ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চার বছরে উৎপাদন বেড়েছে ২০ লাখ বেল

কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানিতে আয় বেড়েছে ৩২৩ কোটি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ আগস্ট ২০১৭

কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানিতে আয় বেড়েছে ৩২৩ কোটি

এমদাদুল হক তুহিন ॥ পাটের সোনালি ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও ৭ বছরের ব্যবধানে দেশে কাঁচাপাটের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৮ লাখ বেল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উৎপাদন সর্বনিম্ন রেকর্ড স্পর্শ করায় ৪ বছরের ব্যবধানে কাঁচাপাটের উৎপাদন বেড়েছে ২০ লাখ বেল। এ সময়কালে সরকারী বিভিন্ন নীতির কারণে কমানো হয়েছে কাঁচাপাটের রফতানি। একই সঙ্গে কমেছে রফতানি আয়। আর ৭ বছরের ব্যবধানে কাঁচাপাট রফতানিতে আয় কমেছে ৮১৩ কোটি টাকা। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, কাঁচাপাট রফতানির চেয়ে পাটজাত দ্রব্য রফতানিতেই অধিক মনোযোগ দিচ্ছে সরকার। এ সময়কালে বেসরকারী বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে আসছে পাটজাত দ্রব্য উৎপাদনে। ফলে দেশে বেড়েছে কাঁচাপাটের ব্যবহার। বহুমুখী পাটপণ্যের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন পণ্য। আর দেশে বর্তমানে প্রায় ২৫৯ ধরনের পাটপণ্য রয়েছে। ফলে ৬ বছরের ব্যবধানে দেশে পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। একই সময়ে পাটজাত দ্রব্য রফতানিতে আয় বেড়েছে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৬ থেকে ৭ বছর সময়কাল ব্যবধানে কাঁচাপাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানিতে দেশের আয় বেড়েছে ৩২৩ কোটি টাকা। এদিকে, পাটের ভর মৌসুমে গ্রামে গ্রামে চলছে এখন পাটের কর্তন। মহাব্যস্ত সময় পার করছেন পাটচাষীরা। পাট অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে পাটের ফলন ভাল হয়েছে। বছরটিতে কাঁচাপাটের উৎপাদন হতে পারে ৮৬ লাখ বেল। কৃষক পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে পাটের দাম ভাল। প্রকারভেদে সতেরো শ’ টাকা থেকে শুরু হয়ে ২ হাজার টাকা মণে পাট বিক্রি হচ্ছে। আর কৃষক পর্যায়ে পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পাট কিনতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। ১৭৫০ থেকে ১৮০০ টাকা মণে পাট কিনছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাটি। পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ শামছুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, পাট কাটা এখনও শেষ হয়নি। বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে এখন পাটের ভর মৌসুম। আমরা আশা করছি, গতবারের চেয়ে পাটের উৎপাদন ভাল হবে। বছরটিতে কৃষক ভাল দাম পাচ্ছে। তিনি বলেন, পাট নিয়ে আমরা আশাবাদী। পাট তার অতীত ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করছে এবং অনেকদূর এগিয়ে যাবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাটের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ৭ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৮ লাখ বেল, ৪ বছরে ২০ লাখ বেল পাট অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে ৭৮ দশমিক শূন্য ২ লাখ বেল কাঁচাপাট উৎপাদন হয়। বছরটিতে কাঁচাপাট রফতানি হয় ২১ দশমিক ১২ লাখ বেল। আর ওই বছর কাঁচাপাট রফতানি করে আয় হয় ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। পরের অর্থবছরে (২০১১-১২) দেশে কাঁচাপাটের উৎপাদন হয় ৭৮ দশমিক শূন্য ৫ লাখ বেল। রফতানি হয় ২২ দশমিক ৮৫ লাখ বেল। আর রফতানি আয় ১ হাজার ৫৪০ কেটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে কাঁচাপাটের উৎপাদন কমে ৭৫ দশমিক ৭২ লাখ বেলে নেমে আসে। কমে রফতানিও। ২০ দশমিক ৫৫ লাখ বেল কাঁচাপাট রফতানি করে ওই অর্থবছরে আয় হয় ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পরের অর্থবছরে (২০১৩-১৪) কাঁচাপাটের উৎপাদন কমে ৬৭ দশমিক ৮৫ লাখ বেলে নেমে আসে। এক ধাক্কায় কাঁচাপাটের রফতানিও নেমে আসে অর্ধেকে। বছরটিতে মাত্র ৯ দশমিক ৮৪ লাখ বেল কাঁচাপাট রফতানি করে দেশের আয় হয় ৭০৬ কোটি টাকা। তবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে কাঁচাপাটের উৎপাদন বেড়ে ফের ৭৫ দশমিক ০৫ লাখ বেলে উন্নীত হয়। তবে সরকারী বিভিন্ন নীতির কারণে কাঁচাপাটের রফতানি আর তেমন বাড়ানো হয়নি। বছরটিতে ১০ লাখ বেল কাঁচাপাট রফতানি করে দেশের আয় হয় ৮১৬ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কাঁচাপাটের উৎপাদন পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১০ লাখ বেড়ে ৮৫ লাখ বেলে উন্নীত হয়। আর ১১ দশমিক ৭৪ লাখ বেল কাঁচাপাট রফতানি করে আয় হয় ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ৮৮ লাখ বেল কাঁচাপাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও মে ১৭ পর্যন্ত ৭৬ লাখ বেল কাঁচাপাট উৎপাদন হয়েছে। বছরটিতে ১১ দশমিক ২৬ লাখ বেল কাঁচাপাট রফতানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে কাঁচাপাটের উৎপাদন ও রফতানি আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের পর থেকে টানা তিন বছর কাঁচাপাটের উৎপাদন বাড়ছে। মাত্র ৪ বছরে দেশে কাঁচাপাটের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২০ লাখ বেল। এ সময়কালে বেড়েছে রফতানি আয়ও। তবে ৭ বছরের ব্যবধানে দেশে কাঁচাপাটের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৮ লাখ বেল। একই সময়কালে কাঁচাপাট রফতানিতে আয় কমেছে ৮১৩ কোটি টাকা। আর সময়কাল ব্যবধানে দেশের কথা চিন্তা করে কাঁচাপাট রফতানির চেয়ে পাটজাত দ্রব্য রফতানিতেই বেশি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। ফলে সঙ্গত কারণেই বেড়েছে পাটজাত দ্রব্য রফতানিতে দেশের আয়। ৬ বছরে পাটজাত দ্রব্য রফতানিতে আয় বেড়েছে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন ও রফতানি তথ্য থেকে দেখা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে ৭ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন হয়। আর ৫ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে আয় হয় ৫ হাজার ১০৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। পরের ২০১১-১২ অর্থবছরে ৮ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন হয়। বছরটিতে ৭ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে আয় হয় ৫ হাজার ৬১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। পরের ২০১২-১৩ অর্থবছরে উৎপাদন, রফতানি ও রফতানি আয়ের তিন সূচকেই পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় এগিয়ে যায় দেশ। বছরটিতে ৯ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন হয়। আর ৮ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে দেশের আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ১৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকায়। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কাঁচাপাটের উৎপাদন কমলেও পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। বছরটিতে দেশে ৯ লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন হয়। আর ৮ লাখ ৮ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে আয় হয় ৫ হাজার ২২৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৮ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন হয়। ৮ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে আয় হয় ৫ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৯ লাখ ৬৩ হাজার মেট্রিক টন। আর ৮ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে দেশের আয় হয় ৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে ৬ বছরের ব্যবধানে পাটজাত দ্রব্যের রফতানি বেড়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। আর একই সময়কালে পাটজাত দ্রব্য রফতানি থেকে আয় বেড়েছে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। পাটবীজে আমদানি নির্ভরতা কমাতে চায় সরকার তথ্য থেকে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে উচ্চ ফলনশীল পাটবীজের চাহিদা ছিল ৫ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। বিএডিসি, পাট অধিদফতর, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মিলিয়ে ২ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন পাট বীজের যোগান দেয়। বছরটিতে বাকি ৩ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন পাটবীজ আমদানি করতে হয়। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পরিকল্পনায় পাটবীজের চাহিদা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। বীজের চাহিদা বাড়লেও পাটবীজের আমদানি নির্ভরতা কমাতে চায় সরকার। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় চাহিদা ১০০ মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেলেও আমদানির লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হয়েছে ৪০০ মেট্রিক টন। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণভাবে ৫০০ মেট্রিক টন পাটবীজের উৎপাদন বৃদ্ধি তথা সরবরাহের লক্ষ্য রয়েছে। পাট অধিদফতরের স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা পাটের সোনালি ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার। নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বর্তমান সরকার পাটকে ক্রিকেটের সমপর্যায়ে নিতে চায়। