আষাঢ়-শ্রাবণÑএই দুই মাস বৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক। বিগত বছরগুলোতেও বর্ষাকালে একাধারে বর্ষণের ফলে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এবার বিগত সকল বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে জলাবদ্ধতার আকার ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছে। পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই পানির কারণেই এখন জনজীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ। চারদিকে পানি আর পানি। মনে হয় যেন কোন নদীর ওপর ভাসমান নগরী স্থাপন করে ঢাকাবাসী বাস করছে।
এই অবস্থায় ঢাকার প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার জরুরী হয়ে পড়েছে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদে আরও কিছু খাল খনন করা যেতে পারে। এখনকার ঢাকায় হয়ত নতুন করে খাল খনন করা সম্ভব নয়। কিন্তু নতুন নতুন যেসব আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে, সেখানে প্রাকৃতিক ও উন্মুক্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং জলাধার রাখার বিকল্প নেই। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দিকে এসে প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা থেকে সরে এসেছে ঢাকা। এই সময়ে অপরিকল্পিতভাবে শহর সম্প্রসারিত হয়েছে এবং খাল ও জলাধারগুলো ভরাট করা হয়েছে। এই খালগুলো উদ্ধার করতে সকলের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
পানি নিম্নগামী, যা সমতা রক্ষা করে চলে। পানি প্রবাহ নিষ্কাশনে বাধা পেলে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক। ঢাকার আশপাশে এক সময় যথেষ্ট সংখ্যক নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় ছিল। বর্তমানে যার কয়েকটি ছাড়া প্রায় সব ক’টিই প্রভাবশালীদের লোলুপ দৃষ্টির শিকার হয়ে মরে যেতে বাধ্য হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই সমস্ত খাল ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। ফলে পানি জমে থাকার নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা না পেয়ে একটু নিচু জায়গা বা সর্বত্রই আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলজট। আবার আবর্জনার স্তূপ জমে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনে এসে জমছে। ফলে পানি নিষ্কাশনের বিকল্প কোন পথ না থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে এই জলাবদ্ধতা। এই সমস্যা দুয়েক দিনেই যেমন সৃষ্টি হয়নি, তেমনি স্বল্প সময়ে এর নিরসন করাও সম্ভব নয়।
ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নির্মাণ ও পয়োনিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না করলে এই সমস্যা নিরসনের কোন উপায় নেই বলেই মনে করি। সাময়িক পানি নিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য সর্বক্ষণিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকতে হবে। তাছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি তা হলো খাল-বিল, নদী-নালা ভরাটরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। সর্বোপরি সিটি মেয়রদ্বয়, ওয়াসা ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগেই কেবল এই পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসা সম্ভব।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে