ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ই-মেইল কেলেঙ্কারি ট্রাম্প পুত্র কি ফেঁসে যাবেন?

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২ আগস্ট ২০১৭

ই-মেইল কেলেঙ্কারি  ট্রাম্প পুত্র কি ফেঁসে যাবেন?

এবার আলোচনায় এসেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। তার ই-মেইল নিয়ে স্ক্যান্ডালের জন্ম হয়েছে যার পরিণতিতে তাকে সিনেট কমিটিতে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। ২০১৬ সালের ৩ জুন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের কাছে একটা ই-মেইল আসে। পাঠিয়েছিলেন ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকার সাংবাদিক থেকে পাবলিসিস্ট বনে যাওয়া রব গোল্ডস্টোন। ই-মেইলটি ছিল এমন : ‘রাশিয়ার ক্রাউন প্রোসিকিউটর ট্রাম্পের প্রচারাভিযানে কিছু সরকারী নথিপত্র ও তথ্য যোগাতে চান যা হিলারিকে ও রাশিয়ার সঙ্গে তার কাজ কারবারকে নিন্দনীয় করে তুলবে এবং আপনার পিতার খুব কাজে লাগবে। স্বভাবতই তথ্যগুলো অতি উচ্চ পর্যায়ের এবং স্পর্শকাতর। তবে তা মি. ট্রাম্পের প্রতি রাশিয়া ও তার সরকারের সমর্থনের অংশ।’ ই-মেইলটি পাওয়ার ২০ মিনিট পর ডোনাল্ড জুনিয়র জনাব দেন : ‘মনে হচ্ছে আমাদের কিছু সময় আছে এবং আপনি যা বলছেন তাই যদি হয় তাহলে বিশেষভাবে গ্রীষ্মের শেষ দিকে ওটা পেতে পারলে ভাল।’ পরদিন গোল্ডস্টোনের কাছ থেকে আরেকটা ই-মেইল আসে যার কথাগুলো ছিল : ‘এমনি বলছিল যে রুশ সরকারের এ্যাটর্নি যিনি মস্কো থেকে আসছেন তার সঙ্গে আপনার একটা বৈঠকের সময় যেন আমি নির্ধারণ করি।’ এর জবাব দেন ডোনাল্ড জুনিয়র : ‘বেলা তিনটার দিকে আমাদের অফিসে হলে কেমন হয়? ধন্যবাদ রব। বৈঠক নির্ধারণে সাহায্য করার জন্য আপনার প্রশংসা করতে হয়।’ তা রুশ আইনজীবীর সঙ্গে সেই বৈঠকটি যথারীতি ৯ জুন নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং তাতে ট্রাম্পের সে সময়কার নির্বাচনী প্রচার ম্যানেজার পল মানাকোর্ট, ট্রাম্প জামাতা জারেভ কুশনারও উপস্থিত ছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সম্প্রতি এই বৈঠকের বিষয়টি উদ্ঘাটন করে। গত বছরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার যে হস্তক্ষেপ ছিল এ হলো তার আরেকটা নজির। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার আগেই রাশিয়ার বিনিয়োগকারী ও খদ্দেররা ট্রাম্পের সম্পত্তি ব্যবসাকে আর্থিক সঙ্কট থেকে উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের তৎকালীন ডিরেক্টরের বিচারে রুশ সরকার ট্রাম্পকে সাহায্য করতে ও হিলারির ক্ষতিসাধন করতে এই নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিল। এ বছরের মে মাসে সংস্থার নতুন ডিরেক্টরও একই উপসংহারে পৌঁছান। ট্রাম্প নির্বাচনে জিহন এমনটা ক্রেমলিন সত্যই চেয়েছিল কিনা, নাকি স্রেফ অবিশ্বাস ও বিভেদের বীজ বপন করতে চেয়েছিল এটা পরিষ্কার নয়। তবে ডোনাল্ড জুনিয়রের সঙ্গে রুশ কানেকশনের ব্যাপারটা আলাদা। ‘অতি উচ্চ পর্যায়ের ও স্পর্শকাতর’ তথ্য আসলেই পরিবেশিত হয়েছিল কি হয়নি সেটা ভিন্ন কথা। ডোনাল্ড জুনিয়র যে রাশিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে তার কাছে উপস্থাপিত এবং হিলারির দুর্নাম রটানোর মতো তথ্য দিতে আগ্রহী এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলেন সেটা তার ই-মেইলেই স্পষ্ট। ট্রাম্প টাওয়ারে ৯ জুনের সেই বৈঠকে পল মনোকোট ও জাবেড় কুশনারের সঙ্গে যিনি মিলিত হয়েছিলেন তিনি রুশ এ্যাটর্নি ভেসেলনিটস্কায়া। ডোনাল্ড জুনিয়র অবশ্য বলেছেন যে বৈঠকে কোন উচ্চ পর্যায়ের ও স্পর্শকাতর তথ্য পরিবেশিত হয়নি। তাড়া আসলে আমেরিকানদের রুশ সন্তান দত্তক নেয়ার বিধান নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। গত ১৪ জুলাই বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত করা হয় যে ৯ জুনের বৈঠকে পঞ্চম ব্যক্তিও একজন ছিলেন যার কথা আগে প্রকাশ পায়নি। ইনি রুশ-আমেরিকান লবিয়িস্ট রিনাত আখমেতসিন এবং ওই বৈঠকটা ছিল ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার সংক্রান্ত। এসব তথ্য থেকে যদি প্রমাণ হয় যে একটা বৈরী বিদেশী শক্তির সঙ্গে যোগসাজশের চেষ্টা হয়েছিল তাহলে এর আইনগত অবস্থাটা কি দাঁড়াবে অত পরিষ্কার নয়। ১৭৯৯ সালে পাস করা লোগান আইনে নাগরিকদের সরকারের বৈদেশিক নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডোনাল্ড জুনিয়রের কার্যকলাপ তার মধ্যে পড়ে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। সংবিধানের যে অংশটা রাষ্টদ্রোহিতার সঙ্গে সম্পর্কিত সেখানে যুদ্ধের সময় শত্রুকে সহায়তা করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অন্তর্গত করা হয়েছে। অর্থাৎ সেই অংশটিও এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। এরপর আসে ১৯৭১ সালের ফেডারেল নির্বাচনী প্রচার আইন। সেখানে বিদেশীদের দান সাহায্য, চাঁদা ও অর্থ ব্যয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক ফাইল দিয়ে সহায়তা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। অর্থাৎ আইনগত মামলা হলে এর পরিণতি কি হতে পারে সে ব্যাপারে স্বচ্ছ কোন ধারণা কোন পক্ষেরই নেই। তবে এ ঘটনার রাজনৈতিক পরিণতি যে ট্রাম্প ও তার পুত্রের জন্য মোটেই সুখকর হবে না। সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×