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পাট অধিদফতরও নিয়েছে স্বল্পমেয়াদী এক পরিকল্পনা। স্বল্পমেয়াদী ওই পরিকল্পনা থেকে দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ লাখ বেল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণভাবে ৬৮ লাখ বেল কাঁচাপাটের ব্যবহার হলেও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ব্যবহার ৬৯ লাখ বেল ধরা হয়েছে। পাটপণ্যের উৎপাদন, পাটপণ্যের রফতানি, পাটপণ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যও রয়েছে সরকারের। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণভাবে পাটপণ্যের ব্যবহার ১ লাখ মেট্রিক টন বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বহুমুখী পাটপণ্যের উৎপাদন, বহুমুখী পাটপণ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার ও বহুমুখী পাটপণ্যের রফতানি বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। ১৮০০ টাকা মণে পাট কিনছে সরকার মৌসুমের শুরুতেই পাট কিনতে মাঠে নেমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। কৃষক যাতে পাটের নায্যমূল্য পায় সেজন্য আগেভাগেই পাট কেনা শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ সংস্থা। সূত্র মতে, চলতি মৌসুমে ১ হাজার কোটি টাকার পাট কিনবে বিজেএমসি। ইতোমধ্যে সরকার ২০০ কোটি টাকা পাট কেনার জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া মিলগুলো ও বিজেএমসি গতবারের মতো এবারও প্রায় ৬০০ কোটি টাকা যোগান দেবে। বাকি টাকা সরকারের কাছ থেকে নেয়া হবে। বিজেএমসির তথ্যমতে, দেশে এবার পাটের ফলন ভাল হয়েছে। গত বছর কৃষক পাটের নায্যমূল্য পাওয়ায় পাট চাষে উৎসাহিত হয়েছে। আর সরকারও চাচ্ছে চাষীদের এ আগ্রহ ধরে রাখতে। তাই গত মৌসুমে ৮০৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার পাট কিনলেও এবার ১ হাজার কোটি টাকার পাট কেনা হবে। এছাড়া এবার পাট কেনার লক্ষমাত্রাও পূরণ করা হবে। পাট অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে সারাদেশে ৭ লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে ৭৭ লাখ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে ৭৮ কোটি টাকার পাটের ক্ষতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক তথ্য থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জাতীয়ভাবে পাটের আবাদকৃত জমির পরিমাণ ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৬ হেক্টর। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে ৩০ জেলায় ৭ হাজার ৪৬৮ হেক্টর জমির পাটের ক্ষতির হয়েছে। এতে মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭৮ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৫৮ হাজার ৮১৯। পাটচাষীদের কথা ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার নতুনবাজার এলাকার পাটচাষী হানিফ বেপারি। মৌসুমটিতে ১ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন জানিয়ে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, অন্য বারের তুলনায় এবার পাটের ফলন ভাল হয়েছে। এলাকায় এখন পাট কাটার মৌসুম চলছে। বছরটিতে বিঘা প্রতি ১৭ থেকে ১৮ মণ করে পাটের উৎপাদন হয়েছে। দাম প্রসঙ্গে এই পাটচাষী বলেন, বাজারে পাটের দাম ভালই পাওয়া যাচ্ছে। প্রকারভেদে সতেরো শ’ থেকে ২ হাজার টাকায় পাট বিক্রি হচ্ছে। নড়াইলের মাইজপাড়া এলাকায় ৩ একর জমিতে পাট চাষ করেন কৃষ্ণ বাবু। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, চলতি বছর পাটের উৎপাদন ভাল হয়েছে। এখন পাটের ভর মৌসুম। পাট জাগ দেয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কাঁচাপাটের উৎপাদন শেষ হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাজারে পাটের দাম ভাল। শুকনা পাট প্রকারভেদে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১ হাজার ৯০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। সামগ্রিক প্রসঙ্গে পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ শামছুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, কৃষক তার উৎপাদনে লাভ চাইবে। এক্ষেত্রে ধানের চেয়ে পাট চাষে যদি লাভ হয় তাহলেই কৃষক পাটের দিকে ঝুঁকবে। অর্থাৎ ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারলেই পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। চারকোল বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চারকোল মালিকদের কিভাবে লাইসেন্স দেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচলা চলছে। লাইসেন্সের জন্য ফি কত টাকা নির্ধারিত হবে মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুতই সিদ্ধান্তে আসা যাবে। তিনি আরও বলেন, পাট চাষে ফসলের উন্নত প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে পারলে আমরা লাভবান হব। সে লক্ষ্যেও কাজ চলছে।
×