ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সমস্যায় জর্জরিত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ॥চিকিৎসা ব্যাহত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ আগস্ট ২০১৭

সমস্যায় জর্জরিত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ॥চিকিৎসা ব্যাহত

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জ জেলারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা নানা সমস্যায় জর্জরিত। জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে চলছে। জনবল সংকট, এ্যাম্বুলেন্স সেবার দুরবস্থা, নতুন ভবন হস্তান্তর না হওয়া সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যসেবা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও এর জনবল বাড়ানো হয়নি। অর্থাৎ আগের ৫০ শয্যার জনবল কাঠামো নিয়েই চলছে হাসপাতাল। তাই স্বাভাবিকভাবে এখানে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার ১০০ শয্যার জন্য যে ডাক্তার থাকার কথা সেই সংখ্যক ডাক্তারও নেই। বদলি বা অবসরজনিত কারণে ডাক্তার চলে যায়। তখন কর্তৃপক্ষকে পড়তে হয় বিপাকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ডাক্তার এনেও চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান। জানা যায়, গড়ে এখানে প্রতিদিন ৭-৮শ’ রোগী চিকিৎসা নেয়। রবিবার ও সোমবার রোগীর অনেক চাপ থাকে। তখন এ সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। মাত্র হাতেগোনা ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসাসেবা কতটুকু দেয়া হয় তা যে কেউ একটু হিসাব করলেই বুঝতে পারে। সিভিল সার্জন অফিসের সূত্রমতে, জেনারেল হাসপাতালে এখন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কনসাল্টেন্টের পদ খালি। এর মধ্যে রয়েছে শিশু বিভাগ, এনেশথেশিয়া বিভাগ ও চক্ষু বিভাগ। এদিকে প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো না থাকায় হাসপাতালের পরিবেশ বেশ নোংরা। এমনকি জেলার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে কোন গার্ড নেই। তাই হাসপাতালে রোগীদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। অন্যদিকে নতুন ভবনের কাজ প্রায় ৯৫ ভাগ শেষ হলেও তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কারণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তা হস্তান্তর করা হয়নি। জাইকার অর্থায়নে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মিত এই হাসপাতাল ভবনটি উদ্বোধন হলে নতুন আর ১৫০ শয্যা বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে রোগীদের প্রায়ই মেঝেতে থাকতে হয়। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় বেড কম। নতুন ভবনটি উদ্বোধন হলে সে সমস্যার সমাধান হতো। হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স সেবার অবস্থাও শোচনীয়। জানা গেছে, ৩টি এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ২টি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আর তৃতীয়টির অবস্থাও বেশ খারাপ। এই সুযোগে বেসরকারীভাবে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা জেঁকে বসেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্সের এক চালক বলেন, আমরা ঢাকায় রোগী নিতে আড়াই হাজার টাকা নেই। এ সকল সমস্যার কথা স্বীকার করে মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, ৫০ শয্যার লোকবল দিয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। আমরা মোটামুটিভাবে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। উপজেলা থেকে ডাক্তার ধার এনেও কাজ চালানো হয়। তিনি বলেন, ডাক্তার কম, কিন্তু রোগীর সংখ্যা অনেক। প্রতিদিন গড়ে ৭-৮শ রোগীকে বহির্বিভাগে সেবা দেয়া হয়। আমাদের অর্গানগ্রামটিও সঠিক নয় বলা যায়। এখানে গার্ডের কোন পদ নেই। আবার উল্টো উপজেলা কমপ্লেক্সে গার্ডের পদ আছে। এখানে গার্ড না থাকায় হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। হাসপাতাল কমপ্লেক্সে নতুন বিশাল ভবন করা হয়েছে আরও ২শ’ শয্যা বৃদ্ধির জন্য। তবে এই ভবন একবার আগে তৈরি সম্পন্ন হলেও পানির লাইসহ খুঁটিনাটি সামান্য কারণে এটি হস্তান্তর হচ্ছে না। তাই হাসপাতালটির প্রসার হচ্ছে না।
×