ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৪ সপ্তাহের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ

ঢাবির উপাচার্য প্যানেলের কার্যক্রম আপীল বিভাগে স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৪ আগস্ট ২০১৭

ঢাবির উপাচার্য প্যানেলের কার্যক্রম আপীল বিভাগে স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নির্বাচনের জন্য ৩ সদস্যের প্যানেলের পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করেছে আপীল বিভাগ। একই সঙ্গে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দর্শন বিভাগের শিক্ষক তোফায়েল আহমেদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এ সময় আদালত মন্তব্য করেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্য অনুযায়ী বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেছেন। রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্ধারণ না করেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ সভা ডাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট এর আগে যে রুল দিয়েছিল, তা চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছে আপীল বিভাগ। কোন ধরনের মুলতবি ছাড়াই হাইকোর্টে রুল শুনানি শেষ করতে হবে। আর রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান উপাচার্যই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে জানানো হয়েছে আপীল বিভাগের আদেশে। আপীল বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন আব্দুল মতিন খসরু এবং এএফএম মেজবাহ উদ্দিন। অন্যদিকে রিটকারী রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েটদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। ১৯৭৩ এর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট সদস্যরা ভোট দিয়ে তিনজনের একটি উপাচার্য প্যানেল ঠিক করেন, তার মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বা রাষ্ট্রপতি। সিনেটে ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্ব থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্য থেকেও ২৫ জন প্রতিনিধি এই সিনেটে থাকেন। কিন্তু রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্ধারণ বা নির্বাচন না করেই ২৯ জুলাই সিনেট সভা ডাকায় আপত্তি জানিয়ে আদালতে রিট আবেদন করেন ১৫ জন রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট। এই ১৫ আবেদনকারী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোঃ আব্দুস সামাদ, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক হারুনুর রশীদ খান, অধ্যাপক সিতেশ চন্দ্র বাচার, অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, অধ্যাপক হুমায়ুন আক্তার, অধ্যাপক মোঃ আসাদুজ্জামান, অধ্যাপক এমরান কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক কে এম সাইফুল আলম খান, সহযোগী অধ্যাপক মোঃ হুমায়ন কবির, সহকারী অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রহিম, রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট ঢাকার এ কে এম আতিকুর রহমান, ফরিদপুরের আব্দুল জব্বার মিয়া ও বরিশালের আনোয়ার হোসেন। তাদের আবেদন শুনে গত ২৪ জুলাই বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ ফারুকের বেঞ্চ সিনেট সভা স্থগিত করে দেয়। সেই সঙ্গে ওই সভা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং সভা আহ্বান করে দেয়া নোটিস কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দেয় হাই কোর্ট। উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রো ভিসি (শিক্ষা), প্রো ভিসি (প্রশাসন), রেজিস্ট্রার ও শিক্ষা সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেম্বার আদালতে গেলে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি ৩০ জুলাই শুনানির জন্য আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় গত ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ভবনে সিনেটের সভা বসে। ১০৫ সদস্যের সিনেটের অর্ধেকের মতো সদস্য তাতে অংশ নেন। বিএনপিপন্থী সমর্থকদের বর্জন, সরকার সমর্থকদের একাংশের আপত্তি এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে ওই সভায় ভোট ছাড়াই উপাচার্য প্যানেল চূড়ান্ত করা হয়। বিকল্প কোন প্রস্তাব সভায় না আসায় বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও নীল দলের আহ্বায়ক আবদুল আজিজকে নিয়ে তিন সদস্যের প্যানেল অনুমোদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট। নিয়মানুযায়ী, সিনেটে মনোনীত এই তিনজনের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি একজনকে পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবেন। কিন্তু আপীল বিভাগের স্থগিতাদেশের কারণে সেই প্রক্রিয়া আটকে গেল। অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের বর্তমান মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৪ আগস্ট। তবে আপীল বিভাগের আদেশ অনুযায়ী, হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনিই উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করবেন। হাইকোর্টের আদেশ বহাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দর্শন বিভাগের শিক্ষক তোফায়েল আহমেদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদন শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারপতির আপীল বিভাগের বেঞ্চ ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন। এর ফলে তোফায়েল আহমেদের নিয়োগ অবৈধই থাকল বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সগীর আনোয়ার এবং তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার গোলাম সারোয়ার পায়েল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন এ এফ এম মেজবাহ উদ্দিন। শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্য অনুযায়ী বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। একজন ভিসি (নাম উল্লেখ করেননি) পর্যন্ত ঐতিহ্য বজায় রেখে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তখন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যারা প্রথম শ্রেণীতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হতেন তাদের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু এখন আর সেটি হচ্ছে না। এটা এ্যালার্মিং। গত ২৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক তোফায়েল আহমেদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আইনজীবী গোলাম সরোয়ার পায়েল বলেন, গত বছরের ২ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে দু’জন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসিতে যোগ্যতা চাওয়া হয় ন্যূনতম সিজিপিএ ৪.২৫ (সিজিপিএ-৫ এর মধ্যে)। পরে দর্শন বিভাগ গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর নিয়োগ ৫ জনকে নিয়োগ দেন। কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্ত দু’জনের মধ্যে খন্দকার তোফায়েল আহমেদের সিজিপিএ- ৩.১৯। সিজিপিএর শর্ত পূরণ না করার পরও তোফায়েলকে নিয়োগ দেয়ায় হাইকোর্টে রিট করেন শিক্ষক পদে আরেক আবেদনকারী এইচএম মিরাজ সৌরভ। ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত উপরোক্ত আদেশ দেন।
×