ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মানব পাচার

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩ আগস্ট ২০১৭

মানব পাচার

বাংলাদেশের ৯৩ হাজারেরও বেশি মানুষ সাগরপথে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশ করায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানায়। অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত নিয়ে আসার ওপরও বিশেষ জোর দেয় তারা। রবিবার আন্তর্জাতিক মানব পাচার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এক পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, যেসব অপরাধী কিংবা দালাল চক্র মানব পাচারের মতো অনৈতিক, অবৈধ কার্যকলাপে নিযুক্ত আছে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান করা এই মুহূর্তে বিশেষ জরুরী। পরামর্শ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচীর প্রধান শরীফুল ইসলাম হাসান। তাঁর আলোচনায় উঠে আসে ইউরোপে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা ঠিক কত সে পরিসংখ্যান কারও জানা নেই। তবে এপ্রিল মাসে ঢাকায় আসা ইউরোপীয় প্রতিনিধি দল ইউরোপে প্রায় ৮০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশীর সংখ্যা উল্লেখ করেছেন। সে দেশের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৪৩৫ বাংলাদেশী অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করে। এরপর থেকে প্রায় দেড় বছরে এর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলেও তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ২০১২ সালে মানব পাচার বিরোধী আইনের প্রসঙ্গ তুলে অভিযোগ করা হয় এই আইন প্রয়োগের নমুনা এ পর্যন্ত সেভাবে দৃশ্যমান হয়নি। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩ হাজার মামলা করা হলেও যাবজ্জীবন শাস্তি পেয়েছে মাত্র ৩০ জন। আইনী ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে না পারলে মানব পাচারের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধকে ঠেকানো সম্ভব হবে না। মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করে অপরাধীচক্র যেভাবে অবৈধ আর অন্যায় পথে দেশের মানুষকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থার দিকে ঠেলে দেয় তা যেমন আইন ও সমাজবহির্ভূত পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধেরও চরম লঙ্ঘন। এই অপরাধীচক্র আন্তর্জাতিকভাবে এমন এক শৃঙ্খলে আবদ্ধ যেখান থেকে বেরিয়ে আসা অত সহজ ব্যাপার নয়। এই বৈশ্বিক অপরাধ চক্র এমন ক্ষমতাধর যাদের চিহ্নিত করেও শাস্তির আওতায় আনা অত্যন্ত কঠিন এক ব্যাপার। তারপরও এই সংঘবদ্ধ অপরাধের মূল চক্রকে শনাক্ত করতেই হবে। এ ব্যাপারে গণসচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরী বলে উল্লেখ করা হয়। গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে আবশ্যক। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বক্ষণিক নজরদারি জরুরী। প্রসঙ্গক্রমে উঠে আসে প্রায় দুই বছর আগে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে যাওয়ার পর গণকবরে অনেকেরই স্থান হওয়ার বিষয়। গত চার বছরে বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে প্রায় দেড় লাখ লোক পাচারের শিকার হয়েছে। তার মধ্যে দেড় হাজার মানুষ সাগরেই মারা যায়। প্রায় দুই শ’ বাংলাদেশীর গণকবর শনাক্ত করা হয়েছে। অনেক অপরাধী ধরা পড়লেও সবাইকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। হাতেগোনা কয়েকজন শাস্তি পেলেও অধিকাংশ মামলা এখনও দীর্ঘসূত্রতার জালে আটকা পড়ে আছে। যেসব ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তাদের অভিযোগ, তারা এখনও কোন ন্যায্য বিচার পায়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে এসব অন্যায়, অপরাধ এবং গর্হিত অপকর্মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানানো হয়। পরামর্শ সভায় সবাই একমত পোষণ করেন যে, এ ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ করতে সবধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। জনগণও আশা করে এই ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপ।
×