ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুরমার ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৩ আগস্ট ২০১৭

সুরমার  ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ, ২ আগস্ট ॥ ছাতক- দোয়ারাবাজার উপজেলায় সুরমা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সরকারী সড়ক বসতভিটাসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে সুরমা নদীর আগ্রাসীর থাবায় বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ১শ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এমনকি সুরমার পাড়ে বসবাসরত প্রায় ২ শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে জীবন বাঁচাতে নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। ভয়াবহ নদীভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে রাস্তা, ভিটেমাটি, হাট-বাজার, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। দ্রুতগতিতে রোধ করতে না পারলে অচিরে নদীগর্ভে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার আরও অনেক সরকারী দফতর, দোকান, বসতভিটা ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-ছাত্র, ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে নদীভাঙ্গন রোধে কয়েক দফায় সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন এমনকি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে একাধিক বার আবেদন করা হলেও এখনও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সুরমার নদীর তীরবর্তী ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের রামপুর, উজিরপুর, নুরুল্লাহপুর বাজার, নুরুল্লাহপুর গ্রামসহ নদীর তীরে অবস্থিত নুরুল্লাহপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সামনে বিশাল ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অব্যাহত ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে এসব গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক বসত-বাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু এসব ভাঙ্গন বিপরীতে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ১৯৪৮ সালে স্থাপিত হয় নুরুল্লাহপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রায় অর্ধেক জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে মাদ্রাসার ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। নুরুল্লাহপুর মাদ্রাসাসহ আশপাশ এলাকায় নদীভাঙ্গনের বিষয়ে ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল বলেন, ঘটনাস্থলে তিনি একাধিকবার পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। নদীভাঙ্গনে প্রকট আকার ধারণ করছে। এ বিষয়টি তিনি সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা বরাবরে একাধিকবার বলার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এলাকায় একাধিকবার পরিদর্শন করে শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন। রহস্যজনক কারণে আজও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন, তিনি নদীভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে নুরুল্লাহপুর মাদ্রাসাটি ধ্বংস হওয়ার পথে। এ বিষয়ে তিনি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করার এক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এখানে ভাঙ্গন রোধে গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হবে। দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী (বীর প্রতীক) বলেন, সুরমা নদীর ভাঙ্গন দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্যতম সমস্যা। এক বছর ধরে নদীভাঙ্গনের প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে গেছে। নদীভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রায় এক বছর পূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনও অনুমোদন হয়নি। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় উপ পরিচালক রঞ্জন কুমার দাস বলেন, নদীভাঙ্গন রোধের জন্য ভাঙ্গন এলাকার জরিপ করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটির অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।
×