ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে গল্প সৃষ্টিকারী তদন্তে এখনও কমিটি নয় কেন?

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩ আগস্ট ২০১৭

পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে গল্প সৃষ্টিকারী তদন্তে এখনও কমিটি নয় কেন?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তির বিষয়ে মিথ্যা গল্প সৃষ্টিকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিশন গঠন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে কমিশন গঠন করে এ সংক্রান্ত তথ্য আদালতে দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মোবাইল ফোনে রিংটোন, ওয়েলকামটোন ও সব ভ্যালুয়েডেড সার্ভিস হিসেবে ভারতীয় হিন্দি ও বাংলা এবং উপমহাদেশের যেকোন দেশের সিনেমার গান ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার রিটে পক্ষভুক্ত হয়ে লড়বে মোবাইল ফোনভিত্তিক ভারতীয় কনটেন্ট নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান হাঙ্গামা (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেড। এদিকে অধস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা ও ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্যকে দুঃখজনক, অনভিপ্রেত ও চরম আপত্তিকর হিসেবে অভিহিত করেছে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপি সমর্থিত অংশ। পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তির বিষয়ে মিথ্যা গল্প সৃষ্টিকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিশন গঠন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে কমিশন গঠন করে এ সংক্রান্ত তথ্য আদালতে দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈতবেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়। এর আগে গত ২০ মার্চ পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা কাহিনী সৃষ্টির নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারী কারা এবং তা তদন্তে কমিশন গঠন হয়েছে কি না- আগামী ৭ মে’র মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা কাহিনী সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে একটি কমিশন বা কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় কেন আনা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়। রুলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, যোগাযোগ সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে ‘ইনকুয়ারি এ্যাক্ট ১৯৫৬’ অনুসারে কমিশন বা কমিটি গঠনে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা ৩০ দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ইউনূসের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান, বিচার দাবি’ শীর্ষক একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটিসহ কয়েকটি দৈনিকের প্রতিবেদন নজরে এলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এ আদেশ দেয়। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য চুক্তি করেও পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা স্থগিত এবং পরে বাতিল করে। পরে তাদের বাদ দিয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত গত ১০ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেন। রায়ে বিচারক বলেছেন, এ মামলায় প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গাল-গল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’। মোবাইলের রিংটোনে হিন্দি গানের পক্ষে লড়বে হাঙ্গামা মোবাইল ফোনে রিংটোন, ওয়েলকামটোন ও সব ভ্যালুয়েডেড সার্ভিস হিসেবে ভারতীয় হিন্দি ও বাংলা এবং উপমহাদেশের যেকোন দেশের সিনেমার গান ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার রিটে পক্ষভুক্ত হয়ে লড়বে মোবাইল ফোনভিত্তিক ভারতীয় কনটেন্ট নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান হাঙ্গামা (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেড। আদালতের এ সংক্রান্ত আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যারিস্টার মেহেদি হাসান চৌধুরী। আদালতে আইনী লড়াইয়ের জন্য হাঙ্গামার আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈতবেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়। আদালতে হাঙ্গামার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম। রিটকারী প্রতিষ্ঠান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ব্যারিস্টার মেহেদি হাসান চৌধুরী ও ব্যারিস্টার উপমা বিশ্বাস। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৯ জুলাই মোবাইল ফোনের রিংটোন বা ওয়েলকাম টিউনে হিন্দি, ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র বা উপমহাদেশের অন্য কোন দেশের সিনেমার গান ব্যবহার থেকে ‘বিরত’ থাকতে বলে হাইকোর্ট। আইনমন্ত্রী ও এ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য আপত্তিকর অধস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা ও ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্যকে দুঃখজনক, অনভিপ্রেত ও চরম আপত্তিকর হিসেবে অভিহিত করেছে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের দেয়া রায় ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে আইনমন্ত্রী ও এ্যাটর্নি জেনারেলের ঢালাও বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিন্দাও জানিয়েছে আইনজীবী সমিতি। একই সঙ্গে দেশের সব আইনজীবীকে সুপ্রীমকোর্টের পক্ষে থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বুধবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে সমিতির (বারের) পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচারকদের জন্য খসড়া বিধিমালা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে আইনমন্ত্রী এ ব্যাপারে আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করেছেন। তিনি অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানে যে ক্ষমতা সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে দেয়া হয়েছে তা সুপ্রীমকোর্ট নিয়ে নিতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন। আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রীমকোর্টের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শিত হয়েছে। অবিলম্বে মন্ত্রীকে দুঃখ প্রকাশ করে আপীল বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে প্রধান বিচারপতি নিজস্ব কোন বক্তব্য দেননি। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য সারাদেশের আইনজীবীদের বক্তব্য। আইনের শাসন রক্ষায় তার এই বক্তব্য। কাজেই প্রধান বিচারপতি একা নয় সারা বাংলাদেশের বার সমিতি এবং আইনজীবীরা তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত।
×