ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষাধিক সৈন্য পাঠানো হচ্ছে

ন্যাটো সীমান্তে বিশাল রুশ সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২ আগস্ট ২০১৭

ন্যাটো সীমান্তে বিশাল রুশ সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি

গ্রীষ্মের শেষে ন্যাটো অঞ্চলের পূর্বে সীমান্তে এক লাখেরও বেশি সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভøাদিমির পুতিন দায়িত্ব নেয়ার পর এটা মস্কোর সামরিক শক্তি দেখানোর অন্যতম বড় পদক্ষেপ। ভীতি প্রদর্শনের এ মহড়া ঠা-া যুদ্ধকালীন উত্তেজনা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস। বাল্টিক সাগর, বেলারুশের পশ্চিম সীমান্ত, পশ্চিম রাশিয়া ও কালিনিনগ্রাদে রুশ ছিটমহলে সৈন্য সমাবেশ ঘটাবে রাশিয়া। সোভিয়েত সামরিক ইউনিটের বিভিন্ন পর্যায়ের ফার্স্ট গার্ড ট্যাংক বাহিনী ও সাজোয়া বাহিনী পুর্নগঠনের পর তাদের সক্ষমতা প্রদর্শিত হবে এবারের মহড়ায়। সামান্য নির্দেশেই কতটা ভয়ঙ্কর হামলার সক্ষমতা রাখে তা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথমবারের মতো উপস্থাপন করবে দেশটির সামরিক বাহিনী। বেশ কয়েক মাস আগে সামরিক মহড়ার পরিকল্পনা করেছিল রাশিয়া। কিন্তু কংগ্রেসে গত সপ্তাহে মহড়ার অনুমতি দিয়ে প্রস্তাব পাস করায় দেরি করতে হয়েছে। কাজেই এটা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক অর্থনৈতিক বহিষ্কারের পাল্টা জবাব হিসেবে ভাবা উচিত হবে না। কারণ মস্কোয় নিয়োজিত কয়েকশ’ কূটনীতিককে বরখাস্তের মাধ্যমে রাশিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের জবাব দিয়েছে। রুশ সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও ধরে রাখার বড় উদ্যোগের অংশ হচ্ছে এবারের মহড়া। ক্রমবর্ধমান আত্মপ্রত্যয়ী রাশিয়া তার অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। মস্কো ২০১৬ সালের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন করেছে, ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া কেড়ে নিয়েছে। এছাড়া পশ্চিম ইউক্রেনেও হস্তক্ষেপ করেছে, সামরিক মহড়ার মাধ্যমে বাল্টিক রাষ্ট্রত্রয়কে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। মাঝে ন্যাটোর বিমান কিংবা জাহাজের পাশ ঘেঁষে চলাচল করে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়াকে একঘরে করে ফেললেও পুতিনের সামরিক উচ্চাভিলাষ কমছে না। বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদী সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, হতাশার বিষয় হলো, মধ্য ইউরোপীয় দেশ বেলারুশে সৈন্য বাড়াতে রাশিয়া তার এ মহড়াকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কারণ ন্যাটোর মিত্র পোল্যান্ড, লিথুনিয়া ও লাটভিয়ার জন্য ওই সীমান্তটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল অপারেশনস কমান্ডের প্রধান জেনারেল টনি থমাস বলেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, তারা জায়গাটি ছাড়তে যাচ্ছে না। এটা কোন মানবিক বৈকল্যও না। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সামরিক কর্মকর্তা পিটার বি জোক বলেন, প্রথমে ও সবার আগে তাদের কাছে আমাদের বার্তা হলো, আমরা আপনাদের পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা শক্তিশালী, আমরা বহু কিছু শিখেছি। আমাদের রাশিয়ার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া যুদ্ধের ধারে কাছেও নেই। কিন্তু রুশ সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধিতে অনিচ্ছাকৃত সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। বাল্টিক অঞ্চলে সেনা সমাবেশে শীতল যুদ্ধের স্মৃতি নতুন করে জেগে উঠেছে। যেটা ১৯৯৯ সালে একবার সামনে এসেছিল, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে ফের দেখা গেছে। ইতোমধ্যে চার হাজার ট্যাংকের বোঝা বহনের জন্য রাশিয়া যথেষ্ট রেল গাড়ির চাহিদা নির্মাণ করছে। যাতে করে বেলারুশে ভারী যন্ত্র আনা নেয়া করা যায়। রাশিয়ার ইতোমধ্যে এক হাজার বিমান প্রতিরক্ষা সদস্য রয়েছে। বেলারুশে দেশটির সামরিক যোগাযোগ স্টেশন রয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষণস্থলও জরিপ করে দেখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে পূর্ব সতর্কতা গ্রহণ করেছে। বাল্টিক দেশগুলোতে অন্তত ছয় শ’ ছত্রীসেনা পাঠিয়েছে। এসব সেনারা রুশ মহড়াকালীন সময়ে তিন বাল্টিক দেশে অবস্থান করবে এবং পোল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধসেনারা পর্যায়ক্রমে সেখানে অবস্থান করতে থাকবে। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্রধান ফ্রেডরিক বি হজ বলেন, আমরাও প্রস্তুত, আমরা যে কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে তৈরি আছি। কিন্তু খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে, সে জন্য আমরা অপেক্ষায় আছি, বিষয়টা এমনও না।
×