ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরার আদালতে দুই সাক্ষীর হাজিরা ॥ ১৭ আগস্ট পরবর্তী তারিখ

শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলা, ১৫ বছর পর সাক্ষ্য গ্রহণ

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৪ আগস্ট ২০১৭

শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলা, ১৫ বছর পর সাক্ষ্য গ্রহণ

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাবেক সাংসদ প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান এবং জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি শেখ আজাহারুল ইসলাম আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। এ নিয়ে সাতজন এ মামলায় সাক্ষ্য দিলেন। মামলার বাদী ও সরকার পক্ষের আইনজীবীদের দাবি, বৃহস্পতিবার প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও এ্যাডভোকেট আজাহারুল ইসলাম যে সাক্ষী দিয়েছেন তা বিচার কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার ওপর জেলা বিএনপির সভাপতি ও তৎকালীন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাস (সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হন। এ ঘটনায় থানা মামলা না নেয়ায় ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদী হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭০/৭৫ জনকে আসামি করে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা (সিআরপি-১১৭১/০২) দায়ের করেন। মামলায় ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়। বিচারক এম আই ছিদ্দিকী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন। এ মামলায় ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঘটনা মিথ্যা বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এফিডেভিট দিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির হয়ে বিচারককে অবহিত করেন সাক্ষী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, শওকত হোসেন, শহীদুল ইসলাম, প্রভাষক জাভিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম লাল্টু ও আলতাফ হোসেন লালু। এছাড়া বাদী মোসলেমউদ্দিন পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে ২০০৪ সালের ২২ জানুয়ারি নারাজির আবেদন জানালে শুনানি শেষে তা খারিজ হয়ে যায়। এ খারিজ আবেদনের বিরুদ্ধে বাদী ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা ( ১৭/০৪) দায়ের করেন। ২২ এপ্রিল শুনানি শেষে বিচারক এ রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট বাদী এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে ক্রিমিনাল মিস কেস (৫৮৯৩/০৪) দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারকদ্বয় ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আপীল মঞ্জুর করে নিম্ন আদালতের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। আদেশের কপি দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর ফাইলবন্দী থাকার পর ২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এসে পৌঁছায়। ১৭ সেপ্টেম্বর বাদীর উপস্থিতিতে নারাজির শুনানি করার জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ওই দিন বিচারক নিতাই চন্দ্র সাহা অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দুটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। অপর টিআর ১৫১/১৫ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন মামলায় বাদী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মোসলেমউদ্দিন, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু, শহীদুল ইসলাম, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক সাজিদুর রহমান চৌধুরী মঞ্জুর সাক্ষী দেয়া শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও এ্যাডভোকেট আজাহারুল ইসলাম আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। আগামী ১৭ আগস্ট এ মামলার পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের পিপি ওসমান গনি জানান, এসটিসি ২০৭/১৫, ২০৮/১৫ এ দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার সাক্ষীর জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে দিন ধার্য ছিল। বাদী মোসলেমউদ্দিন গত ২৭ জুলাই এ আদালতে সাক্ষী দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন থাকায় তার সাক্ষী গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী ১৭ আগস্ট পরবর্তী সাক্ষীর দিন ধার্য করা হয়েছে।
×