ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পানি আলোচনায় আশাবাদ

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩ আগস্ট ২০১৭

পানি আলোচনায় আশাবাদ

ভারত ও পাকিস্তান বিলম্বিত পানি আলোচনা শেষ করেছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পানি নিয়ে ভবিষ্যতে দুদেশ উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি এড়াতে পারবে এমন আশা নিয়েই এই বৈঠক শেষ হয়। পানি নিয়ে কোন বিবাদে জড়িয়ে গেলে তা দু’প্রতিবেশীর কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। ডন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সিন্ধু নদের জল বণ্টন চুক্তির ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে দেয়া এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ‘উভয় পক্ষ আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে, সেপ্টেম্বরে তারা ওয়াশিংটনে আবার বৈঠকে বসবে। পানি নিয়ে দুদেশের মধ্যে সচিব পর্যায়ের এই বৈঠক সহযোগিতাপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় বলে বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি। এর আগে ২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত নভতেজ সারনাকে চিঠি দিয়ে জানায়, ‘আলোচনা সামনে এগিয়ে নিতে উভয়পক্ষকে নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীনভাবে সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংক প্রস্তুত রয়েছে’। ভারত ও পাকিস্তান এর আগে মার্চে দুদেশের মধ্যে বৈঠক করেছে। পারমানেন্ট ইন্ডাস কমিশনের (পিআইসি) আওতায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দুপক্ষ দুটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করে। জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতের দুটি জলবিদ্যুত প্রকল্প নিয়ে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান। বিষয়টি নিয়ে ইসলামাবাদ গত বছর বিশ্বব্যাংকের শরণাপন্ন হয়। সিন্ধু নদের জল বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী ৫৭ বছর ধরে দুই দেশ বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় নিয়মিত আলোচনায় বসে আসছিল। এ কারণে ভারতের ওই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় শালিস চেয়েছিল ইসলামাবাদ। অন্যদিকে ভারত বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য একজন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ চেয়েছিল। পাকিস্তানের দাবি ভারত ওই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিন্ধু নদের জল বণ্টন চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ভারত ও পাকিস্তানের অনুরোধের প্রেক্ষিতে গতবছর নবেম্বরে বিশ্বব্যাংক নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ ও শালিস আদালত গঠনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ভারতের আপত্তির মুখে দুটো কাজ একইসঙ্গে করার প্রচেষ্টা থেমে যায়। এরপর বিশ্বব্যাংক দুপক্ষের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনায় বসে। ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুদিনের ওই বৈঠক পাকিস্তান প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন দেশটির পানি ও জ্বালানি সচিব ইউসুফ নাসিম। অন্যদিকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন সেদেশের পানি সম্পদ সচিব ড. অমরজিৎ সিং। প্রতিনিধি দলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে ভারত ওই আলোচনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিল। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে সিন্ধু নদের জল বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। করাচীতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুসারে ভারত সিন্ধু নদসহ ঝিলম, চেনাব, সুতলেজ, বিপাশা ও রাভি নদীর ৮০ শতাংশ পানি পাকিস্তানকে দিতে সম্মত হয়। সামান্য কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আজ অবধি চুক্তিটি বহাল আছে। গত সেপ্টেম্বরে ভারত চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী দুদেশের কর্মকর্তারা প্রতি দু’বছর পরপর যে নিয়মিত বৈঠকে বসার কথা থাকলেও ২০১৩ সাল থেকে ভারত বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছে। সিন্ধু নদের উজান থেকে সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব তিনটি নদীর কাশ্মীর উপত্যকা দিয়ে পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারত ওই চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলে নদীগুলোর ৮০ শতাংশ পানি নয়াদিল্লীর একতরফা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসে যাবে। কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ লাখ লাখ মানুষের জীবিকার সংস্থানের জন্য পাকিস্তান সিন্ধু নদের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল।
×