অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম মাসে ১১১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স প্রবাসী বাংলাদেশীরা পাঠিয়েছেন। যা গত অর্থবছরের একই মাসে এসেছিল ১০০ কোটি ডলার। সে হিসেবে জুলাই মাসে ১১ কোটি ডলারের সমমূল্যেও বৈদেশিক মুদ্রা বেশি এসেছে। যদিও এর আগের মাস তথা জুন মাসের তুলনায় ১০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় কম এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তেলের দাম কমে যাওয়া, ইউরো এবং পাউন্ডের বিনিময় মূল্য পড়ে যাওয়া এবং হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের কারণে কমে যাচ্ছে রেমিটেন্স। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানোর রেমিটেন্স প্রবাহ সাড়ে ১৪ শতাংশ কমেছে। এ অর্থবছরে প্রবাসীরা এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। যা গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্নœ।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগের অর্থবছরে প্রবাসীরা এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন। এক বছরের ব্যবধানে রেমিটেন্স প্রবাহ ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ বা ২১৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার কমেছে। গত অর্থবছরে শুরু থেকেই রেমিটেন্স প্রবাহ নিম্নমুখী ছিল। এছাড়াও আগের দশ বছরের রেমিটেন্সের হিসাব থেকে জানা গেছে, গেল অর্থবছরের রেমিটেন্স গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নœ। এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে এক হাজার ১৬৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে আসে এক হাজার ২৮৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এসেছিল এক হাজার ৪৪৬ কোটি ১১ লাখ ডলার রেমিটেন্স। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেমিটেন্স কিছুটা কমে হয় এক হাজার ৪২২ কোটি ৮২ লাখ ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আবার বেড়ে হয়েছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবার কিছুটা কমে আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার রেমিটেন্স।
বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিটেন্সে মন্দাভাব থাকায় প্রথম থেকেই এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। আর প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে নানান উদ্যোগও নিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু উদ্যোগ কাজে আসছে না। প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে রেমিটেন্সের পরিমাণ। এমনিতেই বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমে গেছে যাওয়ায় প্রবাসীদের উপার্জন কম হচ্ছে। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের নানা সঙ্কটে ইউরো ও পাউন্ডের দাম পড়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর এসব কারণে একটু বাড়তি লাভের জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছেন তারা। ফলে তা হিসাবে আসছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুলাই মাসে রাষ্ট্রীয় খাতের ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৭ কোটি ৬৭ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। যা জুন মাসে ছিল ৩১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। জুলাইতে বিশেষায়িত খাতের ব্যাংক দুটির মাধ্যমে এসেছে ৯৮ লাখ ডলার। তথ্যে আরও দেখা যায়, বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে জুলাই মাসে ৮১ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে, যা এর আগের মাসে ছিল ৮৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। আর বিদেশী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৪২ লাখ ডলার, যা জুনে ছিল মাত্র ৯৪ লাখ ডলার।