ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তোফা-তহুরা ভাল আছে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ আগস্ট ২০১৭

তোফা-তহুরা ভাল আছে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ তোফা ও তহুরা ভাল আছে। ওদের অল্প অল্প করে স্বাভাবিক খাবার দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্যালাইনও চলছে। এখন ওরা আলাদাভাবে পাশাপাশি শুয়ে ওদিক-ওদিক তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ছে। কখনও কখনও ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি করছে। মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ওরা বুকের দুধ পান করছে। এরপর এদিক-ওদিক তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ছে। ওরা সুস্থ হয়ে উঠলে ৬ মাস পর ফের অস্ত্রোপচার করা হবে। বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু দুটি টিম লিডার শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার শাহনূর ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি জানান, বাচ্চা দুটি সুস্থ আছে তবে শঙ্কামুক্ত নয়। ৪৮ ঘণ্টা আগে তাদের বিপদমুক্ত বলা যাবে না। তাই সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। পরে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে তাদের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে দশদিন পর্যন্ত তাদের রাখা হবে। সহযোগী অধ্যাপক শাহনূর জানান, ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। তবে তারা এখনও ভাল আছে। বুধবার সকালে আমরা খাবার দিয়েছি। খেয়েছে। কান্না করেছে। তিনি জানান, বাচ্চা দুটিকে আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখছি। আমরা তাদের ভিজিটর ফ্রি রাখতে চাই। কারণ ভিজিটরের সঙ্গে ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে। সহযোগী অধ্যাপক শাহনূর ইসলাম জানান, মলত্যাগের জন্য অস্থায়ী মলদ্বার তৈরি করা হয়েছে। তাদের আরও ২-৩টা অস্ত্রোপচার লাগবে। ৬ মাস পর তাদের অস্ত্রোপচার করে মলদ্বারের রাস্তাগুলো বের করা হবে। ওই অপারেশনের দুই মাস পর অস্থায়ী মলদ্বারগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। তারা আপাতত এ ধকলগুলো কাটিয়ে উঠুক। সংবাদ সম্মেলনে শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আশরাফ উল হক কাজল জানান, শিশু দুটির ৬ মাস পর ফের অস্ত্রোপচার করা হবে। তিনি জানান, তোফা ও তহুরা এখন সুস্থ আছে কিন্তু আশঙ্কামুক্ত নয়। তাদের অল্প করে স্বাভাবিক খাবার দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্যালাইনও চলছে। তিনি জানান, মেয়ে দুইটার কিছু জন্মগত সমস্যা ছিল। আমাদের আগে সেগুলো ঠিক করতে হবে। ৬ মাস পর তাদের অস্ত্রোপচার করে মলদ্বারের রাস্তা বের করা হবে। এ সময় শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক সামিদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, এখনও পর্যন্ত তারা ভাল আছে। তবে ছয় মাস পর বাচ্চা দুটোর আরও দুই-তিনটি অপারেশন লাগবে। তিনি জানান, মঙ্গলবার ঢামেকে ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। সফলভাবে অস্ত্রোপচার হয়েছে। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অস্ত্রোপচার পরবর্তী সময়ে তারা ভাল আছে। তাদের সুস্থ সুন্দরভাবে পরিচর্চা চলছে। অপারেশন আমাদের পরিকল্পনা মোতাবেক হয়েছে। তাদের রিলিজে আগে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হবে। পরে তাদের (বোর্ডের) পরামর্শ মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রাত সাড়ে ৭টার দিকে শিশু সার্জারি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক শাহনূর জনকণ্ঠকে জানান, ওরা শিশু পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে আছে। এখনও পর্যন্ত ভাল আছেন। সুস্থ আছেন। একটু কান্নাকাটি করলে শিশু দুটির মা গিয়ে ওদের বুকের দুধ পান করিয়ে আসে। এরপর ঘুমিয়ে পড়ছে। পাশাপাশি স্যালাইন চলছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে শুরু হয় তোফা-তহুরার অপারেশন। টানা নয় ঘণ্টা অপারেশন শেষে বিকেল ৫টার দিকে তাদের রাখা হয় পোস্ট অপারেটিভ ইউনিটে। সন্ধ্যার আগে জ্ঞান ফেরে তাদের। এ সময় তারা নড়াচড়া করতে শুরু করে। কান্নাও করে। ডাঃ শাহনূর এ সময় জানান, ২৪ ঘণ্টা তাদের এ পোস্ট অপারেটিভে রাখা হয়েছে। এরপর বুধবার সকালে তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। শাহনূর ইসলাম জানান, গত ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নিজবাড়িতে দাইয়ের মাধ্যমে রাজ মিয়া ও সাহিদা আক্তার দম্পতির এ জোড়া শিশুর জন্ম হয়। তিনি জানান, এরপর গত বছরের ৭ অক্টোবর ৯ দিন বয়সে জোড়া শিশু দুটিকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে তাদের ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে জোড়া লাগা শিশু দুটি ভর্তি রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে জোড়া শিশু দুটির প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করা হয়। তখন ছোট একটি অপারেশনের মাধ্যমে তাদের পায়খানার রাস্তা আলাদা করে দেয়া হয়। শিশু দুটির রক্তে সেপটিসেমিয়া ও ওজন ছিল সাড়ে ৪ কেজি। যা অস্ত্রোপচারের জন্য উপযুক্ত ছিল না। এখন জোড়া শিশু ২টির ওজন ১০ কেজি। তাদের অস্ত্রোপচারের জন্য উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে। সহযোগী অধ্যাপক শাহনূর ইসলাম জানান, শিশু দুটির অস্ত্রোপচারের জন্য শিশু সার্জারি, নিউরো সার্জারি, ইউরোলজি, রেডিওলজি (আল্টাসাউন্ড) ও প্লাস্টিক সার্জারিসহ আরও বেশ কয়েকটি বিভাগের চিকিৎসকের সমন্বয়ে ১৬ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ডাক্তার শাহনূর নিজেই এবং এ বোর্ডের মোট সদস্য সংখ্যা ৩০ জন।
×