ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

’১৯ সালে একাংশ চালুর পরিকল্পনা

মেট্রোরেলের স্টেশন ও উড়ালপথ নির্মাণকাজ উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ আগস্ট ২০১৭

মেট্রোরেলের স্টেশন ও উড়ালপথ নির্মাণকাজ উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যোগাযোগ খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে মেট্রোরেলের স্টেশন ও উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের কাছে এই কাজের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২০১৯ সালে মেট্রোরেলের একাংশ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ আট ভাগ বা আটটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর কাজ উদ্বোধন করা হলো। এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উড়ালপথ নির্মাণ করা হবে। এই উড়ালপথেই মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ করা হবে। আর স্টেশনগুলোও হবে উড়ালপথে। নয়টি স্টেশন ও ১২ কিলোমিটার উড়ালপথ নির্মাণের কাজ পেয়েছে ইটাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। আর প্রকৌশলগত দিক দেখভাল করবে এনকেডিএম এ্যাসোসিয়েশন নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। এই মেট্রোরেলের পথটির নাম দেয়া হয়েছে এমআরটি-৬। দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। শুরু উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে এবং পল্লবী, ফার্মগেট, দোয়েল চত্বর, প্রেসক্লাব হয়ে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে গিয়ে শেষ হবে। পুরোটাই হবে উড়ালপথে। এই পথে স্টেশন হবে ১৬টি। সংশ্লিষ্টরা জানান, উত্তরায় ডিপো নির্মাণকাজ করছে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উড়ালপথ নির্মাণের পর লাইন বসানো, ইঞ্জিন-কোচ ক্রয় এবং বিদ্যুতের সাবস্টেশন বসানোর কাজ হবে আলাদা প্যাকেজের অধীনে। আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চালু করার কথা রয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাকি অংশ ২০২০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। তবে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। সব মিলিয়ে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেবে জাপানের সংস্থা জাইকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগাবে সরকার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার কারণে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ আট মাস পিছিয়ে গেছে। এখন একধাপ এগিয়ে যাওয়া হলো। সময়মতোই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, এর মধ্যে মেট্রোরেল অন্যতম। এটি স্বপ্নের প্রকল্প, যা বাস্তবায়ন হতে চলেছে। আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনের পাশের বড় সড়কের পূর্ব প্রান্ত ঘিরে ক্রেনসহ যন্ত্রপাতি বসিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার একটি কোম্পানি গঠন করেছে। যার নাম ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটির সূত্র বলছে, প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী। প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের কম। মেট্রোরেলের প্রস্তাবিত ১৬টি স্টেশন হচ্ছেÑ উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও হোটেল, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায়। এর মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত নয়টি স্টেশন নির্মাণের কাজ আজ উদ্বোধন করা হয়েছে। দেখা গেছে, আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনের পাশের বড় সড়কের পূর্ব প্রান্ত ঘিরে ক্রেনসহ যন্ত্রপাতি বসিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখানেই উড়ালপথ ও স্টেশনের ভিত্তি নির্মাণের কাজ চলবে। মেট্রোরেলের উত্তরা হতে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় বারো কিলোমিটার উড়ালপথ এবং নয়টি স্টেশনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পে জাইকার প্রকল্প সহায়তা প্রায় ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, আটটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে সকল প্যাকেজের দরপত্র আহ্বানের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি প্যাকেজের আওতায় প্রায় চার হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বারো কিলোমিটার উড়ালপথ এবং নয়টি স্টেশন নির্মিত হতে যাচ্ছে বলে মন্ত্রী এ সময় জানান। উল্লেখ্য, প্রথম পর্যায়ে বারো কিলোমিটার উড়ালপথ এবং উত্তরা-উত্তর, উত্তরা-সেন্টার, উত্তরা-দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া এবং আগারগাঁও স্টেশন নির্মাণ করা হবে। আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা হতে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম পর্যায় এবং ২০২০ সালের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ শেষ হবে। অনুষ্ঠানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ-ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আহম্মেদ, মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক আফতাব উদ্দিন খানসহ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং প্রকল্পের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। ২০১৬ সালের ২৬ জুন মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে প্রথম পর্যায়ের ওই কাজ আরও একটু এগিয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে সাধারণ মানুষের জন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত আরও একটু সহজ হবে। জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই পরামর্শ দিলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এর মিল নেই। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের সীমাবদ্ধ থাকছে।
×