ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ ঘণ্টা খোলা থাকায় বদলে গেছে বেনাপোল

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩ আগস্ট ২০১৭

২৪ ঘণ্টা খোলা থাকায় বদলে গেছে বেনাপোল

আবুল হোসেন, বেনাপোল থেকে ॥ গত মঙ্গলবার রাতে অন্য যে কোন দিনের তুলনায় বেনাপোল স্থলবন্দরের চিত্র এখন একটু ভিন্ন। দিনের মতো রাতেও শ্রমিকরা কাজ করছেন, ব্যস্ততা যেন একই। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দরে এমন চিত্র দেখা যায়। সাতদিনে ২৪ ঘণ্টা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে এখানে। বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপার) নাসির উদ্দিন রাত ১১টা ২০ মিনিটে জানান, সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সেবা চলছে। এ পর্যন্ত ভারত থেকে ২৩০ ট্রাক পণ্য প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা কাজ চলছে, ফলে বদলে গেছে চিত্র। দুটি শিফট করে কর্মচারীরা শ্রম দিচ্ছেন। সকাল ৭টা থেকে যারা কাজ শুরু করেছেন, রাত ৮টায় তাদের ছুটি দিয়ে আর এক শিফট চালু হয়েছে। বন্দরে দিনের মতো স্বাভাবিক নিয়মে ভারত থেকে পণ্য আমদানি ও রফতানি হচ্ছে। কাস্টমস, বন্দর, ট্রান্সপোর্ট ও সিএ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা ব্যস্ততার মধ্যে রাত পার করছেন। এর আগে সাধারণত সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বেনাপোল স্থলপথে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চলত। পরে হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাণিজ্যের ঘাটতি পূরণে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে দুই দেশের সরকারের মধ্যকার আলোচনায় বাণিজ্যে আরও গতি আনতে সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টাই সচল রাখার সিদ্ধান্ত এলো। তারই ধারাবাহিকতায় ১ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ৭টায় শুরু হয়েছে ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সেবা। এদিকে বন্দর ও কাস্টমসে জনবল কম থাকায় আগে যেখানে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একজন কর্মচারী কাজ করতেন এখন তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করতে দেখা যায়। এখানে আরও লোকবল বৃদ্ধির দাবি সংশ্লিষ্টদের। বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্সি সারথি এন্টারপ্রাইজের বর্ডার ম্যান রিপন জানান, তারা রাত জেগে ভারতীয় পণ্য ঢোকাচ্ছেন। কিন্তু পণ্য খালাসের জন্য বন্দরে গিয়ে পর্যাপ্ত স্টোর কেপারের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সফল করতে সংশিষ্ট সবার উপস্থিতি থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভারতীয় ট্রাকচালক রমেন দাস বলেন, ২৪ ঘণ্টা পণ্য পরিবহনে তাদের কোন অসুবিধা নেই। তবে বেনাপোল বন্দরে রাতে থাকা, খাওয়া ও গাড়িতে বোঝাই পণ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ স্থলবন্দর এমপ্লোয়েজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন মজুমদার জানান, তারা পেট্রাপোল বন্দরে গিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ী, বন্দর-কাস্টমস ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রথম দিনে কিছু অভিযোগ আসতে পারে। তবে দুই-এক দিনের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গ বনগাঁ মহাকুমা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (আইএনটিসি) সাধারণ সম্পাদক প্রভাস পাল জানান, এ ধরনের বাণিজ্য সেবায় তারা খুশি। তবে যারা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে মালামাল নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসছেন প্রশাসনের কাছে তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দাবি করেন তিনি। তবে বন্দরের লোকজন কাজ করলেও ভারতের ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা অনাগ্রহের কারণে ইমিগ্রেশন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পর্যন্ত খোলা থাকলে। যাত্রীদের দাবি আন্তর্জাতিক বন্দর হলে এবং বন্দরের কার্যক্রম সারারাত খোলা থাকলে কেন ইমিগ্রেশন খোলা থাকবে না। এ বিষয়ে তারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
×