গাপুরে গিয়ে যেহেতু লাভ হবে না তাই মুক্তামণির চিকিৎসা এখানেই হবে। মুক্তামণির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক পরিস্থিতি জানানো হয়েছে। তারা হাত যদি কেটে ফেলতেও হয়, তাতেও অস্ত্রোপচার করতে রাজি আছেন। তবে এখানকার চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন হাতটি যাতে রক্ষা করা যায়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মুক্তামণির মা আসমা খাতুন জানান, এখানকার চিকিৎসায় আমরা খুব সন্তুষ্ট। বাড়িতে থাকলে মেয়ে এত ভাল থাকত না। আমি আমার মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সংবাদ সম্মেলনের পর বার্ন ইউনিটের কেবিনে কথা হয় মুক্তামণির সঙ্গে। এ সময় তার মা আসমা খাতুন আস্তে করে জানালেন, মুক্তামণির দাদাও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি বুধবার রাতে মারা গেছেন। দাদা মুক্তামণিকে অনেক আদর করতেন, তাই তার মারা যাওয়ার খবর মুক্তামণিকে জানানো হয়নি। সাতক্ষীরার কামারবাইশালের মুদি দোকানি ইব্রাহিম হোসেনের দুই মেয়ে হীরামণি ও মুক্তামণি। তারা যমজ দুই বোন। হীরামণি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও মুক্তামণি বিরল রোগে আক্রান্ত। হীরামণি এখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছে। মুক্তামণি স্কুল থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর বই এনেছিল কিন্তু তার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। মুক্তামণির মা আসমা খাতুন জানান, সাতক্ষীরায় জন্মের দেড় বছর পর থেকে মুক্তামণির ডান হাতের সমস্যার শুরু। প্রথমে হাতে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে মুক্তামণির ডান হাতটি ফুলে অনেকটা কোলবালিশের মতো হয়ে যায়। মুক্তামণি বিছানাবন্দী হয়ে পড়ে। এখন তার বয়স ১০ বা ১২ বছর। মুক্তামণির রোগ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ব্যাপক আলোচনা চলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গত ১১ জুলাই মুক্তামণিকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। বিনামূল্যে তার চিকিৎসা চলছে।
×